মঙ্গলবার, ১০ জুলাই, ২০১৮

ঘোর। মাদকের গল্প।

_____________________ঘোর______________________
(একটি বাস্তব গল্প ৯/৭/১৮)

দুপুরের পরে ভাতঘুমে ছিলাম।৬ তলা ভবনের নিচ তলায় থাকি অামরা। জানালা খোলা রাখি দখিনা বাতাস পেতে। বাতাসে অারামসে ঘুম এসে যায়।নতুন বাসায় বিদ্যুৎ না থাকলেও ঘরমের কারনে ঘুমের সমস্যা হয় না। দক্ষিনে বিশাল মাঠ অার অাবারিত বাতাস। এটা একটা বাড়তি সুবিধা। অার একটা অসুবিধাও অাছে সদা চোর মহাশয়ের ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়।কখন যে জানালা ফাঁকে তার হাত সর্বনাশ করে দেয় মোবাইল সহ মূল্যবান জিনিষপত্র।

চারদিকে অনেকের চেঁচামিচিতে ঘুম ভেঙে গেল অাজ। অনেকটা তাজা ঘুম। চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বাহিরে চোখ রাখলাম। দেখলাম অনেক মানুষের ঝটলা। কাকে যেন ঘিরে ধরেছে সবাই কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে বুঝতে পারলাম চোর ধরেছে। কিসের ঘুম অার কিসের কি?দিলাম বাহিরে দৌড়। কানে বাজতেছে একটা কথা স্যারের কি চুরি করেছে, সবাই বলাবলি করছে স্যারকে ডাকেন। প্রথমে মোবাইল খুজলাম। না। মোবাইল অাছে!

একটা সুদর্শন যুবককে ঘিরে অনেকের ঝটলা। লম্বায় প্রায় ৬ ফুট হবে। ফর্সা মুখ।হাতে একটা ব্র্যাসলেট পড়া। একহাতে মোঝা লাগানো শীত প্রধান দেশের দাস্তানার মতো। পায়ে ক্যাডস। ইন করা শার্ট।অনেকদিন না মাজা  দাতগুলো ব্রাজিলের পতাকার হলুদ অংশের মতো লাগছে। হাতে একটা পুটলি। পুটলিটা ইতোমধ্যে ঘিরে ধরা জনতা খুলে পেলেছে। তাতে দুটো ওড়না অার মহিলাদের একটা অন্তর্বাস।চোর চোর চোর বলে ইতোমধ্যে অনেকে কিল, ঘুষি , থাপ্পর মেরে কাত করে ফেলেছে অানুমানিক ৩০/৩৫ বছরের যুবকটাকে। অামি নির্বাক হয়ে দেখতেছি। হঠাৎ কয়েকজন যুবক লাঠিসোটা দিয়ে মার অারাম্ভ করে দিলো অার বলতে লাগলো শালা হিরোন্সি! চেক কর শালাকে! কেন এখানে এলো? অার গালিতো চলছেই। সে এবার বলে উঠলো অামি হাসপাতালে যাচ্ছি। অামার বোনকে দেখতে। অারে অাপনেরা চিনেন না? হাজেরা অারকি অামার বোন! অাবোল তাবোল!

এ দুএকটি কথা ছাড়া ছেলেটির কেন মুখে কোন শব্দ নাই অার। অাহ! উহ!ও করছেনা। মনটা অামার ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো। প্রতিটা অাঘাতে কেমন যেন অামার মনে মোচড় দিতে লাগলো। উৎসুক জনতার ভীড় বাড়তে লাগলো। দোতলা তিন তলা থেকে উৎসুক নারীকুলের হাসির শব্দ শুনতে পেলাম। মুরব্বী কয়েকজন বললো অার মাইরেন না। ছেড়ে দেন। ইতোমধ্যে তল্লাশী শেষ, তেমন কোন কিছুই পাওয়া গেলনা। তবে খোজাখুজির এক পর্যায়ে  যা পাওয়া গেল তাতে অামি তাজ্জব। এক পুটলি গাজা, কয়েকটি গাজা ভরা সিগারেট। বোঝাগেল সে মাদকাসক্ত। একটা ছেলে হাতে ইট নিয়ে মেরেছে যে তাতে মাথা থেকে রক্ত বেরুচ্ছে। কিন্তু যুবকটি কান্না করছে না। তখনো তার চোখে মুখে নেশার ঘোর। সম্ভবত নেশার ঘোরে ভুলে অামার জানালার ধারে এসে পড়েছিল। হয়তো অামার মোবাইল বা এটা ওটা নিয়ে নিতো। মাদক কিনতে। ওটাই যে তার সব। অাহ মাদকরে!

খানিক বাদে ছেড়ে দেয়া হল তাকে।অাজ তার ভাগ্য ভালো। কারন এদেশে চোর ধরলে কি অবস্থা হয় সবারই তা জানা।  খোড়াতে খোড়াতে হাটছে অার কান্না করছে এবার। মনে হয় নেশার ঘোর কেটেছে এবার। কিছুদুর গিয়ে একটা ইটের উপর বসে পড়লো।

অাহহারে! কোন মায়ের সন্তান! কারো অাদরের ভাই! বা কারো স্বামী!  বা কারো পিতা! মাদক সবই কেড়ে নেয়।কোন হুশ থাকে না। এ পথে যাওয়ার রাস্তা  অাছে কিন্তু বের হবার রাস্তা নাই। অাসুন পাশের ভাই বন্ধুকে ভালোবেসে মাদক থেকে ফিরিয়ে রাখি!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন