মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই, ২০১৮

রেল স্টেশন : ফারজানা হোসেন ফারজু

রেইল ষ্টেশন

ষ্টেশন এর প্রধান দরজা দিয়ে ঢুকতেই দেখি দুপাশে রেইল কর্মকর্তা কর্মচারী দের কক্ষ। দু পা এগিয়ে গেলাম। সারী সারী ব্যাঞ্চ বসানো। ব্যাঞ্চে বসে কেউ অপেক্ষা করছে ট্রেন আসার। চোখে অজানা সুন্দর স্বপ্ন।কেউ আপন জনের কাছে যাবে। কেউবা আপন জনকে ছেড়ে যাবে। তাদের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে পুলিশ বাহিনী। কাধে বন্ধুক, পায়ে ব্যুট জুতো, গায়ে খাকি পোষাক,পোষাকে বুকের উপর দিয়ে তাদের নাম খোদাই করা ব্যাচ লাগানো। প্রশাসনিক ব্যাক্তি বলে কথা। তারা তো আবার জনগণের বন্ধুও বটে।তারা পায়চারী করছে ষ্টেশন এর দুপাশে। কয়েক গজ পর পর বাহারি খাবারের দোকান। দোকানিরা মোটামুটি ভালই বেচাকেনা করছে। রেইল লাইনের দুপাশে কিছু মানুষ শুয়ে বসে রয়েছে। পুরাতন বগি গুলাও পড়ে রয়েছে রেইল লাইনের পাশে পরিচর্যার অভাবে। সন্ধ্যার পরে নারীরাও শুয়ে পড়ে রেইল লাইনের পাশে। আমার হঠাৎ করে চোখ পড়ল একটা ছোটখাটো ঝগড়ার দিকে। ঝগড়া হচ্ছিল একজন৩৫- ৪০ বয়স এমন মহিলা এবং ১৬-২০ বছর বয়স এক ছেলের মধ্যে। মহিলার পাশে একটি ১৩-১৪ বছরের মেয়ে।দাঁড়িয়ে ঝগড়ার কথা গুলা শুনছিলাম।কথা গুলা ছিল এমন -"২০ টাকা দিব
                          -না যত বলছি তত
                     -কম হলে থাক
                      -আচ্ছা ৫০ ই দিব।"
কথা শুনে ভাবলাম মনে হয় কিছু কেনা বেচা করছে। ভাল করে লক্ষ করে দেখি দুজনের হাতেই কিছু নেই। আমি চিন্তায় পড়ে যায় কি বেচা কেনা হচ্ছে? পরক্ষনে দেখি বয়ষ্ক মহিলাটি শিশুপ্রায় মেয়েটিকে বলছে- এই যা। মেয়েটি মুচকি হেসে চলে গেল পুরাতন বগির ভিতরে। পেছন পেছন ছেলেটিও। আমি আবার হাটতে থাকি। দেখি কিছু মানুষ রান্না করা খাবার বিক্রি করছে। কেউ আবার পুরাতন কাপড় চোপড় ও বিক্রি করছে। দূরে ট্রেনের আলো দেখা যাচ্ছে। উচ্চ আওয়াজ দিয়ে আমার সামনে হাজীর হলো একটি ট্রেন। কিছুক্ষন থামলো। অনেক লোক নামলো কঠিন বাস্তবতার স্বীকার হয়ে।আবার অনেকেই উঠছে অজানা সুন্দর স্বপ্নের উদ্দেশ্যে। আমি কিছুদূর পর্যন্ত হেটে আবার ফিরে আসি। ও একটা কথা বলাই হয়নি। আমি একা ছিলাম না সেখানে ছিলাম আমরা।আসার পথে দেখি বগি থেকে এলোমেলো অবস্থায় নামছে সেই ছেলেটি। খানেক পর মেয়েটিও নামছে। আমি বিষ্মিত হলাম। ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম সেখানে। আমার জীবনসঙ্গী আমার কাধে হাত রেখে বলল- কি হলো দাঁড়িয়ে রইলে যে? ওর ডাকে আমার ঘোর কাটল। আমি ওর দিকে অবুজ দৃষ্টি তে তাকিয়ে বললাম-এ থেকে কি পরিত্রাণ নাই? আমরা কি কিছু করতে পারিনা? ও বলল- আমাদের একার পক্ষেই কি সম্ভব? আমাদের কথোপকথন এর মাঝখানে একজন পুলিশ বলল -আপনারা কি যাত্রি? আমরা বললাম না। পুলিশ বলল তাহলে বেশিক্ষন হাটবেন না। যাত্রী ছাড়া ঢুকা নিষেধ।  আমি পুলিশ  লোকটার কথা শুনে উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন