সোমবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৫
রবিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৫
হক ও বাতিলের সংঘর্ষ
হক ও বাতিলের সংঘর্ষ অনিবার্য কেন?
দুনিয়ায় যত নবী ও রাসূল এসেছেন তাঁদের সবাই দ্বীনে হক কায়েম করার দায়িত্বই পালন করে গেছেন। যে দেশে দ্বীনে হক কায়েম ছিল না সেখানে অবশ্যই বাতিল কায়েম ছিল। হক কায়েমের চেষ্টা করলে বাতিলের পক্ষ থেকে বাধা আসাই স্বাভাবিক। কারণ হক ও বাতিল একই সাথে চালু থাকতে পারে না। আলো ও অন্ধকারের সহ অবস্থান বাধা দিয়েছ্ েএকমাত্র আদম (আ) এবং সূলায়মান (আ) বাধার সম্মুখীন হননি। কারণ আদম (আ) এর সময় কোন মানুষই ছিল না, বাধা দেবে কে? আর সুলায়মান (আ) তাঁর পিতা দাউদ (আ) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের পরিচালক ছিলেন বলে তাঁকে বাধা দেয়ার মতো কোন বাতির শক্তি ছিলই না।
হকের আওতায় যে কালেমায়ে তাইয়েবার মারফতে পয়লা ঘোষণা করা হয় তার মধ্যে আল্লাহকে ইলাহ স্বীকার করার পূর্বে লা-ইলাহা বলে সমস্ত বাতিলকে অস্বীকার করা হয়। সমাজে ইলাহ বা মনিব বা হুকুমকর্তার দাবীদার বাতিল শক্তি কায়েম আছে বলেই পয়লা বাতিলকে অস্বীকার করা দরকার হয়। বাতিলকে মন-মগজে বলে কায়েম রেখে হককে স্বীকার করা অর্থহীন। তাই পয়লা লা-ইলাহা বলে সমস্ত বাতিল ইলাহকে অস্বীকার করে ইল্লাল্লাহ বলে একমাত্র আল্লাহকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
****************************************
অর্থ: “যে তাগুতকে অস্বীকার করলো এবং আল্লার প্রতি ঈমান আনল সে-ই মযবুত রজ্জু ধারণ করেছে। ”-(সূরা বাকরা: ২৫৬, আয়াতুল কুরসী)
তাগুত অর্থ হলো আল্লার বিদ্রাহী শক্তি। কাফের আল্লাহকে অস্বীকার করে মাত্র। কিন্তু তাগুত মানুষকে আল্লার দাসত্ব করতে বাধা দেয় এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার আনুগত্য করতে বাধ্য করে। ফিরাউন এমনি ধরনের তাগুত ছিল বলেই মূসা (আ) কে ফিরাউনের নিকট পাঠাবার সময় আল্লাহ বললেন—
****************************************
“ফিরাউনের কাছে যাও, নিশ্চয়ই সে বিদ্রোহ করেছে। ”-(সূরা আন নাযিয়াত: ১৭)
ইসলাম বিরোধী শক্তি এক কথায় তাগুত। দ্বীনে বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বলা হয়যে, লা-ইলাহা বা কোন হুকুমকর্তাকে মানি না। অন্য সব কর্তাকে অস্বীকার করার পরই ইল্লাল্লাহ বলে আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ হিসেবে স্বীকার করা যায়। সুতারাং ইসলামের প্রথম কথাই বাতিলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। এ কারণেই কালেমার দাওয়াত নিয়ে যে নবীই এসছেন তাগুত বা বাতিল তাকে স্বাভাবিকভাবেই দুশমন মনে করে নিয়েছে।
আল্লাহ পাক যাদেরকে নবী ও রাসূল হিসেবে বাছাই করেছেন তারা সবাই নিজ নিজ দেশে সৎ, বিশ্বাসী, সত্যবাদী ও অন্যান্য যাবতীয় মানবিক গুণের কারণে জনপ্রিয় ছিলেন। দ্বীনে হকের দাওয়াত দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত শেষ নবীও আল-আমীন ও আস-সাদেক বলে প্রশংসিত ছিলেন। কিন্তু ********************************** “আল্লার দাসত্ব কর ও তাগুতকে ত্যাগ কর। ”-(সূরা আন নাহল: ৩৬) বলে দাওয়াত দেয়ার পর নবীর সাথে তাগুতের সংঘর্ষ না হয়েই পারে না।
নবীর দাওয়াত শুনেই নমরূদ, ফিরাউন ও আবু জেহেলরা বুঝতে পারল যে, তারা দেশকে যে আইনে শাসন করছে ও সমাজকে যে নীতিতে চালাচ্ছে, তা বদলিয়ে নবী নতুন কোন ব্যবস্থা চালু করতে চান। ফিরাউন স্পষ্ট বললো: **************************** “আমি আশংকা করি যে, (মূসা) তোমাদের দ্বীনকে বদলিয়ে দেবে। ”-(সূরা মুমিন:২৬)
যারা দেশ শাসন করে তারা আইন-কানুন এমনভাবেই বানায় যাতে শাসক শ্রেণীর স্বর্থ ঠিক থাকে। জনগণকে শোষণ করে শাষক গোষ্ঠীর প্রাধান্য বজায় রাখার উপযোগী আইন ও অর্থব্যবস্থাই চালূ রাখা হয়। মানব রচিত আইনের বৈশিষ্ট্যই এটা, সুতারাং প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা বহাল রাখাই শাসকদের স্বার্থ। এজন্যেই এদেরকে কায়েমী ম্বার্থ বলা হয়। অর্থাৎ প্রচলিত ব্যবস্থা বহাল থাকলে যাদের স্বার্থ কায়েম থাকে তারাই কায়েমী স্বার্থ(Vested Interest)।
যখনই কোন নবী আল্লার দামত্বের দাওয়াত দিয়েছেন তখনই এ কায়েমী স্বার্থ এটাকে তাদের স্বার্থের বিরোধী বলে বুঝতে পেরেছে। সে কারণেই তারা বাধা দেয়া জরুরী মনে করেছে। শুধু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তিই নয়, সামাজিক ও ধর্মীয় স্বার্থও নবীদেরকে সহ্য করেনি। ইব্রাহীম (আ)-এ পিতা আযর ধমীয় নেতা ছিল। নমরূদের দরবারে তার রাজ-পুরোহিতের মর্যাদা ছিল। ধর্মের ব্যবসা নিয়ে নমরূদের অদীনে সুখেই ছিল। ইব্রাহীম (আ)-এর দাওয়াতে আযরের ধর্মীয় কায়েমী স্বার্থে আঘাত লাগল। শেষ নবী আশা করেছিলেন যে, ইয়াহুদী ও নাসারাদের ওলামা ও পীরেরা (কুরআনের ভাষায় আহবার ও রুহবান) হয়তো তাঁর দাওয়াত সহজেই কবুল করবে। কারণ আল্লাহ, আখেরাত, নবী, ওহী ইত্যাদির সাথে তারা আগেই পরিচিত। কিন্তু দেখা গেল যে, রাসূল (সঃ) এর সাথে যখন মক্কার রাজনৈতিক ও অথনৈতিক ও কায়েমী স্বার্থের সংঘর্ষ বাঁধল তখন ঐ আহবার ও রুহবারদের ধর্মীয় স্বার্থও তাদেরকে আবু জেহেলদের সাথেই সহযোগিতা করতে বাধ্য করল। এভাবেই হক ও বাতিলের সংঘর্ষ অবশ্যই অনিবার্য এবং হকের বিরুদ্ধে সকল প্রকার কায়েমী স্বার্থ একজোট হয়েই বিরোধিতা করে থাকে।
ে।
কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন যে, মুসলিম প্রধান দেশে মুসলিম শাসকদের সাথে ইসলামী আন্দোলনের এ ধরনের বিরোধ হবার কারণ কী? মুসলিম নামধারী হলেই সত্যিকার ইসলামপন্থী হয়ে যায় না। ইয়াযীদ মুসলিম শাসকই ছিল। কিন্তু ইসলামী আদর্শের ধারক ইমাম হুসাইন (রাঃ) কে ইয়াযীদ সহ্য করতে পারেনি। এ দেশে মুসলিম নামধারী নাস্তিক, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, কমিউনিষ্ট ও সোসালিষ্ট বহু নেতা ও দল আছে যারা ইসলামী আন্দোলনের চরম দুশমন।
আসল ব্যাপার হলো কায়েমী স্বার্থের সুবিধা ভোগ করছে তারা যখন বুঝতে পারে যে, ইসলামী আন্দোলন বিজয়ী হলে যে ধরনের আইন-কানুন ও সমাজ ব্যবস্থা চালু হবে তাতে তাদের বর্তমান প্রতিষ্ঠিত স্বার্থহবে তখনই তারা এ আন্দোলনের শক্র হয়ে যায়।
যে বাতিল শক্তি দ্বীনে হক কায়েমের পথে বাধা সৃষ্টি করে তা দু ধরনের হয়ে থাকে। প্রধান বাতিল শক্তি হলো সরকারী ক্ষমতাসীন শক্তি। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যাদের হাতে থাকে তারা ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলনকে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। অনৈসলামী সমাজে ক্ষমতাসীন ব্যক্তি বা দলের নেতৃত্বে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা যে চালু হতে পারে না সে কথা তারা ভালভাবেই জানে। ইসলামী রাষ্ট্রে তাদের অস্তিত্বের স্বার্থেই তারা ইসলামী আন্দোলনের বিরোধী।
সমাজে ইসলামী আন্দোলনের বিরোধী আরও এক ধরনের শক্তি রয়েছে যারা সরাসরি বাতিল শক্তির মাধ্যে গণ্য হলেও হক ও বাতিলের সংঘর্ষে তারা হকের পক্ষে সক্রিয় হন না। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তারা বাতিলের সাথেই সহযোগিতা করেন। বাতিলের বিরুদ্ধে ময়দানে যারা সক্রিয় নয় তারা ঐ সংঘর্ষে শেষ পর্যন্তনিরপেক্ষ থাকতে পারেন না। এমনকি দ্বীনের খাদেম হয়েও এ জাতীয় ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হন। ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালন করার হিম্মত যারা করেন না তারা এক পর্যায়ে বাতিলেরই সহায়ক প্রমাণিত হন
শনিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৫
গল্পে গল্পে শিক্ষা
গ্রাম্য বালকের জীবনের গল্প
একটি গ্রাম্য বালকের জীবনের গল্প : Don’t be depressed , If you want you can touch your dream .
আজ এক বালকের গল্প শোনাবো , শোনানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে তোমরা যারা বাচ্চা – কাচ্চা আছো তাদের একটা উদাহরন দেখানো যে তুমিও চাইলে সফল মানুষদের একজন হতে পারো । বিশেষ করে যারা ভাবে যে আমারে দিয়ে কিচ্ছু হবে না , আমি অন্যদের চেয়ে অনেক নিচে আছে তাদের জন্য এই গল্প ।
আচ্ছা শুরু করা যাক , বরিশাল শহর থেকে দূরে অজপাড়ায় এই বালকের বাস ।
যেসব এলাকায় নদী আছে সেখানে চর নামে একটা এলাকা থাকে অর্থাত্ নদী ভাঙনের পর একপাশে চর জেগে ওঠে এবং সে মানব বসতি গড়ে ওঠে ।
এরকম একটি চরে এই বালক তাহার মাতার সহিত বাস করে । বালকদের বাড়ির পাশ দিয়ে ছোট খালের মত একটা আছে , গ্রাম্য ভাষায় ঐটাকে ব্যাড় বলে ।
ঐ ব্যাড়ে বর্ষায় ছয়মাস পানি থাকে ফলে চলাচল করতে হয় নৌকায় বা কলা গাছের ভেলায় ।
যাই হোক সেই চরে একটা “সাইক্লোন সেন্টার” ছিলো সেটা প্রাইমারী স্কুল হিসাবে ব্যাবহৃত হয় । সেখান থেকে বালক পঞ্চম শ্রেনীতে পাস করে ।
বালকের মাতা বালককে অন্যদের সহিত কখনো খুব একটা বেশী মিশার সুযোগ দেয় নাই , এর কারন হয়ত তিনি সন্তানকে গ্রাম্য অন্যান্য বালকদের থেকে ভিন্নরূপে গড়ে তুলতে চাইছিলেন এবং বালক সেভাবেই গড়ে উঠছে । বালক মানুষের সাথে খুব একটা মিশে না ।
এবার বালক হাইস্কুলে ভর্তি হবে । তো চর থেকে হেটে গেলে দুই ঘন্টা লাগে এমন দূরত্বে একটা হাইস্কুল আছে এবং সেখানেই বালককে ভর্তি করানো হলো ।
ক্লাস শুরু হওয়ার দুই থেকে আড়াই ঘন্টা আগে বালককে বাড়িতে থেকে স্কুলে রওয়ানা দিতে হতো ।
যাওয়ার পথে একটা নদী পরে সেটা খেয়া দিতে পার হতে হয় , একবার এপাড় থেকে ওপার গিয়ে আবার এপাড় আসতে খেয়ার মোটামুটি দেড় ঘন্টা লাগে । এজন্য হাতে বেশী সময় নিয়ে বাড়ি থেকে বালক স্কুলের উদ্দেশ্য রওয়ানা হতো ।
বর্ষার দিনে যেহেতু বাড়ীর পাশের ব্যাড়ে গলা সমান বা তার বেশী পানি থাকতো তাই এসময় বালক স্কুলে যেতো গলা গাছের ভেলায় পাড় হয়ে । কিন্তু একটা কলা গাছের ভেলা মাসখানেকের বেশী টিকে না ফলে দেখা যেতো বর্ষার অর্ধেক না যেতেই বাড়ির সব কলা গাছ শেষ হয়ে গেছে
। তখন বালক কিভাবে স্কুলে যেতো ?
তখন বালক লুঙি পরে গলা সমান বা তার কম পানিতে ব্যাড় পেরিয়ে ওপার যেতো এবং ওপার গিয়ে প্যান্ট জামা প্যান্ট পরে স্কুলে যেতো ।
এভাবে চলতে থাকলো , বালক এইটে বৃত্তি পেয়েছে ।
নাইনে ওঠার পর বালক সাইন্স গ্রুপ নেয় । বালকদের স্কুলের মোট চার জন তখন শুধু সাইন্স নিয়েছিলো । ঐ স্কুলে সাইন্সের টিচার বলতে একজন ডিগ্রী পাশ স্যার ছিলো যিন পার্ট টাইম চাকুরী করতে ছিলেন স্কুলে ।
তিনিই একমাত্র উচ্চতর গনিত পড়াতে পারতেন । তো বালক টেনে ওঠার পর স্যারের চাকুরী চলে যায় এবং বালক মহাবিপদে পরে কিভাবে এখন কার কাছে উচ্চতর গনিত সহ অন্যান্য সাবজেক্ট পড়বে !
তো বালকের বাসা থেকে স্কুল যত দূর তার দ্বিগুন দূরে স্যারের বাড়ী ছিলো সেখানে যেতেও নদী পরতো । বালকের আর স্কুলে যাওয়া হলো না শুধু স্যারের বাসায় গিয়েই পড়তে লাগলো ।
যথারীতি এস.এস.সি পরীক্ষা হলো এবং কিছুদিন পর রেজাল্ট দিলো , চার জনের সাইন্সের ছাত্র – ছাত্রীর মধ্যে বালকই একমাত্র এ প্লাস পেয়েছে । তাও সবগুলাতে না , রসায়নে পায় নাই ।
এবার বালকের মাতা তাকে নিয়ে ঢাকায় তার পিতার কাছে চলে যায় । পিতা সামান্য বেতনে মসজিদে চাকরী করে , তাই বালককে সরকারী কলেজেই ভর্তি হতে হবে ।
বালক শেষ পর্যন্ত সদরঘাটের কাছে লক্ষীবাজার অবস্থিত কবি নজরুল সরকারী কলেজে ভর্তি হয় ।
বালকের ব্যাচমেট , কোচিংমেট ও কোচিং শিক্ষক অনেকেই বলে এইটা কোন কলেজ হইলো ঐটায় ভর্তি হইছোস ক্যান ?
বালক এড়িয়ে যায় , ভাবে পড়ালেখা নিজের মধ্যে , কলেজ কোন ফ্যাক্টর না ।
অতঃপর এইট.এস.সি পরীক্ষা হয় এবং যথাসময়ে ফলাফল প্রকাশিত হয় । কলেজের তিনশো ছাত্র – ছাত্রীর মধ্যে বালক ও আরো একজন , মোট দুইজন A প্লাস পায় ।
তবে এবার বালকের ইংরেজিতে এ প্লাস মিস হয় ।
বালকের মাতার ইচ্ছা ছিলো তাহার পুত্রকে ডাক্তার বানাবে , বালকেরও তাই ইচ্ছা ছিলো ।
কিন্তু এরি মধ্যে একবার ঘোষনা করা হইছিলো রেজাল্ট দেখে মেডিকেলে ভর্তি করা হবে , তখনই বালকের মেডিকেলে ভর্তির ইচ্ছা শেষ হয়ে যায় , কারন গোল্ডেন এ প্লাস ছাড়া ভর্তি হওয়া যাবে না ।
এরপর বালক বুয়েট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন দেখে ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং এ ভর্তি হয় । কোচিং চলাকালীন সময়েই রেজাল্ট বের হয় & তখনই দেখা যায় বালকের ইংলিশে এ প্লাস নাই।
তখন বালক কিছুটা হতাশ হয় কারন ইংলিশে এ প্লাস না থাকলে বুয়েটে ভর্তি অনিশ্চিত ।
যাইহোক শেষ পর্যন্ত বালক বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে , ঢাকার মধ্যে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শুধু ভর্তি পরীক্ষা দেয় । যেগুলায় দেয় সবগুলায় চান্স পায় ।
চান্স পাওয়ার পর বালক জানতে পারে তার অবস্থান থেকে সিভিল পড়া সম্ভব এবং সেটাই বেছ
গল্পে গল্পে শিক্ষা
গ্রাম্য বালকের জীবনের গল্প
একটি গ্রাম্য বালকের জীবনের গল্প : Don’t be depressed , If you want you can touch your dream .
আজ এক বালকের গল্প শোনাবো , শোনানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে তোমরা যারা বাচ্চা – কাচ্চা আছো তাদের একটা উদাহরন দেখানো যে তুমিও চাইলে সফল মানুষদের একজন হতে পারো । বিশেষ করে যারা ভাবে যে আমারে দিয়ে কিচ্ছু হবে না , আমি অন্যদের চেয়ে অনেক নিচে আছে তাদের জন্য এই গল্প ।
আচ্ছা শুরু করা যাক , বরিশাল শহর থেকে দূরে অজপাড়ায় এই বালকের বাস ।
যেসব এলাকায় নদী আছে সেখানে চর নামে একটা এলাকা থাকে অর্থাত্ নদী ভাঙনের পর একপাশে চর জেগে ওঠে এবং সে মানব বসতি গড়ে ওঠে ।
এরকম একটি চরে এই বালক তাহার মাতার সহিত বাস করে । বালকদের বাড়ির পাশ দিয়ে ছোট খালের মত একটা আছে , গ্রাম্য ভাষায় ঐটাকে ব্যাড় বলে ।
ঐ ব্যাড়ে বর্ষায় ছয়মাস পানি থাকে ফলে চলাচল করতে হয় নৌকায় বা কলা গাছের ভেলায় ।
যাই হোক সেই চরে একটা “সাইক্লোন সেন্টার” ছিলো সেটা প্রাইমারী স্কুল হিসাবে ব্যাবহৃত হয় । সেখান থেকে বালক পঞ্চম শ্রেনীতে পাস করে ।
বালকের মাতা বালককে অন্যদের সহিত কখনো খুব একটা বেশী মিশার সুযোগ দেয় নাই , এর কারন হয়ত তিনি সন্তানকে গ্রাম্য অন্যান্য বালকদের থেকে ভিন্নরূপে গড়ে তুলতে চাইছিলেন এবং বালক সেভাবেই গড়ে উঠছে । বালক মানুষের সাথে খুব একটা মিশে না ।
এবার বালক হাইস্কুলে ভর্তি হবে । তো চর থেকে হেটে গেলে দুই ঘন্টা লাগে এমন দূরত্বে একটা হাইস্কুল আছে এবং সেখানেই বালককে ভর্তি করানো হলো ।
ক্লাস শুরু হওয়ার দুই থেকে আড়াই ঘন্টা আগে বালককে বাড়িতে থেকে স্কুলে রওয়ানা দিতে হতো ।
যাওয়ার পথে একটা নদী পরে সেটা খেয়া দিতে পার হতে হয় , একবার এপাড় থেকে ওপার গিয়ে আবার এপাড় আসতে খেয়ার মোটামুটি দেড় ঘন্টা লাগে । এজন্য হাতে বেশী সময় নিয়ে বাড়ি থেকে বালক স্কুলের উদ্দেশ্য রওয়ানা হতো ।
বর্ষার দিনে যেহেতু বাড়ীর পাশের ব্যাড়ে গলা সমান বা তার বেশী পানি থাকতো তাই এসময় বালক স্কুলে যেতো গলা গাছের ভেলায় পাড় হয়ে । কিন্তু একটা কলা গাছের ভেলা মাসখানেকের বেশী টিকে না ফলে দেখা যেতো বর্ষার অর্ধেক না যেতেই বাড়ির সব কলা গাছ শেষ হয়ে গেছে
। তখন বালক কিভাবে স্কুলে যেতো ?
তখন বালক লুঙি পরে গলা সমান বা তার কম পানিতে ব্যাড় পেরিয়ে ওপার যেতো এবং ওপার গিয়ে প্যান্ট জামা প্যান্ট পরে স্কুলে যেতো ।
এভাবে চলতে থাকলো , বালক এইটে বৃত্তি পেয়েছে ।
নাইনে ওঠার পর বালক সাইন্স গ্রুপ নেয় । বালকদের স্কুলের মোট চার জন তখন শুধু সাইন্স নিয়েছিলো । ঐ স্কুলে সাইন্সের টিচার বলতে একজন ডিগ্রী পাশ স্যার ছিলো যিন পার্ট টাইম চাকুরী করতে ছিলেন স্কুলে ।
তিনিই একমাত্র উচ্চতর গনিত পড়াতে পারতেন । তো বালক টেনে ওঠার পর স্যারের চাকুরী চলে যায় এবং বালক মহাবিপদে পরে কিভাবে এখন কার কাছে উচ্চতর গনিত সহ অন্যান্য সাবজেক্ট পড়বে !
তো বালকের বাসা থেকে স্কুল যত দূর তার দ্বিগুন দূরে স্যারের বাড়ী ছিলো সেখানে যেতেও নদী পরতো । বালকের আর স্কুলে যাওয়া হলো না শুধু স্যারের বাসায় গিয়েই পড়তে লাগলো ।
যথারীতি এস.এস.সি পরীক্ষা হলো এবং কিছুদিন পর রেজাল্ট দিলো , চার জনের সাইন্সের ছাত্র – ছাত্রীর মধ্যে বালকই একমাত্র এ প্লাস পেয়েছে । তাও সবগুলাতে না , রসায়নে পায় নাই ।
এবার বালকের মাতা তাকে নিয়ে ঢাকায় তার পিতার কাছে চলে যায় । পিতা সামান্য বেতনে মসজিদে চাকরী করে , তাই বালককে সরকারী কলেজেই ভর্তি হতে হবে ।
বালক শেষ পর্যন্ত সদরঘাটের কাছে লক্ষীবাজার অবস্থিত কবি নজরুল সরকারী কলেজে ভর্তি হয় ।
বালকের ব্যাচমেট , কোচিংমেট ও কোচিং শিক্ষক অনেকেই বলে এইটা কোন কলেজ হইলো ঐটায় ভর্তি হইছোস ক্যান ?
বালক এড়িয়ে যায় , ভাবে পড়ালেখা নিজের মধ্যে , কলেজ কোন ফ্যাক্টর না ।
অতঃপর এইট.এস.সি পরীক্ষা হয় এবং যথাসময়ে ফলাফল প্রকাশিত হয় । কলেজের তিনশো ছাত্র – ছাত্রীর মধ্যে বালক ও আরো একজন , মোট দুইজন A প্লাস পায় ।
তবে এবার বালকের ইংরেজিতে এ প্লাস মিস হয় ।
বালকের মাতার ইচ্ছা ছিলো তাহার পুত্রকে ডাক্তার বানাবে , বালকেরও তাই ইচ্ছা ছিলো ।
কিন্তু এরি মধ্যে একবার ঘোষনা করা হইছিলো রেজাল্ট দেখে মেডিকেলে ভর্তি করা হবে , তখনই বালকের মেডিকেলে ভর্তির ইচ্ছা শেষ হয়ে যায় , কারন গোল্ডেন এ প্লাস ছাড়া ভর্তি হওয়া যাবে না ।
এরপর বালক বুয়েট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন দেখে ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং এ ভর্তি হয় । কোচিং চলাকালীন সময়েই রেজাল্ট বের হয় & তখনই দেখা যায় বালকের ইংলিশে এ প্লাস নাই।
তখন বালক কিছুটা হতাশ হয় কারন ইংলিশে এ প্লাস না থাকলে বুয়েটে ভর্তি অনিশ্চিত ।
যাইহোক শেষ পর্যন্ত বালক বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারে , ঢাকার মধ্যে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শুধু ভর্তি পরীক্ষা দেয় । যেগুলায় দেয় সবগুলায় চান্স পায় ।
চান্স পাওয়ার পর বালক জানতে পারে তার অবস্থান থেকে সিভিল পড়া সম্ভব এবং সেটাই বেছ
সাহসী মানুষের গল্প
খাপ খোলা তলোয়ার
একবারেই অন্ধকার যুগ।
পাপে আর পাপে ছেয়ে গেছে আরবের সমাজ।
মানুষের মধ্যে হানাহানি, যুদ্ধ, রক্তারক্তি লেগেই আছে।
মানুষের হেদায়েতের জন্যে আল্লাহ পাক নবীকে (স) পাঠিয়েছেন। তিনি মানুষকে আলোর পথে ডাকছেন। ডাকছেন মুক্তির পথে।
নবীর (স) ডাকে যারা সাড়া দিলেন, তাঁরা আলোর সন্ধান পেলেন। নবী (স) সাথে তাঁরাও ইসলাম প্রচার করেন।
কিন্তু গোপনে গোপনে। চুপে চুপে।
কাফেরদের অত্যাচারের ভয়ে কেউ ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ করেন না। আসলে, তখন সেই পরিবেশও ছিল না। পবিত্র কাবা ঘরে কেউ নামাজও আদায় করতে পারতেন না।
নামাজ আদায় করতেন তাঁরা গোপনে গোপনে।
কিন্তু এভাবে আর কতদিন?
সময় পাল্লে যায়।
পাল্টে যায় কালের নির্মম ইতিহাস।
সময়টাকে পাল্টে দেন হযরত ওমর। আল্লাহর অপরিসীম রহমতে। ওমর ইসলামগ্রহণ করার পরপরই মক্কার আকাশে বাতাসে নতুন হওয়া বইতে শুরু করে।
শুরু হলো ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার আর একটি নতুন অধ্যায়।
এতদিন কাফেরদরে ভয়ে কেউ ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ করতে পারেননি।
কিন্তু ওমর?
ইসলাম গ্রহণের পর তিনিই সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেন, সবাইকে জানিয়ে দিলেন ইসলাম গ্রহণের কথা।
নির্ভীক ওমর! দুঃসাহসী ওমর!
তাঁর সাহস আর বীরত্বের কথা জানে না- মক্কায় তেমন কোনো লোকই নেই। ক্ষ্যাপা বারুদের মতো তাঁর তেজ।
রেগে গেলে ওমর মুহূর্তেই যে কোনো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারেন। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বুকটান করে কেউ কথা বলার সাহস রাখে না। সবাই তাঁকে ভয় করে চলে।
ইসলাম গ্রহণের আগে ওমর সম্পর্কে এ রকম ধারণা ছিল মক্কার সকল মানুষের।
ওমরের তলোয়ারকে ভয় করে না, এমন লোক মক্কায় নেই।
সেই দুঃসাহসী ওমর ইসলাম গ্রহণ করেছেন!
ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন!
শুধু কি তাই?
তিনি সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে মক্কার পবিত্র কাবা ঘরে প্রবেশ করলেন। প্রকাশ্যে নামায আদায় করলেন।
এই প্রথম কাবাঘরে প্রকাশ্যে নামাজ আদায়ের ঘটনা ঘটলো।
কাফেররা শুনলো সবই। দেখলো সবই। দেখলো, সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে দুঃসাহসী ওমর কাবায় যাচেনছন! নামাজ আদায় কাছেন।
কাফেররা দেখলো, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করলো না। কেউ বাধা দিতে ছুটে এলো না।
কে আসবে ওমরের সামনে?
কে আসবে তাঁর খাপ খোলা তলোয়ারের সামনে? এমন হিম্মত কার আছে?
ওমর বীরদর্পে হেঁট গেলেন ইসলামের সবচেয়ে বড় দুশমন, সবচেয়ে বড় শত্রু আবু জেহেলের বাড়িতে। জোরে জিৎকার করে বললেন:
ইসলামের দুশমন- আবু জেহেল! আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। আল্লাহ ও রাসূলের (সা) প্রতি ঈমান এনেছি এবং রাসূলের (সা) কাছে প্রেরিত বিধান- আল কুরআন ও ইসলামকে সত্য বলে জেনেছি এবং মেনে নিয়েছি।
ওমরের হুংকার আবু জেহেল স্তম্ভিত হয়ে গেল। কিন্তু প্রতিবাদ করতে সাহস পেল না।
ওমর মিথ্যা ও পৌত্তলিক শক্তির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে জিহাদ ঘোষণা করলেন।
ওমরের ইসলাম গ্রহণ করার সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে গেল দ্রুত গতিতে।
এ খবর শুনে কাফেরদের বুক ভয়ে আর বেদনায়টন টন করে উঠলো। আর মুসলমানদের হৃদয়ে খুশির তুফান বইতে শুরু করলো। তাঁরা আরও সাহসী হয়ে উঠলেন।
ওমর তাঁর সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে মক্কায় প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন। কাফেরদের নাকেট ডগা দিয়ে মক্কার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে যান ওমর তাঁর সঙ্গী-সাথীরা।
তাঁরা একত্রে কাবায় নামাজ আদায় করেন।
কাবাঘরে তাওয়াফ করেন।
কেউ বাধা দিতে এলে তাঁরা তা প্রতিহত করেন।
তাঁরা প্রতিহত করেন কাফেরদের যে কোনো আক্রমণ।
অন্য মুসলমানরা গোপনে হিজরত করেন মদীনয়। আর ওমর হিজরত করেন প্রকাশ্যে।
মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার আগে ওমর প্রথমে কাবাঘর তাওয়াফ করেন। তারপর কুরাইশদের মধ্যে গিয়ে চিৎকার করে বলেন,
কেউ যদি তার মাকে পুত্রশোকে কাঁদাতে চায়, তাহলে সে যেন এ উপত্যকার অপর প্রান্তে আমার মুখোমুখি হয়।
এই দুৎসাহসী ঘোষণা দিয়ে বীরের মতো তিনি মদীনার পথে রওয়ানা হলেন।
কাফেররা দেখলো, ওমর চলে যাচ্ছে কিন্তু তাঁকে বাধা দিতে কেউ সাহস পেল না।
ওমরের তলোয়ারের ভয়ে তারা প্রকম্পিত।
প্রাণ হারাতে কে যাবে তাঁর তলোয়ারের সামনে।
হযরত ওমর!
দুঃসাহসী ওমর!
নির্ভীক ওমর!
একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেই যিনি পরোয়া করেন না।
ভয় নামক শব্দটিকে যিনি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারেন, তিনিই হযরত ওমর।
নবীকে (স) তিনি ভালোবাসতেন প্রাণ দিয়ে। তাঁর সে ভালোবাসার কোনো তুলনা হয় না।
নবীর (সা) সাথে তিনি বদর, উহুদ, খন্দকসহ সকল যুদ্ধেই অংশ নিয়েছেন এবং বীরত্বের সাথে কাফেরদের মুকাবেলায় যুদ্ধ করেছেন।
নবীকে (সা) তিনি অত্যন্ত ভালোবাসতেন। নবীর (সা) ওফাতের সংবাদ শুনে তিনি বিশ্বাসই করতে পারেননি যে, নবী (সা) আর দুনিয়াতে নেই। নবীর (সা) মহব্বতে তখন তিনি পাগলপ্রায়। কোষমুক্ত তলোয়ার নিয়েওমর মসজিদে নববীর সামনে গিয়ে ঘোষণা দিলেন:
যে বলবে নবী (সা) ইন্তেকাল করেছেন, আমি তার মাথা দ্বিখন্ডিত করে দেব।
ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রা)।
আর দ্বিতীয় খলিফা হলেন হযরত ওমর (রা)।
দ্বিতীয় খলিফা হলেন হযরত ওমর (রা)।
দশ বছর খিলাফতকালে তিন গোটা বাইজাইনটাইন, রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটান।
তিনি বহু শহর এবং বহু রাজ্য জয় করেন।
অর্ধেক জাহানে তিনি ইসলামের বিজয় পতাকা ওড়াতে সক্ষম হন।
তাঁ সময়েই তিনি জেনার জন্যেদুররা মারা এবং মদপানের জন্যে আশিটি বেত্রাঘাত চালু করেন।
অর্ধেক জাহানের শাসনকর্তা হযরত ওমর।
কিন্তু ক্ষমতার মোহ তাঁকে কখনোই সত্য থেকে দূরে ঠেলে দেয়নি।
তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ন শাসক। তাঁর কাছে ধনী-গরিব, ঠো-বড় কোনো ভেদাভেদ ছিল না। সকলের প্রতি ছিলেন সমান দরদি।
এতবড় শাসক হয়েও ব্যক্তিগতজীবনে ছিলেন হযরত ওমর অত্যন্ত সাধারণ একজন মানুষ। তাঁর ছিল না কোনো বাড়তি চাকচিক্যছিল না কোনো জৌলুস। খুব গরিব হালে তিনি জীবন যাপন করতেন।
কিন্তু শাসক হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সচেতন।
তিনি নিজের চোখে মানুষের সুখ-দুঃখ দেখার জন্যে ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন। তিনি এবং রাতের গভীরেও। তাঁর শাসনামলে মানুষ সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতো। নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতো।
হযরত ওমর ছিলেন সবার কাছে অত্যন্ত শ্বিাসী। তাকে বলা হতো আমীরুল মু’মিনীন।
তিনি মানুষকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। সবার মুখে মুখে ফিরতো হযরত ওমরের নাম। তাঁর ইনসাফ ও ন্যায়পরায়ণতায় সকলেই মুগ্ধ ছিলো।
ভালো মানুষেরা ওমরকে ভঅলোবাসতো প্রাণ দিয়ে। আর দুষ্ট ও ইসলামের শত্রু ওমরের নাম শুনতেই ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠতো।
হযরত ওমর!
ওমরের বীরত্ব ও ন্যায়পরায়ণতা ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি যেমন ছিলেন উগ্র এবং দুঃসাহসী, ঠিক ইসলাম গ্রহণের পরও তিনি ছিলেণ সত্যের পক্ষে প্রশান্ত এবং কোমল। আর মিথ্যঅ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন বরাবরই-
খাপ খোলা তলোয়ার।
শুক্রবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৫
একটি অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার
অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহারঃ আসাদ বিন হাফিজ ( একটি বিপ্লবী কবিতা)
আমি আমার জনগণকে আরেকটি অনিবার্য বিপ্লবের জন্য
প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছি
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যেভাবে রুখে দাঁড়ায় আক্রান্ত দুর্বল
বিধ্বস্ত জাহাজ যাত্রীরা আঁকড়ে ধরে ভাসমান পাটাতন
তেমনি একাগ্রতা নিয়ে
আমি আপনাদেরকে আসন্ন বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছি।
বিপ্লব মানেই যুদ্ধ
বিপ্লব মানে তিল তিল বাঁচতে শেখা
বিপ্লব মানে ভাসমান রক্তপদ্ম, প্রস্ফুটিত কৃষ্ণচূড়া
বিপ্লব মানে জীবন
বিপ্লব মানে জীবনের জন্য আমরণ লড়াই।
আমি আপনাদেরকে আরেকটি অনিবার্য বিপ্লবের জন্য
প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছি।
যে বিপ্লবে প্রতিটি নাগরিকের জীবন হয়
একেকজন যোদ্ধার জীবন
প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি মানুষ হয়
একেকজন আমূল বিপ্লবী
প্রতিটি যুবক
নারীর বাহুর পরিবর্তে স্বপ্ন দেখে উত্তপ্ত মেশিনগানের
আর রমণীরা
সুগন্ধি রুমালের পরিবর্তে পুরুষের হাতে তুলে দেয়
বুলেট, গ্রেনেড।
আমি আমার জনগণকে
আনিবার্য সেই বিপ্লবের জন্য
প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছি।
বিপ্লব মানেই যুদ্ধ
বিপ্লব মানেই সংগ্রাম, সংঘাত
বিপ্লব মানে শিরায় শিরায় উদ্দাম ঝড়
ঝড়ো হাওয়া, টর্নেডো, সাইক্লোন
বিপ্লব মানে কল্লোলিত সমুদ্রের শোঁ শোঁ অশান্ত গর্জন
বিপ্লব মানে আশা, সফলতা ও বিজয়ের আমোঘ পুস্পমাল্য।
আমি আপনাদেরকে আরেকটি
অনিবার্য বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছি।
যে বিপ্লব সাধিত হলে
মানুষের শরীর থেকে খসে পড়ে শয়তানের লেবাস
জল্লাদের অশান্ত চিত্তে জন্ম নেয় বসরাই গোলাপ
অর্ধ পৃথিবীর দুর্দান্ত শাসক
কেঁপে উঠে ফোরাত কূলের কোন
অনাহারী কুকুরের আহার্য চিন্তায়।
যে বিপ্লব সাধিত হলে
কন্যা হন্তারক অভাবী পিতাদের জন্য পরওয়ারদিগার
খুলে দেন রহমতের সব ক’টি বন্ধ দুয়ার।
তখন কোন অভাব আর অভাব থাকে না
উদ্বৃত্ত সম্পদ প্রদানের জন্য
পাওয়া যায় না কোন ক্ষুধাতুর বনি আদম।
অন্ধকার যত ঘনীভূত হয় ততই উজ্জ্বল হয় বিপ্লবের সম্ভাবনা
একটি কৃষ্ণ অন্ধকার মানেই
সামনে অপেক্ষমান একটি প্রস্ফুটিত সূর্যদয়
একটি আরক্ত সন্ধ্যা মানেই
বেগমান বোরাক চেপে ধেয়ে আসছে কোন কুসুম সকাল
একটি কৃষ্ণ মধ্যরাত মানেই
তার উল্টো পিঠে বসে আছে কোন মৌমাছি দুপুর
একটি মিথ্যা মানেই
তাকে ধাওয়া করছে কোন দ্রুতগামী সত্যাস্ত্র
একটি অবাধ্য সমাজ মানেই
সামনে নূহের প্লাবন, অনাগত ধ্বংস
আরেকটি নতুন সভ্যতার আমূল উদ্বোধন।
আমি আপনাদেরকে সেই
অনিবার্য বিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলছি।
দিন রাত্রির প্রতিটি আবর্তনে
শোনা যায় যে বিপ্লবের অশ্বখুরধ্বনি
ঋতুচক্রের প্রতিটি আবর্তনে
শোনা যায় যে বিপ্লবের অশ্বখুরধ্বনি
মাস ও বছরের প্রতিটি ঘূর্ণিপাকে
শোনা যায় যে বিপ্লবের অশ্বখুরধ্বনি
যুগ ও কালের প্রতিটি ঘূর্ণিপাকে
শোনা যায় যে বিপ্লবের অশ্বখুরধ্বনি
শতাব্দীর প্রতিটি পরতে পরতে যে বিপ্লবের পলিময় মৃত্তিকা।
আমি আমার জনগনকে
সারাক্ষণ বুকের মধ্যে বিপ্লবের চাষ করতে বলছি।
যে বিপ্লবের চাষ করলে
প্রজ্জ্বলিত অগ্নি হয় জাফরান বীথি
যে বিপ্লবের চাষ করলে
নীল নদের আহার্য হয় অবাধ্য ফারাও
আবরাহার হাতি হয় পাখির খোরাক
চুরমার হয়ে যায় রোম ও পারস্যের
বিশাল সালতানাতের দাম্ভিক চূড়া
ব্যর্থ হয়ে যায় কারুনের ধন
কল্পিত স্বর্গদ্বারে হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকে
অবাধ্য সাদ্দামের দশটি আঙ্গুল।
আর কারাগারের বন্ধি কয়েদী ইউসুফ
কুদরতের ইশারায় রাজমুকুট পড়ে হয়ে যান বাদশা কেনান।
আমি আমার জনগণকে
আসন্ন সেই বিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
যেখানে অন্ধকার
সেখানেই বিপ্লব
যেখানে ক্লেদাক্ত পাপ ও পঙ্কিলতার সয়লাব
সেখানেই বিপ্লব
যেখানে নগ্নতা ও বেহায়াপনার যুগল উল্লাস
সেখানেই বিপ্লব
যেখানে মিথ্যার ফানুস
সেখানেই বিপ্লব
বিপ্লব সকল জুলুম, অত্যাচার আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে
বিপ্লব অন্তরের প্রতিটি কুচিন্তা আর কুকর্মের বিরুদ্ধে।
আমি আপনাদের সকলকে
বিপ্লবের মৌসুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
মৌসুম ছাড়া কোন বসন্ত আসে না
মৌসুম ছাড়া ফোটে না কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, শিমুল
সময়কে ধারণ করতে না পারলে গর্ভবতী হয় না কোন রমণী
ফলবতী হয় না সবুজ ধানের শীষ
সীম আর মটর দানা
সময়কে ধারণ করতে না পারলে সফল হয় না বিপ্লবের আরাধ্য কাজ।
কৃষ্ণ মধ্যরাত পেরিয়ে আজ বিংশ শতাব্দী ছুটছে প্রত্যুষের দিকে
সাইবেরিয়ার বরফ খন্ডে মুখ লুকাচ্ছে পাশবতন্ত্র
আ’দ ও সামুদ জাতির মত টেক্সাসের ঘোড়াগুলোকে
ঘিরে ফেলেছে আল্লাহর গজব
ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, বসনিয়া, কাশ্মীর,
পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তরে
লাউড স্পিকারের সামনে দাঁড়িয়ে গেছে যুগের মুয়াজ্জিন
আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে এখনি আজান হবে
সে আওয়াজের নিচে হারিয়ে যাবে
এটম ও কামানের ধ্বনি
গড়িয়ে যাওয়া অজুর পানিতে ভিজে অকেজো হয়ে পড়বে
সব ক’টি দূরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র।
কাজী নজরুল ইসলাম
, * ইসলাম ও জাগ্রুর নজরুল * ১ম পর্ব।
বেজেছে নাকাড়া হাঁকে নকীবের তুর্য
হুশিয়ার ইসলাম ডুবে তব সূর্য ।
জগতের শাশ্বত নিয়মানুসারে মহাকালের স্রোতে ভেসে যায় সব কিছু ।একদিন মানুষও যায় হারিয়ে ।কিন্ত কালের সেই মহাখাদক স্রোত এক জায়গায় এসে বার বার ব্যর্থ হয়েছে ।ফিরে গেছে অবনত মস্তকে ।সেই হল কবি সাহিত্যিকদের অমর সৃষ্টি ।বাংলা সাহিত্যের সেই মহান কলম সৈনিককে নিয়ে আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস ।যাকে নিয়ে লেখা যায় শত শত প্রবন্ধ,কবিতা তথাপিও তার অবদান অমর।কে সেই মহা মানব?ভূমিকম্পের মত গোটা সাহিত্য জগতকে কাপিয়ে যিনি ধুমকেতুর মত আবির্ভূত হয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের গগনে।আলোকিত করেছিলেন গোটা সাহিত্য জগতকে।ঝর তুলেছিলেন লাখো মানুষের মনে এই ধরনের শত শত গদ্যে পদ্যে-
বন্দী থাকার হীন অপমান! হাঁকবে যে বীর তরুণ
শির দাঁড়া যার রক্ত তাজা,রক্ত যার অরুণ,
সত্য-মুক্তি স্বাধীন জীবন লক্ষ শুধু যাদের
খোদার রাহায় জান দিতে আজ ডাক পড়েছে তাদের।”
যিনি ছিলেন মহাযুদ্ধের প্রাঙ্গন হতে ফিরে আসা এক কর্ম ক্লান্ত কলম সৈনিক।বাংলা সাহিত্যের পাতাকে রাঙিয়েছেন মনের সকল রঙ ঢেলে।বাংলার ঘুমন্ত মানুষকে জাগ্রত করতে এসেছিলেন এক হাতে রণতর্য আর এক হাতে বাকা বাঁশের বাঁশীঁ নিয়ে ক্ষণকালের জন্য,
সাম্যের গান গাইতে,আর ।ন্যয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে,তিনিই হচ্ছেন বাংলা সাহিত্যের প্রাণ প্রতিষ্ঠা, বিদ্রোহের পথের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর, বাংলার নাগ শিশু কাজী নজরুল ইসলাম।যিনি ছিলেন কবিতার এক অনন্য কারিগর।
যার কবিতায় উরত ধোঁয়া
স্বপ্ন থাকত আকাশ ছোয়া।”
তিনিই আমাদের জাতীয় কবি,সংগ্রমের অগ্রণী নকীব।আমাদের সাহিত্যে যার অবদান মহীরুহের ন্যায়।যদি একটু লক্ষ করি আমাদের শিশুকালের পড়া কবিতা-
আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম বাগে
উঠব আমি ডাকি।
ভোর হল দোর খোল
খুকুমনি উঠরে।”
এই চরণ গুলি যে কারো সামনে ধরে প্রশ্ন করলে যে,লেখা কার?এক বাক্যে উত্তর পাওয়া যাবে কাজী নজরুল ইসলাম।এবারে আসা যাক দেশের সর্বচ্চ বিদ্যাপিঠ গুলোর তালিকায়।যেখানে ও নজরুল রণ আপন প্রতিভায় বিচরণকারী এভাবে-
হে দরিদ্র!তুমি মোরে করেছ মহান
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান।
কিংবা
ফিরে এলো আবার সেই মহরম মাহিমা
ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহিনা।
বাংলা সাহিত্যের যার অবদান সূর্য উদয় থেকে অস্ত পর্যন্ত,একবাক্যে আমরা তাকে আমাদের জাতীয় কবির মর্যাদায় সমাসীন করতে পারি।এবারে আসা যাক প্রবন্ধের মূল বিষয়ের দিকে।নজরুল শুধু সাম্যের কবি ছিলেন না।তিনি ছিলেন ইসলাম ধর্মের উচ্চকিত প্রসংশা ও স্ত্ততি গানের এক মহান শিল্পী।যার লেখনীতে শুধু সাম্য,মৈত্রী,স্বাধীনতা,বিদ্রহ আর শিকল ভাঙ্গার কথা ফুটে উঠেনি।ইসলাক ধর্ম ও দর্মনের কথা ফুঠে উঠেছে,কোহিনুর সুঠাম দৃষ্টান্ত।যার পরিচয় আমরা পাই ইসলাম ধর্মের প্রবক্তা হজররত মুহাম্মদ (সঃ) এর শুভ জম্ন উপলক্ষ্যে লেখা কবিতায়-
আজ বেদুইন তার ছেড়ে দিয়ে ঘোড়া
ছঁরে ফেলে বল্লম
পড়ে সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
অথবা
সাবেঈন
তাবঈন
হয়ে চিল্লায়ে জোড়ে ওই ওই নাবে দীন
ভয়ে ভূমি চুমে লাত মানতের ওয়ারেশীন।
রাসূলের আগমনে তিনি শুধু আনন্দিত হননি,সেই মহান মনীষীরা মহা প্রয়াণে হয়েছেন খুব ব্যথিতও। নাহলে কেন লিখলেন?
এক বিস্ময়!আজ আজরাইলের ও জলেভরভর চোখ
বে-দর দিল কাপে থর থর যেন জ্বর জ্বর শোক।
সে সময় হজরত উমর (রাঃ) মনের অবস্থাকে তুলে ধেরেছেন এভাবে,
হাঁকে ঘন ঘন বীর
হবে জুদা তার তন শির
আজ যে বলবে নাই বেচেঁ হজরত-সে নেবে তাঁরে গোরে
আর দারাজ হস্তে তেজ তলোয়ার বোঁ বোঁ করে ঘোরে।
বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যাকে মনে স্থান দিয়ে বানালেন বিশ্ব কবি ,সেই কবি কিন্তু বিশ্বে সব চিএ তার কবিতায় তুলে ধরেননি।তার কবিতা থেকে বাদ পরেছে, জেলে,কামার,কুমার কুলি,মজুর।অর নজরুল সেই ফেলে দেয়া গোবরে ফুটিয়েছেন পদ্ম।অধিকার ফুটিয়ে তুলেছেন খেটে খাওয়া মানুষের।যার পরিচয় আমরা পাই-
দেখুন সেদিন রেলে
কুলি বলে এক বাবু সাব তারে
ফেলে দিল নিছে ঠেল।
আসা যাক এবার মূল বিষয় বস্তু ধর্মের কথায়।ধর্মের ব্যাপারে রবি ঠাকুর যেখানে নিরব নজরুল সেখানে স্রোতস্বীন নদীর ন্যায় অবিরাম চলমান।ধরাযাক সেই গজলটির কথা ষোলকোটি মানুষের মখে আজো যা ঘুরে ফিরে-
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে
এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন
আসমানী তাকিদ।
ধর্মের প্রতি যদি তার এই দর্বার আকর্ষন বোধ না থাকত তবে কেন লিখলেন একথা।বৃষ্টি হলে যেমন জমিনের কোন অংশ বাদ থাকেনা যেখানে বৃষ্টি না পড়েনা।তেমনি নজরুল সাহিত্য হচ্ছে বৃষ্টির ন্যায়।তার লেখনীর আঁচর থেকে বাদ পড়েনি হোক সে জালিম আর মাজলুম।ইসলাম সাম্যের ধর্ম এই প্রেরণায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে তিনি লিখেছেন-
আজি ইসলাম ডম্কা গরজে ভরি জাহান
নাই ছোট বড় সকল মানুষ এক সমান।
ইসলাম সকলকে সুষম অধিকার দিয়েছে সেই কথাই এখানে ফুটে উঠেছে।জাহেলী যুগে অবহেলিত নারী সমাজের অধিকার ওতিনি দিয়েছেন তার কাব্যে।–
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।
তুই একটা শয়তান! তুই ফেরাউন!
গোলাম মাওলা রনি
শয়তান এবং ফেরাউনকে নিয়ে দুনিয়াতে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। সবাই এই দুজনকে ভারি অপছন্দ করে। আবার সমানতালে ভালোও বাসে। মাঝে-মধ্যে ভয়ও করে আজরাইলের মতো না হলেও যমদূতের মতো। শয়তান ও ফেরাউন দুটো শব্দই গালি। তবে শয়তান হলো মিষ্টি গালি আর ফেরাউন হলো তিতা গালি। বিয়ের আগে প্রেমিকা যদি প্রেমিকের শরীরে একটু খোঁচা দিয়ে বলে এই যাহঃ তুমি না একটা মিছকে শয়তান সে ক্ষেত্রে প্রেমিক খুশিতে বাকবাকুম করতে থাকে। কিন্তু বিয়ের পর সেই প্রেমিকাই যদি মুখ ভেঙচিয়ে বলে চাইয়্যা দ্যাখ শয়তানটা! খাডাশের মতো করবি না (খাডাশ একটি প্রচলিত গালি। বিড়াল জাতীয় প্রাণী। কোনো কোনো এলাকায় একে বাগডাশও বলা হয়) সে ক্ষেত্রে পরিণতি যে কী হবে বলাই বাহুল্য। স্বামী যদি সাহসী হয় তবে ফেরাউনের মূর্তি ধারণের চেষ্টা করবে। অন্যথায় খাডাশের ছোট ভাই মেনি বিড়াল হয়ে মিউ মিউ করবে।
আমরা সকাল বিকাল শয়তান ও ফেরাউনকে গালি দিই বটে কিন্তু একবারও ভেবে দেখি না বেচারারা আমাদের গালি খাবার পর কী মন্তব্য করতে পারে। প্রথমেই শয়তানের বক্তব্য শোনা যাক। শয়তান মানে ইবলিস। তারপর শুনব ফেরাউনের কথা। শয়তান সাধারণত মিথ্যা বলে, প্রতারণা করে এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে মানুষের দ্বারা কুকর্ম ঘটায়। শয়তান মানুষের মৃত্যু চায় না। কারণ মানুষ মরে গেলে তার আমলনামা বন্ধ হয়ে যায় গুনাহ করতে পারে না। এতে করে শয়তানের বড্ড লোকসান হয়ে যায়। তার কাজ মানুষকে পাপী বানানো। মরে গেলে আর পাপী হওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই মানুষ যত বাঁচে ততই শয়তানের কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়। এ কারণে শয়তান হলো খারাপ মানুষদের দীর্ঘায়ুর অন্যতম নেয়ামক।
অন্যদিকে ফেরাউন হলো জুলুম, অন্যায়, নাফরমানি, অকৃতজ্ঞতা, উদ্ধত আচরণ, অহংকার, মিথ্যাচার এবং ভ্রষ্টতার এক মূর্ত প্রতীক। শয়তান অদৃশ্য- নূরের তৈরি। ফেরাউন দৃশ্যমান-মাটির তৈরি। শয়তান কিয়ামত পর্যন্ত অমর। আর ফেরাউন মরণশীল- অর্থাৎ আমাদের মতোই তাকে রোগ-শোক-জরা আক্রমণ করে। তাই কাউকে যদি শয়তানের পরিবর্তে ফেরাউন বলে গালি দেওয়া হয় তবে লোকটি ভীষণ রকম রাগ করে। তবে মজার ব্যাপার হলো, শয়তান নামক গালিটি আমজনতা সবার জন্য প্রযোজ্য- অর্থাৎ ধনী, দরিদ্র, নারী, পুরুষ, আমির-ফকির, রাজা-মহারাজা সবার জন্য। অন্যদিকে ফেরাউন নামক তকমাটি কেবল ক্ষমতাবান বা ক্ষমতাবতীদের জন্যই প্রযোজ্য। ফেরাউন ও শয়তানের চরিত্র নিয়ে আমার বকবকানি না শুনে আসুন আমরা খোদ তাদের নিজস্ব জবানবন্দি থেকে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করি-
ইবলিসের আত্মকথা : হে বঙ্গ দেশের অধিবাসীরা! আমার শয়তানি শুভেচ্ছা গ্রহণ কর। তোমরা হয়তো ভাবতে পার কেন আমি তোমাদের তুমি বলে সম্বোধন করলাম! আসলে বয়স হয়েছে তো, অনেক অনেক বয়েস। হয়তো লাখ লাখ কোটি কোটি বছর কিংবা তার চেয়েও বেশি। তোমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আ.) থেকেই লাখ কোটি বছরের বড় আমি। তোমরা হয়তো অনেকেই জানো, আমি নূরের তৈরি জিন জাতির অন্তর্ভুক্ত। পরে ফেরেশতাদের গোত্রভুক্ত হই এবং এক সময় তাদের নেতা নির্বাচিত হই। তোমাদের অতি পরিচিত জিবরাইল, আজরাইল কিংবা মিকাইল- আমারই অধীনস্থ শিষ্য ছিল এক সময়। আদম (আ.)-কে নিয়ে সৃষ্ট সমস্যায় আমি আল্লাহপাকের সামনে যে অহংকার প্রদর্শন করেছিলাম তা ব্যতীত আমার জীবনে কোনো গুনাহ নেই। বরং ইবাদত কিংবা বন্দেগিতে কোনো সৃষ্টি এযাবৎকাল আমাকে অতিক্রম করতে পারেনি। আসমান, জমিন, আরশ কিংবা জান্নাতের এমন এক তিল জায়গাও খুঁজে পাবে না যেখানে এই ইবলিশ মিয়ার সেজদা পড়েনি।
তোমাদের হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে, আজ এত বছর পর আমি কেন পত্র লিখতে বসলাম আর কেনইবা দুনিয়ার এত্তসব হাজার হাজার জাতি গোষ্ঠী, বর্ণ, সম্প্রদায় বাদ দিয়ে তোমাদের বেছে নিলাম? আসল কথা হলো তোমাদের আচার-আচরণ এবং ব্যবহারে আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। আমি ইদানীং খুবই অপমানিত বোধ করছি তোমাদের কারণে, মনে হচ্ছে তোমরা আমার সব ইজ্জত পাংচার করে দিয়েছ। আমি সময় পেলেই এখন শয়তানি বাদ দিয়ে একা একা ঘুরি। বড় কোনো বট গাছ কিংবা রেনডি গাছ দেখলে দাঁড়িয়ে যাই। তারপর আমার নূরানী চোখ বিস্ফোরিত করে তোমাদের শয়তানি দেখি আর মনে মনে বলি, ইয়া আল্লাহ, এই সব কুলাঙ্গার এত্তসব হারামিপনা শিখল কোত্থেকে! বিশ্বাস কর তোমাদের ইতরামি দেখে মাঝে মাঝে আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ওটা তোমাদের পক্ষে সম্ভব হলেও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আল্লাহর হুকুমে আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকতেই হবে!
আচ্ছা তোমরা কি একবারও ভেবে দেখেছ যে, কীভাবে সকাল-সন্ধ্যা-রাতবিরাতে তোমরা আমার ওপর জুলুম করছ? তোমরা না জেনেই আমার ওপর মিথ্যারোপ করছ। তোমাদের সব কুকর্মের জন্যই তোমরা আমাকে দায়ী কর, অথচ অনেক কিছু আমি এখন পর্যন্ত জানি না এবং কিয়ামত পর্যন্ত জানতেও পারব না। কারণ আমার মন মস্তিষ্ক মূলত জিন জাতির মতো। আমার জ্ঞানগরিমা ফেরেশতাদের মতো। আমাকে আল্লাহ যতটুকু জ্ঞান এবং ক্ষমতা দিয়েছেন আমি ইচ্ছে করলেই সেই জ্ঞান ও ক্ষমতার আওতা অতি
যুগে যুগে ইস্লামি movement
যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলন
শুরুর কথা
খৃস্টীয় ৬২২ সনে মহাম্মাদুর রাসূরুল্লাহ
(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলমাদীনা আলমুনাওয়ারা-কে কেন্দ্র করে
গড়ে তুলেছিলেন একটি ইসলামী রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্র-প্রধা হিসেবে
মুহাম্মাদুর রাসলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (খৃস্টীয়
৬২২-৬৩২ সন) দশ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।
তাঁর ওফাতের পর আমীরুল মু’মিনীন বা খলীফঅ
হিসেবে আবু বকর আছছিদ্দিক (রা) খৃস্টীয় ৬৩২-৬৩৪ সন) দুই বছর তিন মাস দশ
দিন রাষ্ট্রপ্রধান রূপে শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
তাঁর ওফাতের পর উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) (খৃস্টীয় ৬৩৪-৬৪৪ সন) দশ বছর ছয় মাস চারদিন রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।
তাঁর শাহাদাতের পর উসমান ইবনু আফফান (রা) (খৃস্টীয় ৬৪৪-৬৫৬ সন) রাষ্ট্র পরিচালনা করেন বার দিন কম বার বছর।
তাঁর শাহাদাতের পর আলী ইবনু আবী তালিব (রা) (খৃস্টীয় ৬৫৬-৬৬১ সন) চার বছর নয় মাস রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।
তাঁর শাহাদাতের পর আল হাসান ইবনু আলী (রা) (খৃস্টীয় ৬১১ সন) ছয় মাস রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিচালনাধীন দশ বছর আর খিলাফত ‘আলা মিনহাজিন নাবুওয়াত
ত্রিশ বছর- এই চল্লিশটি বছর পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলো ইসলামী শাসন। গড়ে
উঠেছিলো সভ্যতার সোনালী অধ্যায়।
দুঃখের বিষয় উসমান ইবনু আফফানের (রা)
শাহাদাতকে কেন্দ্র করে মুসলিম উম্মাহ অন্তর্বিরোধের শিকার হয়। এক সময়ে এসে
খিলাফতেরস্থান দখল করে রাজতান্ত্রিক শাসন।
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আলখুলাফঅউর রাশিদূনের শাসনকালে আশশূরা ছিলো
রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান।
রাজতান্ত্রিক শাসন কায়েম হয়ে যাবার পর আশ-শূরার এই মর্যাদা রইলো না। ক্রমশ দীনী নেতৃত্ব ও রাজনেতিক নেতৃত্ব পৃথক হয়ে যায়।
দ্রুত প্রবাহিত হতে থাকে কালের স্রোত।
আলকুরআন ও আসসুন্নাহ থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন শাসকেরা। একই পথ ধরে
শাসিতরাও। অ-মুসলিমদের জীবন দর্শন ও জীবনাচার প্রভাব ফেলতে শুরু করে
মুসলিম উম্মাহর ওপর।
ইসলামের মনগড়া ব্যাখ্যা দানকারীদের
বিভিন্ন গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। তাঁরা মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে থাকেন নানা মত ও
পথ। তাঁরা ইসলামকেই কাটছাঁট করে অথবা অন্য কোন চিন্তাধারার সাথে মিশ্রিত
করে এমনভাবে পেশ করেছেন যে এতে ইসলামের আসল রূপ অবশিষ্ট থাকেনি।
প্রকৃতপক্ষে তাঁদের দ্বারা মানুষের সামনে উপস্থাপিত হয়েছে ইসলামের বিকৃত
রূপ।
এরি পাশাপাশি সকল যুগেই এমন কতিপয় বিশিষ্ট
ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে যাঁরা ইসলামী জীন দর্শন ও জীবন বিধানের
শ্রেষ্ঠত্ব, সৌন্দর্য, পূর্ণত্ব, চির নতুনত্ব ও কল্যাণময়তা সম্পর্কে ছিলেন
নিঃসংশয়। তাঁরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে আলকুরআন ও আস্সুন্নাহতে পরিবর্তন
আনার কোন সুযোগ নেই, প্রয়োজনও নেই। প্রয়োজন ভ্রান্ত চিন্তাধারার
অনুসারীদের চিন্তাধারার পরিবর্তন, তাঁদের চিন্তার বিশুদ্ধি সাধন।
আর চিন্তার বিশুদ্ধি সাধনের জন্য এবং সমাজ
ও সভ্যতার সকল ক্ষেত্রে ইসলামের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁরা নিরলস
প্রয়াস চালিয়ে গেছেন।
এই সত্যনিষ্ঠ আপোসহীন ব্যক্তিত্বের কয়েকজনের অবদান আমার আলোচ্য বিষয়।
১। আল হুসাইন ইবনু আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) খৃস্টীয় (৬২৬-৬৮০)
‘খিলাফাত ‘আলা মিনহাজিন্ নাবুওয়াত’ থেকে সরে যাওার বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম আওয়াজ তোলেন আল হুসাইন ইবনু আলী (রা)।
এই বিচ্যুতিতে হিজাযের লোকেরা দারুণভাবে বিক্ষুব্ধ ছিলেন।
ইরাক থেকেও অনুরূপ মনোভাব প্রকাশ পেতে
থাকে। শত শত বিশিষ্ট ব্যক্তি আল হুসাইন ইবনু আলীকে (রা) কুফা যাওয়ার জন্য
চিঠির মাধ্যমে দাওয়াত দিতে থাকেন।
তিনি কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
আল হুসাইন ইবনু আলী (রা) ইরাকের ফোরাত
নদীর তীরবর্তী কারবালা নামক স্থানে কুফাস্থ গভর্ণর উবাইদুল্লাহ ইবনু
যিয়াদের প্রেরিত কয়েক হাজার সৈন্যের মুখোমুখি হন।
তাঁর সংগী ছিলেন পরিবারের সদস্য ছাড়া চুয়াত্তর জন। তাঁর ওপর এবং খোদ আল হুসাইন ইবনু আলী (রা ওপর ঝাঁকে ঝাঁকে তীর বর্ষণ করা হয়।
তীর বিদ্ধ রক্তাক্ত শরীর নিয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
তাঁর দেহের ওপর ঘোড়া দাবড়ানো হয়। দেহ থেকে তাঁর মাথা কেটে নেওয়া হয়।
এই হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে খৃস্টীয় ৬৮০ সনে, হিজরী ৬১ সনে।
জীবন দিয়ে আল হুসাইন ইবনু আলী (রা) বিচ্যুতির বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার শিক্ষা দিয়ে গেলেন।
২। উমার ইবনু আবদিল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ (খৃস্টীয় ৬৮০-৭২০)
উমার ইবনু আবদিল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন বানু উমাইয়ার অষ্টম খলীফা।
বানু উমাইয়া-র সপ্তম খলীফা সুলাইমান ইবনু
আবদিল মালিক অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পরবর্তী খলীফা মনোনীত করতে গিয়ে সমস্যায়
পড়েন। কারণ তাঁর ছেলেরা সকলেই ছিলো ছোট ছোট। অবশেষে তিনি একটি গোপন
ওয়াছিয়াতনামা লিখে তাঁর প্রধান উপদেষ্টা রাজা ইবনু হায়ওয়া-র নিকট গচ্ছিত
রাখেন। এতে লেখা ছিলো, তাঁর ওফাতের পর উমা ইবনু আবদিল আযীয খলীফঅ হবেন এবং
তাঁর ওফাতের পর খলীফা হবেন ইয়াযিদ ইবনু আবদুল মালিক।
খৃস্টীয় ৭১৭ সনে সুলাইমান ইবনু আবদিল মালিক মারা যান। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব এসে পড়ে উমার ইবনু আবদিল আযীযের ওপর।
রাজধানী দামিসকে অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য
একটি দিন ধার্য হয়। রাষ্ট্রের সকল অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিরা
উপস্থিত হন। সমবেত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে উমার ইবনুল আবদিল আযীয় একটি ভাষণ
দেন। সেই ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমার ওপর রাষ্ট্র পরিচালনার ভার অর্পণ করে
আমাকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। আমি এটা চাইনি। এই ব্যাপারে আমার মতও নেওয়া
হয়নি। আপনাদের ঘাড়ে আমার আনুগত্যের যেই রজ্জু পরিয়ে দেওয়া হয়েছেতা আমি
খুলে দিচ্ছি। এখন আপনারা যাকে ইচ্ছা তাকেই আপনাদের আমীর বানাতে পারেন।’
সমাবেশ থেকে জোর আওয়াজ ওঠলো, ‘আমরা আপনাকেই চাই।’
এবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে উমার
ইবনু আবদিল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ পেশ করেন। সেই
ভাষণে তিনি বলেন, ‘আসলে রব, নবী ও কিতাবের ব্যাপারে এই উম্মাহর মধ্যে বিরোধ
নেই। বিরোধ শুধু দীনার-দিরহামের ব্যাপারে। আল্লাহর কসম, আমি অন্যায়ভাবে
কাউকে কিছু দেবোনা, আবার কারো বৈধ অধিকারে বাধাও দেবোনা। ওহে জনমন্ডলী,
শুনুন। যেই ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করে, তার আনুগত্য করা ওয়াজিব। আর যেই
ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করেনা, তার জন্য কোন আনুগত্য নেই। যতোক্ষণ আমি
আল্লাহর আনুগত্য করি, ততোক্ষণ আপনারা আমার আনুগত্য করবেন। আর আমি আল্লাহর
অবাধ্যতা করলে, আমার আনুগত্য করা আপনাদের জন্য ওয়াজিব নয়।’
এবার উমার ইবনু আবদিল আযীয ইছলাহে হুকুমাত শুরু করেন।
তাঁকে পাহারা দেওয়ার জন্য দেহরক্ষী বাহিনী এগিয়ে এলে তিনি তাদেরকে ফেরত পাঠান।
বানু উমাইয়া যেইসব সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করেছিলো, তিনি সেইগুলো প্রকৃত মালিকের কাছে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
বিভিন্ন প্রদেশে নিযুক্ত যালিম গভর্ণরদেরকে বরখাস্ত করেন।
জনগণের ওপর অন্যায়ভাবে যেইসব ট্যাকস চাপানো হয়েছিলো, সেইগুলো রহিত করেন।
নও-মুসলিমদের ওপর অন্যায়ভাবে ধার্যকৃত জিয্ইয়া রহিত করেন।
অ-মুসলিমদের দখলকৃত উপাসনালয় তাদেরকে ফেরত দেন।
নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদ করে দেন।
সর্বজনীন শিক্ষার জন্য-গণ শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেন।
জনগণকে ইসলাম সম্পর্কে ওয়াকিফহাল করে তোলার জন্য দেশের সর্বত্র মুবাল্লিগ নিযুক্ত করেন।
রাষ্ট্রীয়ভাবে মুহাম্মাদূর রাসুলুল্লাহ
(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীগুলো সংগ্রহ ও একত্রিত করার অভিযান
শুরু করার জন্য একদল বিশেষজ্ঞের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন।
ইসলামে পারদর্শী ব্যক্তিদেরকে নিয়ে আশ-শুরা গঠন করেন। ইত্যাদি।
সন্দেহ নেই, উমার ইবনু আবদিল আযীয ছিলেন একজন সাহসী পুরুষ, একজন কর্মবীর।
মাত্র আড়াই বছরের মধ্যেই তিনি বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসেন। চারদিকে খিলাফতে ‘আলা মিনহাজিন নাবুওয়াতের আলো ছড়িযে পড়ে।
নিষ্ঠাবান মুসলিমরা উল্লসিত হন। কিন্তু বানু উমাই নাখোশ হয়।
বানু উমাইয়ার কিছু দুষ্টু লোক চক্রান্তে মেতে ওঠে। তাঁরা তাঁর খাদ্যে বিষ মিশিয়ে দে।
খৃস্টীয় ৭২০ সনে উমার ইবনু আবদিল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) দামিসকে শাহাদাত বরণ করেন।
৩। আবু হানিফঅ আন নু’মান ইবনুস সাবিত (রাহিমাহুল্লাহ) (খৃস্টীয় ৬৯৯-৭৬৭)
খৃস্টীয় ৬৯৯ সনে আবু হানিফা বানু উমাইয়া
খলীফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের শাসনকালে কুফাতে জন্মগ্রহণ করেন। আবু
হানিফঅ যখন যৌবনে পৌঁছেন তখন উমার ইবনুল আবদিল আযীযের স্বর্ণযুগ শেষ হয়ে
গেছে।
কিন্তু তাঁর নির্দেশে আল হাদীস সংগ্রহের যেই অভিযান শুরু হয় তা পুরোদমে চলছিলো।
হাদীছ বিশারদদের একদল ছিলেন সংগ্রাহক। অপর দলে ছিলেন বিশ্লেষক। আবু হানীফা ছিলেন দ্বিতীয় দলের একজন।
খৃস্টীয় ৭৫০ সনে বানু উমাইয়া খিলাফতের অবসান ঘটে। শুরু হয় বানুল আব্বাস খিলাফত।
আবু হানিফা বানুল আব্বাসের দ্বিতীয় খলীফা আবু জাফর আবদুল্লাহ আল-মানছুরে শাসনকালের মধ্যভাগ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন।
এই সময় খারেজী, মুতাযিলা ও মুর্যিয়া নামে
বিভিন্ন চিন্তাধারার নেতা ও কর্মীরা ঈমান, কুফর, খিলাফতে রাশেদা এবং
ছাহাবীদের মর্যাদা ইত্যাদি বিষয়ে বিভ্রান্তিকর চিন্তা ছড়াতে থাকে। আবু
হানিফা এইসব মতবাদের ভ্রন্তি উন্মোচন করে সঠিক চিন্তাধারা উপস্থাপন করন।
রাস্ট্র দর্শনের অন্যতম মৌলিক বিষয় হচ্ছে
সার্বভৌমত্ব। এই বিষয়ে ইসলামের সর্বজন স্বীকৃত মতবাদই ছিলো আবু হানিফার
মতবাদ। অর্থাৎ সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর।
আইনের উৎস সম্পর্কেও তিনি সঠিক চিন্তার
অধিকারী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কিতাবে কোন বিধান পেলে আমি তা দৃঢ়ভাগে
গ্রহণ করি। আল্লাহর কিতাবে সেই বিধানের সন্ধান না পেলে আল্লাহর রাসূলের
সুন্নাহ গ্রহণ করি। আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহতে কোন বিধান না পেলে
আছহাবে রাসূলের ইজমা অনুসরণ করি। আর কোন বিষয়ে তাঁদের মাছে মত-পার্থক্য
থাকলে কোন ছাহাবীর মত গ্রহণ করি ও ভিন্ন মত পোষণকারী ছাহাবীর মত গ্রহণ
করিনা। তাদের বাইরে অন্য কারো মত গ্রহণ করি না। বাকি রইলো অন্যান্যদের মত।
ইজতিহাদের অধিকার তাঁদের যেমন আছে, তেমনি অধিকার আমারও আছে।’
খিলাফতে রাশেদার পর আশ্ শূরার অবিদ্যমানতার ফলে আইন ব্যবস্থায় শূন্যতার সৃষ্টি হয়।
রাষ্ট্রের বিস্তৃতি ঘটছিলো। নিজেদের সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠান নিয়েই বহু জনগোষ্ঠী মুসলিম রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত হচ্ছিলো।
কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক
সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক লেনদেন, শুল্ক, যুদ্ধ, সন্ধি ইত্যাদি বিষয়ক নতুন
নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছিলো। অথচ কোন স্বীকৃত সংস্থা ছিলো না যেখানে বসে
মুসলিম বিশেষজ্ঞগণ সেইসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারতেন।
এই শূন্যতা পূরণের জন্য আবু-হানিফা একটি সংস্থা গড়ে তোলেন যেটিকে একটি বে-সরকারী আইন পরিষদ বলা যায়।
আবু হানিফার কয়েক হাজার ছাত্রের মধ্যে
বিশিষ্টতা লাভ করেছিলেন ৩৬ জন। তাঁদের মাজলিস বসতো প্রতিদিন। একটি সমস্যা
নিয়ে কয়েক দিন কিংবা কয়েক মাস ধরে আলোচনা হতো। আলোচান্তে একটি সিদ্ধান্ত
গৃহীত হতো। এই মজলিস হাজার হাজার সমস্যার সমাধান উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে।
আবু হানিফার শিক্ষা মাজলিস থেকে আহরিত জ্ঞান নিয়ে হাজার হাজার ছাত্র
রাষ্ট্রের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েন।
বানু উমাইয়ার সর্বশেষ খলীফা মারওয়ান ইবনু
মুহাম্মাদ কর্তৃক নিযুক্ত ইরাকের গভর্ণর ছিলেন ইয়াচিদ ইবনু উমার ইবনু
হুবাইরা। তিনি ইমাম আবু হানিফঅকে বিচারপতি পদ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব
দেন। ইমাম সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এতে ইয়াযিদ ইবনু উমার ক্ষেপে
যান। তাঁর নির্দেশে প্রদিতিন দশটি করে ১১ দিন পর্যন্ত তাঁর পিঠে ১১০টি
চাবুক মারা হয়। এতো বড়ো শাস্তির পরও ইমাম তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
বানুল আব্বাস খলীফা আল মানছুর আবু হানিফাকে বিচারপতি বানাতে চান। তিনি রাজি হননি। এইজন্য তাকে বন্দি করা হয়।
খৃস্টীয় ৭৬৭ সনে তিনি বন্দি অবস্থায় বাগদাদে মৃত্যুবরণ করেন।
হায়রে জামায়াত! হায়রে শিবির! কবে হবে হুঁশ?
গোলাম মাওলা রনি
গোলাম মাওলা রনি
( লেখাটা পড়ে সবার সুচিন্তিত কমেনটস আশা করছি)
জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে আমি কোনো দিনই তেমন একটা ভাবিনি। মাঝে-মধ্যে তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রগতিশীলদের বিরূপ সমালোচনা আমার মনকে তাদের ব্যাপারে বিষিয়ে তুলেছিল। এর বিপরীতে জামায়াতকে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের নিরন্তর চেষ্টারত রাজনৈতিক দলগুলোর বেহায়াপনা এবং মোনাফেকী আচরণ দেখে যারপরনাই বেদনাহত হতাম। স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের পত্তন, বেড়ে ওঠা এবং স্থায়িত্ব লাভের দায় এড়াতে পারবে না কেউ। '৭৫-পরবর্তী সব সরকারই তাদের টানাটানি করেছে এবং এখনো যে করছে না সে কথা কেউ বুকে হাত দিয়ে বলছে না। সার্বিক এ অবস্থায় জামায়াত কী করেছে এবং নিজেদের সতীত্ব হারিয়ে কতটা অপরাধ কিংবা ভুল করেছে তা যদি তারা বিশ্লেষণ না করে তবে আগামী দিনে তাদের অস্তিত্বই থাকবে না।
আমার প্রথমেই মনে হয় জামায়াত তাদের নিজেদের অবস্থান বুঝতে পারেনি এবং পারছে না। তারা ঘৃণা, জনরোষ, শত্রুতা এবং প্রতিযোগিতার অর্থটা হৃদয়ঙ্গম করতে পারেনি। বাংলাদেশের অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক হিংসা, ক্রোধ, প্রতিযোগিতা এবং শত্রুতা রয়েছে। কিন্তু তারা কেউ কাউকে রাজনৈতিক কারণে ঘৃণা করে না। অন্যদিকে জামায়াতবিরোধীরা জামায়াতকে প্রবলভাবে ঘৃণা করে এবং এদের সংখ্যা দেশের রাজনৈতিক সচেতন লোকদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি। এই বিশাল জনগোষ্ঠী জামায়াতিদের সঙ্গে সামাজিক, পারিবারিক, বৈবাহিক এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক করতে ইচ্ছুক নন। বাংলাদেশের কোনো স্বনামধন্য কবি, সাহিত্যিক, লেখক, অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ কিংবা আইনজীবী কোনো নামকরা জামায়াত নেতার ছেলে-মেয়ের সঙ্গে নিজেদের ছেলে-মেয়ের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করবেন না। কিংবা কেউ আনন্দচিত্তে বলবে না ওমুক জামায়াত নেতা আমার আবাল্য ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
এই যে সামাজিক ঘৃণা এবং অস্পৃশ্যতার বিষয়টি কিন্তু কমছে না। বরং বাড়ছে। ১৯৭১ বা ৭২ সালে জামায়াতের প্রতি মানুষের যে ক্ষোভ, ঘৃণা এবং ক্রোধ ছিল তা ২০১৪ সালে এসে অনেক বেড়ে গেছে। জামায়াত হয়তো বলবে তাদের সংখ্যাও তো বেড়েছে। বেড়েছে ধন সম্পদ, চাকচিক্য এবং সাংগঠনিক ভিত্তি। কিন্তু যে হারে তাদের অজনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে জনপ্রিয়তা বাড়েনি। এখন প্রশ্ন হলো এটা কেন হলো?
আগেই বলেছি জামায়াত নিয়ে আমি কোনো দিন তেমন একটা ভাবিনি। কিন্তু জেলে যাওয়ার পর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেশার পর দলটির অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয় সম্পর্কে আন্দাজ করার সুযোগ হয়েছিল। জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে একান্ত নির্জনে আলাপ-আলোচনার সময় তাদের হতাশা, ভুলত্রুটি এবং পরিকল্পনাগুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি। পরবর্তীতে জেল থেকে বের হওয়ার পর জামায়াতের অনেক নেতা-কর্মীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ এবং কথাবার্তার ফলশ্রুতিতে দলটি সম্পর্কে আমার এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আমার মনে হয় এক অনির্ধারিত গন্তব্যে অনেকটা পরিকল্পনাহীনভাবে জামায়াত-শিবির এগুচ্ছে। তারা জানে না তারা কী করছে! তারা এও জানে না তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? অনেকটা বেহুঁশ অবস্থায় তারা দিকভ্রান্ত পাখির ন্যায় মহাশূন্যে এলোপাতাড়ি উড়ছে, কেবল উড়ছে এবং দুনিয়ায় ফেরত আসার পরিবর্তে ঊধর্্বলোকে জান্নাতের সন্ধান করছে। নিজেদের ভেদ বুদ্ধি কোরআন হাদিস ব্যবহার না করে তারা অন্য কিছুর সহযোগিতায় চোখ বন্ধ করে শুধু ছুটছে, অজানা এক গন্তব্যের দিকে ছুটছে। এ গন্তব্যের শেষ প্রান্তে রয়েছে কেবলই পরাজয়, কেবলই অপমান এবং নিশ্চিত এক ধ্বংসযজ্ঞ। সব ভাষাতেই একটি জনপ্রিয় প্রবাদ রয়েছে, সেটি হলো- যারা সৌভাগ্য এবং সুসময়কে চমৎকারভাবে কাজে না লাগায় তারাই দুর্ভাগ্যের কবলে পড়ে। আর যারা দুর্ভাগ্যকে চিহ্নিত করতে পারে না তাদের আমৃত্যু সেই দুর্ভাগ্যের তাড়নায় লাঞ্ছিত; অপমানিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই কবরে যেতে হয়। জামায়াতের লোকজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় আমার কেবলই মনে হয়েছে তারা সুসময়টি যেমন কাজে লাগাতে পারেনি তেমনি দুর্ভাগ্যকে চিহ্নিত করে সেখান থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে যা হওয়ার হয়েছে এবং আগামী দিনে আরও হবে।
জামায়াত-শিবির একবারও চিন্তা করেনি কেন লোকজন তাদেরকে ঘৃণা করে। তারা বরং উল্টোটি চিন্তা করে সকাল-বিকাল দেশ-জাতি এবং নিজেদের তকদিরের ওপর অভিমানী হয়ে হা-হুতাশ করে। তারা ভাবে এত নামাজ পড়ি, কোরআন পড়ি, সৎ জীবনযাপন করি অথচ লোকজন আমাদের নেতা না মেনে মানছে যত্তসব বেনামাজি, নাফরমান এবং অসৎ লোকদের। তারা ভুলেও একবার চিন্তা করে না ১৯৭১ সালের সব নির্মমতা, অপরাধ, লুটপাট, ধর্ষণ, গুম, হত্যা ইত্যাদির জন্য লোকজন তাদেরই দায়ী করে। পাকিস্তানি আর্মি, মুক্তিযোদ্ধাদের আন্তঃবিরোধ, ভারতীয় বাহিনীর ভুল টার্গেট এবং অন্যান্য যুদ্ধাপরাধী সব পর্দার অন্তরালে চলে গেছে। দৃশ্যপটে শুধু জামায়াত আর তাদের একটার পর একটা ভুল পদক্ষেপ, সিদ্ধান্ত এবং কর্ম বার বার জাতির সামনে এ কথাই প্রমাণ করেছে '৭১-এর সব কিছুর মূলে কেবল জামায়াতই দায়ী। জামায়াত তাদের সুসময়ে যেমন জনমতকে পাত্তা দেয়নি তেমনি বর্তমানের দুঃসময়ে একবারও অনুতপ্ত না হয়ে বরং বার বার বলছে তাদের প্রতি জুলুম করা হচ্ছে।
আমার মাথায় ঢুকে না, শিবির কেন জামায়াতের '৭১-এর দায় মাথায় নিচ্ছে। '৬০-র দশকের চিন্তা-চেতনায় আবদ্ধ জরাজীর্ণ বৃদ্ধদের অন্যায় হুকুম, কুকর্মের বোঝা এবং পশ্চাৎপদ নেতৃত্ব দ্বারা তরুণ প্রজন্মের আধুনিকতা যদি পরিচালিত হয় তবে শিবির ধ্বংস হবে না তো কি হবে। যে মানের ছেলেমেয়েরা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তাতে জামায়াতের বৃদ্ধদের উচিত আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে দল, দেশ ও জাতিকে দায়মুক্ত করা। আমি এখনো ভেবে পাই না কেন কাদের মোল্লা ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর ভি চিহ্ন দেখাতে গেলেন? গোলাম আযম সারা জীবন চুপচাপ থাকলেন, কোনো দিন মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিলেন না বা দুই কলম লিখলেন না সেই তিনি হঠাৎ ২০১০ সালে এসে দম্ভ করলেন কেন? টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়ে বললেন, '৭১-এ তিনি সঠিক ছিলেন, '৭১ নিয়ে তার কোনো অনুতাপ নেই, তার কিছু হবে না, কেউ তার কিছু করতে পারবে না! আমি জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে বলব, গ্রেফতার হওয়ার আগে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের কথাবার্তা, হম্বিতম্বি এবং অহংকারমূলক আচরণ মূল্যায়ন করার জন্য। তারা কি সরকারকে প্রভোক করেনি তাদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য?
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল যুদ্ধাপরাধের বিচার। জয়লাভ এবং সরকার গঠনের পর সরকারের কর্তাব্যক্তিরা হরহামেশাই যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যু নিয়ে নানামুখী প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছিলেন। প্রতিদিনই সংবাদপত্র এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো এ ব্যাপারে সরকারকে রীতিমতো জ্বালাতন করত। সরকার কিন্তু বহুদিন চেষ্টা করেছিল বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য না করার জন্য। সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেন, বিচার হবে প্রতীকী অর্থে। অন্যদিকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, 'ওদের আর কি বিচার করব! ওদের তো বিচার হয়েই গেছে। আমাদের সুবিশাল জয়ই ওদের সবচেয়ে বড় বিচার।' সরকারের এই মনোভাবের সুফল জামায়াত-শিবির গ্রহণ করতে পারেনি। বরং সবটাই করেছে উল্টো। তারা দগদগে কাটা ঘায়ে লবণের ছিঁটা দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আবহমান বাংলার আবেগ-অনুভূতিতে পদাঘাত করেছে। মিডিয়ার লোকজন যখন যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উত্তেজনাকর কিছু পেল না তখন জেঁকে ধরল জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে। প্রতিদিন ২/১ জন অভিযুক্ত জামায়াত নেতা বা বিএনপি নেতার বক্তৃতা, বিবৃতি, আত্দপক্ষ সমর্থনের খবর মিডিয়ায় প্রকাশিত হতে থাকল। এসব কথাবার্তায় তারা বলতে চেষ্টা করল, ১৯৭১ সালে তারা কোনো অন্যায় এবং অপরাধ করেনি। তাই সরকার তাদের কিছুই করতে পারবে না। ২/১ জন তো রীতিমতো অহংকার করে সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল, পারলে বিচার করেন তো।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের উল্টাপাল্টা বক্তব্যের কারণে তাদের বিরুদ্ধে জনমত প্রবল হয়ে উঠল। সরকার প্রমাদ গুনল। সরকারের সহযোগী বাম সংগঠনগুলো সরকারকে যুদ্ধাপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করার জন্য প্রবল চাপ দিতে থাকল। বিভিন্ন টকশো, সভা, সমিতি এবং সেমিনারে হররোজ সরকারের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করা শুরু করল। এ অবস্থায় সরকার জাতিসংঘের সাহায্য চাইল। সে মতে ইউএনডিপি আইসিটি অ্যাক্ট প্রণয়নে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল এবং ২০০৯ সালের শেষে এসে ১৯৭৩ সালের আইনটি সংশোধন হলো। এ আইন প্রণয়নে জাতিসংঘের পাশাপাশি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও সাহায্য করেছিল। তারা তিনটি রেজুলেশন পাস করে আইনটিকে সমর্থন জানিয়ে বলে যে, এর মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ গুণগতমান বজায় থাকবে। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনও আইনটি সম্পর্কে লিখিতভাবে ভূয়সী প্রশংসা করে। আইনের অধীন বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে জামায়াত-শিবির প্রথম থেকেই টুঁ-শব্দটি উচ্চারণ করেনি। বরং এক ধরনের সহযোগিতামূলক মনোভাব দেখিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা ও তদ্বিরের মাধ্যমে বিচারিক কাজে অংশগ্রহণ করেছে। বিএনপিও কিছু বলেনি। বরং বিচার প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। সরকার গঠিত হওয়ার ১৬ মাস পরে অর্থাৎ ২০১০ সালের ২৫ মার্চ তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। এ ১৬ মাস ধরে ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য সরকার যতটা না চেষ্টা করেছে তার চেয়ে বেশি চেষ্টা করেছে জামায়াত-শিবির যাতে সরকার ট্রাইব্যুনাল গঠনে বাধ্য হয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন বিচারপতি নিজামুল হক। তিনি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে চেষ্টা করছিলেন, বিচারটিকে আন্তর্জাতিকমানের করার জন্য। এ জন্য তিনি দেশ-বিদেশের নামকরা আইনবিদদের সাহায্য নিয়ে নিজের বিচারিক মন এবং মস্তিষ্ককে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছিলেন। স্কাইপের মাধ্যমে তিনি তার এক বন্ধুর কাছ থেকে প্রায়ই আন্তর্জাতিক আইন এবং কিছু রেফারেন্সের খুঁটিনাটি জেনে নিচ্ছিলেন। এসব বিষয় আলোচনার পাশাপাশি তিনি নিজের একান্ত কিছু ব্যক্তিগত কথাবার্তা এবং আবেগ-অনুভূতির কথাও বলেছেন। জামায়াত-শিবিরের সাহায্যকারীরা কৌশলে সেই স্কাইপে সংলাপ রেকর্ড এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করে নিজামুল হককে ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। যেদিন তিনি পদত্যাগ করলেন সেদিন জামায়াত-শিবিরের বগল বাজানোর শব্দে আর উল্লাস নৃত্যে মনে হলো তারা সবাই যুদ্ধাপরাধের বিচারে মহাবিজয় অর্জন করেছে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রমাদ গুনলাম। আমার মনে হলো জামায়াত-শিবির আগামী দিনে ভয়ঙ্কর ফ্যাসাদে পড়বে। কারণ বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপে সংলাপ দেখে আমার দুটি বিষয় স্পষ্ট মনে হয়েছে। এক. তিনি পরিপূর্ণভাবে জেনেশুনে, বুঝে বিচারকার্য পরিচালনা করতে চেয়েছেন। দুই. তিনি সরকারের বহুমুখী চাপকে বার বার উপেক্ষা করে যাচ্ছিলেন। তার কথাবার্তায় মনে হচ্ছিল তিনি বিচার নিয়ে সরকারের তাড়াহুড়ো পছন্দও করছিলেন না এবং পাত্তাও দিচ্ছিলেন না। কাজেই এমন একজন লোকের বিদায়ে যারা বগল বাজায় তাদের পরিণতি কেমন হবে যা বোঝার জন্য খুব বেশি জ্ঞানগরিমার দরকার হয় না।
বিচারপতি নিজামুল হক এবং ব্রাসেলসে কর্মরত বাংলাদেশি অ্যাটর্নি আহম্মেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপের কথোপকথন জনসম্মুখে প্রকাশ করে দেওয়া যে কত বড় ভুল হয়েছে তা এখন জামায়াত-শিবির হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি ওয়েব পেইজে দেখা যাচ্ছে, তারা সে দেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৎকালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক বলেন, জামায়াতিরা এই কাজে আড়াই কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। সেই লবিস্ট গ্রুপের কারণেই কি না জানি না স্কাইপের ঘটনা প্রথমে প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে পৃথিবী বিখ্যাত ইকোনমিস্ট পত্রিকায়। পরবর্তীতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তা আরও বিস্তারিত প্রকাশ করে এবং সেখান থেকে একই চেইন ধরে মাহমুদুর রহমানের আমার দেশে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ পান এবং বিজয়ের আনন্দে অন্ধ হয়ে জামায়াত-শিবির সর্বশক্তি দিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যে অংশগ্রহণ করে।
২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল প্রথম রায় দেন। জামায়াত-শিবির একটি টুঁ-শব্দও উচ্চারণ করেনি। কিন্তু গোল বাধে এক মাস পরে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে যখন কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় তখন তিনি ভি চিহ্ন দেখিয়ে দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীকে প্রভোক করেন। ফলে সেই দিনই অর্থাৎ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে সৃষ্টি হয় গণজাগরণ মঞ্চের। উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ আর সরকার হয়ে পড়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মানুষের আবেগের কাছে সরকারকে নতিস্বীকার করতে হয়। গণদাবির বিপরীতে সরকার আইসিটি অ্যাক্ট সংশোধন করেন এবং কাদের মোল্লার রায়ের ব্যাপারে উচ্চতর আদালতে আপিল করেন। তার পরের ঘটনা তো সবারই জানা। প্রথমে কাদের মোল্লা; তারপর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, এর পর কামারুজ্জামান, চৌধুরী মঈনউদ্দিন, গোলাম আযম, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, এ কে এম ইউসুফ, মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাসেম আলী এবং এ টি এম আজহার দণ্ডপ্রাপ্ত হন।
উপরোক্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াত-শিবিরের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে আমার মনে কতগুলো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, তারা এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং বিচারব্যবস্থা মানেন কিনা? যদি না মানেন বা মনে করেন সরকারের নির্দেশে বিচার পরিচালিত হচ্ছে তবে উকিল নিয়োগ করে সওয়াল-জওয়াবে অংশ নিচ্ছেন কেন? যদি মানেন, তবে রায় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হরতাল দিচ্ছেন কেন? তারা তো বাংলাদেশে এক ভয়ঙ্কর নজির স্থাপন করছেন! ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল দিচ্ছেন আবার উচ্চতর আদালতে আপিলও করছেন। আবার সেই আপিলের রায় তাদের বিরুদ্ধে গেলে পুনরায় হরতাল দিচ্ছেন। দুনিয়ার কোনো দেশে এমন ঘটনা কোনো দিন ঘটেনি। তাদের উচিত কিউবা এবং ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে নিয়ে গবেষণা করা। কিন্তু তারা তো সেটা করবেন না কারণ ওটা করতে তো বুদ্ধি, সাহস এবং অনুপম নেতৃত্বের যোগ্যতা লাগে আর লাগে হুঁশ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, জামায়াত-শিবিরের হুঁশ নেই অথবা তাদের হুঁশ আছে ঠিকই কিন্তু পুরো জাতিই হয়তো বেহুঁশ হয়ে পড়েছে।
জামায়াত-শিবিরকে নিয়ে আমি কোনো দিনই তেমন একটা ভাবিনি। মাঝে-মধ্যে তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রগতিশীলদের বিরূপ সমালোচনা আমার মনকে তাদের ব্যাপারে বিষিয়ে তুলেছিল। এর বিপরীতে জামায়াতকে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের নিরন্তর চেষ্টারত রাজনৈতিক দলগুলোর বেহায়াপনা এবং মোনাফেকী আচরণ দেখে যারপরনাই বেদনাহত হতাম। স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের পত্তন, বেড়ে ওঠা এবং স্থায়িত্ব লাভের দায় এড়াতে পারবে না কেউ। '৭৫-পরবর্তী সব সরকারই তাদের টানাটানি করেছে এবং এখনো যে করছে না সে কথা কেউ বুকে হাত দিয়ে বলছে না। সার্বিক এ অবস্থায় জামায়াত কী করেছে এবং নিজেদের সতীত্ব হারিয়ে কতটা অপরাধ কিংবা ভুল করেছে তা যদি তারা বিশ্লেষণ না করে তবে আগামী দিনে তাদের অস্তিত্বই থাকবে না।
আমার প্রথমেই মনে হয় জামায়াত তাদের নিজেদের অবস্থান বুঝতে পারেনি এবং পারছে না। তারা ঘৃণা, জনরোষ, শত্রুতা এবং প্রতিযোগিতার অর্থটা হৃদয়ঙ্গম করতে পারেনি। বাংলাদেশের অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক হিংসা, ক্রোধ, প্রতিযোগিতা এবং শত্রুতা রয়েছে। কিন্তু তারা কেউ কাউকে রাজনৈতিক কারণে ঘৃণা করে না। অন্যদিকে জামায়াতবিরোধীরা জামায়াতকে প্রবলভাবে ঘৃণা করে এবং এদের সংখ্যা দেশের রাজনৈতিক সচেতন লোকদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি। এই বিশাল জনগোষ্ঠী জামায়াতিদের সঙ্গে সামাজিক, পারিবারিক, বৈবাহিক এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক করতে ইচ্ছুক নন। বাংলাদেশের কোনো স্বনামধন্য কবি, সাহিত্যিক, লেখক, অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ কিংবা আইনজীবী কোনো নামকরা জামায়াত নেতার ছেলে-মেয়ের সঙ্গে নিজেদের ছেলে-মেয়ের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করবেন না। কিংবা কেউ আনন্দচিত্তে বলবে না ওমুক জামায়াত নেতা আমার আবাল্য ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
এই যে সামাজিক ঘৃণা এবং অস্পৃশ্যতার বিষয়টি কিন্তু কমছে না। বরং বাড়ছে। ১৯৭১ বা ৭২ সালে জামায়াতের প্রতি মানুষের যে ক্ষোভ, ঘৃণা এবং ক্রোধ ছিল তা ২০১৪ সালে এসে অনেক বেড়ে গেছে। জামায়াত হয়তো বলবে তাদের সংখ্যাও তো বেড়েছে। বেড়েছে ধন সম্পদ, চাকচিক্য এবং সাংগঠনিক ভিত্তি। কিন্তু যে হারে তাদের অজনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে জনপ্রিয়তা বাড়েনি। এখন প্রশ্ন হলো এটা কেন হলো?
আগেই বলেছি জামায়াত নিয়ে আমি কোনো দিন তেমন একটা ভাবিনি। কিন্তু জেলে যাওয়ার পর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেশার পর দলটির অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয় সম্পর্কে আন্দাজ করার সুযোগ হয়েছিল। জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে একান্ত নির্জনে আলাপ-আলোচনার সময় তাদের হতাশা, ভুলত্রুটি এবং পরিকল্পনাগুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি। পরবর্তীতে জেল থেকে বের হওয়ার পর জামায়াতের অনেক নেতা-কর্মীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ এবং কথাবার্তার ফলশ্রুতিতে দলটি সম্পর্কে আমার এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আমার মনে হয় এক অনির্ধারিত গন্তব্যে অনেকটা পরিকল্পনাহীনভাবে জামায়াত-শিবির এগুচ্ছে। তারা জানে না তারা কী করছে! তারা এও জানে না তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? অনেকটা বেহুঁশ অবস্থায় তারা দিকভ্রান্ত পাখির ন্যায় মহাশূন্যে এলোপাতাড়ি উড়ছে, কেবল উড়ছে এবং দুনিয়ায় ফেরত আসার পরিবর্তে ঊধর্্বলোকে জান্নাতের সন্ধান করছে। নিজেদের ভেদ বুদ্ধি কোরআন হাদিস ব্যবহার না করে তারা অন্য কিছুর সহযোগিতায় চোখ বন্ধ করে শুধু ছুটছে, অজানা এক গন্তব্যের দিকে ছুটছে। এ গন্তব্যের শেষ প্রান্তে রয়েছে কেবলই পরাজয়, কেবলই অপমান এবং নিশ্চিত এক ধ্বংসযজ্ঞ। সব ভাষাতেই একটি জনপ্রিয় প্রবাদ রয়েছে, সেটি হলো- যারা সৌভাগ্য এবং সুসময়কে চমৎকারভাবে কাজে না লাগায় তারাই দুর্ভাগ্যের কবলে পড়ে। আর যারা দুর্ভাগ্যকে চিহ্নিত করতে পারে না তাদের আমৃত্যু সেই দুর্ভাগ্যের তাড়নায় লাঞ্ছিত; অপমানিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই কবরে যেতে হয়। জামায়াতের লোকজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় আমার কেবলই মনে হয়েছে তারা সুসময়টি যেমন কাজে লাগাতে পারেনি তেমনি দুর্ভাগ্যকে চিহ্নিত করে সেখান থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে যা হওয়ার হয়েছে এবং আগামী দিনে আরও হবে।
জামায়াত-শিবির একবারও চিন্তা করেনি কেন লোকজন তাদেরকে ঘৃণা করে। তারা বরং উল্টোটি চিন্তা করে সকাল-বিকাল দেশ-জাতি এবং নিজেদের তকদিরের ওপর অভিমানী হয়ে হা-হুতাশ করে। তারা ভাবে এত নামাজ পড়ি, কোরআন পড়ি, সৎ জীবনযাপন করি অথচ লোকজন আমাদের নেতা না মেনে মানছে যত্তসব বেনামাজি, নাফরমান এবং অসৎ লোকদের। তারা ভুলেও একবার চিন্তা করে না ১৯৭১ সালের সব নির্মমতা, অপরাধ, লুটপাট, ধর্ষণ, গুম, হত্যা ইত্যাদির জন্য লোকজন তাদেরই দায়ী করে। পাকিস্তানি আর্মি, মুক্তিযোদ্ধাদের আন্তঃবিরোধ, ভারতীয় বাহিনীর ভুল টার্গেট এবং অন্যান্য যুদ্ধাপরাধী সব পর্দার অন্তরালে চলে গেছে। দৃশ্যপটে শুধু জামায়াত আর তাদের একটার পর একটা ভুল পদক্ষেপ, সিদ্ধান্ত এবং কর্ম বার বার জাতির সামনে এ কথাই প্রমাণ করেছে '৭১-এর সব কিছুর মূলে কেবল জামায়াতই দায়ী। জামায়াত তাদের সুসময়ে যেমন জনমতকে পাত্তা দেয়নি তেমনি বর্তমানের দুঃসময়ে একবারও অনুতপ্ত না হয়ে বরং বার বার বলছে তাদের প্রতি জুলুম করা হচ্ছে।
আমার মাথায় ঢুকে না, শিবির কেন জামায়াতের '৭১-এর দায় মাথায় নিচ্ছে। '৬০-র দশকের চিন্তা-চেতনায় আবদ্ধ জরাজীর্ণ বৃদ্ধদের অন্যায় হুকুম, কুকর্মের বোঝা এবং পশ্চাৎপদ নেতৃত্ব দ্বারা তরুণ প্রজন্মের আধুনিকতা যদি পরিচালিত হয় তবে শিবির ধ্বংস হবে না তো কি হবে। যে মানের ছেলেমেয়েরা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তাতে জামায়াতের বৃদ্ধদের উচিত আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে দল, দেশ ও জাতিকে দায়মুক্ত করা। আমি এখনো ভেবে পাই না কেন কাদের মোল্লা ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর ভি চিহ্ন দেখাতে গেলেন? গোলাম আযম সারা জীবন চুপচাপ থাকলেন, কোনো দিন মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিলেন না বা দুই কলম লিখলেন না সেই তিনি হঠাৎ ২০১০ সালে এসে দম্ভ করলেন কেন? টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়ে বললেন, '৭১-এ তিনি সঠিক ছিলেন, '৭১ নিয়ে তার কোনো অনুতাপ নেই, তার কিছু হবে না, কেউ তার কিছু করতে পারবে না! আমি জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে বলব, গ্রেফতার হওয়ার আগে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের কথাবার্তা, হম্বিতম্বি এবং অহংকারমূলক আচরণ মূল্যায়ন করার জন্য। তারা কি সরকারকে প্রভোক করেনি তাদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য?
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল যুদ্ধাপরাধের বিচার। জয়লাভ এবং সরকার গঠনের পর সরকারের কর্তাব্যক্তিরা হরহামেশাই যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যু নিয়ে নানামুখী প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছিলেন। প্রতিদিনই সংবাদপত্র এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো এ ব্যাপারে সরকারকে রীতিমতো জ্বালাতন করত। সরকার কিন্তু বহুদিন চেষ্টা করেছিল বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য না করার জন্য। সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেন, বিচার হবে প্রতীকী অর্থে। অন্যদিকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, 'ওদের আর কি বিচার করব! ওদের তো বিচার হয়েই গেছে। আমাদের সুবিশাল জয়ই ওদের সবচেয়ে বড় বিচার।' সরকারের এই মনোভাবের সুফল জামায়াত-শিবির গ্রহণ করতে পারেনি। বরং সবটাই করেছে উল্টো। তারা দগদগে কাটা ঘায়ে লবণের ছিঁটা দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আবহমান বাংলার আবেগ-অনুভূতিতে পদাঘাত করেছে। মিডিয়ার লোকজন যখন যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উত্তেজনাকর কিছু পেল না তখন জেঁকে ধরল জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে। প্রতিদিন ২/১ জন অভিযুক্ত জামায়াত নেতা বা বিএনপি নেতার বক্তৃতা, বিবৃতি, আত্দপক্ষ সমর্থনের খবর মিডিয়ায় প্রকাশিত হতে থাকল। এসব কথাবার্তায় তারা বলতে চেষ্টা করল, ১৯৭১ সালে তারা কোনো অন্যায় এবং অপরাধ করেনি। তাই সরকার তাদের কিছুই করতে পারবে না। ২/১ জন তো রীতিমতো অহংকার করে সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল, পারলে বিচার করেন তো।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের উল্টাপাল্টা বক্তব্যের কারণে তাদের বিরুদ্ধে জনমত প্রবল হয়ে উঠল। সরকার প্রমাদ গুনল। সরকারের সহযোগী বাম সংগঠনগুলো সরকারকে যুদ্ধাপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করার জন্য প্রবল চাপ দিতে থাকল। বিভিন্ন টকশো, সভা, সমিতি এবং সেমিনারে হররোজ সরকারের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করা শুরু করল। এ অবস্থায় সরকার জাতিসংঘের সাহায্য চাইল। সে মতে ইউএনডিপি আইসিটি অ্যাক্ট প্রণয়নে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল এবং ২০০৯ সালের শেষে এসে ১৯৭৩ সালের আইনটি সংশোধন হলো। এ আইন প্রণয়নে জাতিসংঘের পাশাপাশি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও সাহায্য করেছিল। তারা তিনটি রেজুলেশন পাস করে আইনটিকে সমর্থন জানিয়ে বলে যে, এর মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ গুণগতমান বজায় থাকবে। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনও আইনটি সম্পর্কে লিখিতভাবে ভূয়সী প্রশংসা করে। আইনের অধীন বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে জামায়াত-শিবির প্রথম থেকেই টুঁ-শব্দটি উচ্চারণ করেনি। বরং এক ধরনের সহযোগিতামূলক মনোভাব দেখিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা ও তদ্বিরের মাধ্যমে বিচারিক কাজে অংশগ্রহণ করেছে। বিএনপিও কিছু বলেনি। বরং বিচার প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। সরকার গঠিত হওয়ার ১৬ মাস পরে অর্থাৎ ২০১০ সালের ২৫ মার্চ তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। এ ১৬ মাস ধরে ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য সরকার যতটা না চেষ্টা করেছে তার চেয়ে বেশি চেষ্টা করেছে জামায়াত-শিবির যাতে সরকার ট্রাইব্যুনাল গঠনে বাধ্য হয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন বিচারপতি নিজামুল হক। তিনি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে চেষ্টা করছিলেন, বিচারটিকে আন্তর্জাতিকমানের করার জন্য। এ জন্য তিনি দেশ-বিদেশের নামকরা আইনবিদদের সাহায্য নিয়ে নিজের বিচারিক মন এবং মস্তিষ্ককে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছিলেন। স্কাইপের মাধ্যমে তিনি তার এক বন্ধুর কাছ থেকে প্রায়ই আন্তর্জাতিক আইন এবং কিছু রেফারেন্সের খুঁটিনাটি জেনে নিচ্ছিলেন। এসব বিষয় আলোচনার পাশাপাশি তিনি নিজের একান্ত কিছু ব্যক্তিগত কথাবার্তা এবং আবেগ-অনুভূতির কথাও বলেছেন। জামায়াত-শিবিরের সাহায্যকারীরা কৌশলে সেই স্কাইপে সংলাপ রেকর্ড এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করে নিজামুল হককে ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। যেদিন তিনি পদত্যাগ করলেন সেদিন জামায়াত-শিবিরের বগল বাজানোর শব্দে আর উল্লাস নৃত্যে মনে হলো তারা সবাই যুদ্ধাপরাধের বিচারে মহাবিজয় অর্জন করেছে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রমাদ গুনলাম। আমার মনে হলো জামায়াত-শিবির আগামী দিনে ভয়ঙ্কর ফ্যাসাদে পড়বে। কারণ বিচারপতি নিজামুল হকের স্কাইপে সংলাপ দেখে আমার দুটি বিষয় স্পষ্ট মনে হয়েছে। এক. তিনি পরিপূর্ণভাবে জেনেশুনে, বুঝে বিচারকার্য পরিচালনা করতে চেয়েছেন। দুই. তিনি সরকারের বহুমুখী চাপকে বার বার উপেক্ষা করে যাচ্ছিলেন। তার কথাবার্তায় মনে হচ্ছিল তিনি বিচার নিয়ে সরকারের তাড়াহুড়ো পছন্দও করছিলেন না এবং পাত্তাও দিচ্ছিলেন না। কাজেই এমন একজন লোকের বিদায়ে যারা বগল বাজায় তাদের পরিণতি কেমন হবে যা বোঝার জন্য খুব বেশি জ্ঞানগরিমার দরকার হয় না।
বিচারপতি নিজামুল হক এবং ব্রাসেলসে কর্মরত বাংলাদেশি অ্যাটর্নি আহম্মেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপের কথোপকথন জনসম্মুখে প্রকাশ করে দেওয়া যে কত বড় ভুল হয়েছে তা এখন জামায়াত-শিবির হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি ওয়েব পেইজে দেখা যাচ্ছে, তারা সে দেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৎকালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক বলেন, জামায়াতিরা এই কাজে আড়াই কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। সেই লবিস্ট গ্রুপের কারণেই কি না জানি না স্কাইপের ঘটনা প্রথমে প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে পৃথিবী বিখ্যাত ইকোনমিস্ট পত্রিকায়। পরবর্তীতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তা আরও বিস্তারিত প্রকাশ করে এবং সেখান থেকে একই চেইন ধরে মাহমুদুর রহমানের আমার দেশে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ পান এবং বিজয়ের আনন্দে অন্ধ হয়ে জামায়াত-শিবির সর্বশক্তি দিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যে অংশগ্রহণ করে।
২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল প্রথম রায় দেন। জামায়াত-শিবির একটি টুঁ-শব্দও উচ্চারণ করেনি। কিন্তু গোল বাধে এক মাস পরে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসে যখন কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় তখন তিনি ভি চিহ্ন দেখিয়ে দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীকে প্রভোক করেন। ফলে সেই দিনই অর্থাৎ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালে সৃষ্টি হয় গণজাগরণ মঞ্চের। উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ আর সরকার হয়ে পড়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মানুষের আবেগের কাছে সরকারকে নতিস্বীকার করতে হয়। গণদাবির বিপরীতে সরকার আইসিটি অ্যাক্ট সংশোধন করেন এবং কাদের মোল্লার রায়ের ব্যাপারে উচ্চতর আদালতে আপিল করেন। তার পরের ঘটনা তো সবারই জানা। প্রথমে কাদের মোল্লা; তারপর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, এর পর কামারুজ্জামান, চৌধুরী মঈনউদ্দিন, গোলাম আযম, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, এ কে এম ইউসুফ, মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাসেম আলী এবং এ টি এম আজহার দণ্ডপ্রাপ্ত হন।
উপরোক্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াত-শিবিরের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে আমার মনে কতগুলো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, তারা এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং বিচারব্যবস্থা মানেন কিনা? যদি না মানেন বা মনে করেন সরকারের নির্দেশে বিচার পরিচালিত হচ্ছে তবে উকিল নিয়োগ করে সওয়াল-জওয়াবে অংশ নিচ্ছেন কেন? যদি মানেন, তবে রায় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হরতাল দিচ্ছেন কেন? তারা তো বাংলাদেশে এক ভয়ঙ্কর নজির স্থাপন করছেন! ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল দিচ্ছেন আবার উচ্চতর আদালতে আপিলও করছেন। আবার সেই আপিলের রায় তাদের বিরুদ্ধে গেলে পুনরায় হরতাল দিচ্ছেন। দুনিয়ার কোনো দেশে এমন ঘটনা কোনো দিন ঘটেনি। তাদের উচিত কিউবা এবং ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে নিয়ে গবেষণা করা। কিন্তু তারা তো সেটা করবেন না কারণ ওটা করতে তো বুদ্ধি, সাহস এবং অনুপম নেতৃত্বের যোগ্যতা লাগে আর লাগে হুঁশ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, জামায়াত-শিবিরের হুঁশ নেই অথবা তাদের হুঁশ আছে ঠিকই কিন্তু পুরো জাতিই হয়তো বেহুঁশ হয়ে পড়েছে।
লেখক : রাজনীতিক।
রেটিং দিন :
রেটিং দিন :
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)