সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৮

শর্শদীর মোহাম্মদ অালীর প্রাচীন মসজিদ: তিন গম্বুজ মসজিদ।

মুঘল নায়েব, মোহাম্মদ আলী চৌধুরী ১৭৬২ সালে ফেনী অঞ্চলে নিয়োগপ্রপ্ত হন। তার সময়কালে তিনি এ এলাকায় অনেক স্থাপনা তৈরি করেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ফেনীর এ মসজিদটি। ১৭৯০ সালে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তার এ অঞ্চলের জমিদারি হারান।

অবকাঠামো

তিন গম্বুজ বিশিষ্ঠ এ মসজিদটি শর্শদী মাদ্রাসার ভেতর অবস্থিত। মসজিদের শিলালিপি অনুসারে, এর নির্মাণকাল ১৬৯০ থেকে ১৬৯১ সাল। তবে শিলালিপি থেকে আর কোন বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মালীকানাধীন এ মসজিদটিতে বর্তমানে প্রাচীন দেয়ালের উপর নতুন করে রং করা হয়েছে।

মূল মসজিদের সামনে একটি লালচে রং করা প্রবেশপথ রয়েছে। প্রবেশ পথ এর ভেতরে রয়েছে সমতল খালি জায়গা এরপরই মূল মসজিদের স্থাপনাটি অবস্থিত। মূল গম্বুজের উপর কালো আকৃতির একটি লম্বা নকশাকৃত মিনারেরমত উঁচু অংশ রয়েছে। যার চারপাশে ইট বসিয়ে গোলাকৃতিতে সাজানো হয়েছে। এছাড়াও পূর্ব দিকের দেয়ালে একটি বড় প্রবেশপথ ও তার দুপাশে খিলানের মতন নকশাকরা স্থাপত্যশৈলী রয়েছে।

রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৮

একটি মৃত্যু সনদ : জাকির রুবেল

_____________একটি মৃত্যু সনদ______________

একটা মৃত্যু সনদ।যেন তেন সনদ নয় একেবারে বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় মেডিকেল কলেজের দেয়া মৃত্যু সনদ। সনদটা হাতে নিয়ে স্থির দাঁড়িয়ে রয়েছেন নিজাম সাহেব। দাঁড়িয়ে থাকা নয় ঢলে পড়ে যাবেন এমন অবস্থা। হাটতে পারছেন না। পা যেন অচল, অসাঢ়, নিষ্কৃয়। মনে হচ্ছে সামনে যেন কেয়ামতের অন্ধকার। নিকশ কালো অন্ধকার। মাথাটা ঘুরছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মৃত্য রেজিস্টার রুম থেকে কোন মতে বের হয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নামলেন। অব্যবহৃত ঔষধগুলো ফেরত দিয়ে অাবারো নিউরো সার্জারী বিভাগের উদ্দেশ্য রওনা দিলেন তিনি। দীর্ঘ দশ দিনে হাসপাতালটা কেমন যেন পরিচিত হয়ে গেছে। মনে হয় অনেক দিনের পরিচয়। চেনা সব অলিগলি। বারান্দা ধরে এগিয়ে চলছেন। কানে বাজছে রোগীদের অাত্মচিৎকার। বাইরে রোগীর স্বজনদের উদ্বেগ উৎকন্ঠা।

হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলেন একটা ছোট্ট শিশুর হাসির শব্দ পেয়ে। একজন মা খেলছেন তার শিশু বাচ্ছাটার সাথে। বার বার অাদর করছেন। চুমু খাচ্ছেন বাচ্ছাটার কপালে, মুখে। বাচ্ছাটা হেসেই শেষ। বাচ্ছাটার দিয়ে অপলক তাকিয়ে আছেন নিজাম সাহেব। হঠাৎই বাচ্চাটার মা নিজাম সাহেবকে দেখে বাচ্চাটাকে অাঁচলে ঢেকে ফেললেন। দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো নিজাম সাহেবের। যদিও এতক্ষন কোন কান্না ছিলনা মুখে। বাচ্ছাটার কথা মনে হতেই হাউমাউ করে উচ্চস্বরে বাচ্চা ছেলেদের মত কান্না করতে শুরু করলেন। মাথায় হাত দিয়ে এবার হাসপাতালের বারান্দায় বসেই পড়লেন।

কতক্ষণ সময় পার হয়ে গেল ভুলেই গেলেন নিজাম সাহেব। হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন সকাল দশটা বেজে গেছে। উঠে দাঁড়ালেন। অনেকটা দৌড়ে গেলেন নিউরো সার্জারি বিভাগে ক্ষত বিক্ষত পড়ে থাকা নিজের স্ত্রীকে দেখতে। টানা সার্জারীর দকল এবং এ বিভাগ ও বিভাগে টেনে নিতে নিতে সে ক্লান্ত, ভীষন ক্লান্ত। ফারাবীকে খাওয়াতে খাওয়াতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে। যে এখনো জানেনা তার কলিজার টুকরো ফারবী অার নেই। এই অাব্দুল্লাহ অাল ফারাবী নাম সিলেকশন নিয়ে যে কত রাত, কত দিন, কত বই ঘাটাঘাটি, কতবার ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে খুজে বের করেছেন নিজাম সাহেব ও তার স্ত্রী মিলি। কত রাগ ছিল তার উপর কেন নাম সিলেক্ট করতে এত দেরি? কেন নামের কোন বই অানছেনা। এই নিয়েতো একদিন কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিল তার সাথে।

কত স্বপ্ন, কত অাকাঙ্খা, কত অাবেগ,কত ভালোবাসা। কত রাত যে কেটে গেছে বাচ্চাদের পোশাক ও খেলনা খুজতে খুজতে অনলাইনে। সেগুলো কালেক্ট করে স্বামীকে মেসেঞ্জারে পাঠাতো অার বলতো "কোনটা সুন্দর, দেখোতো? এটার অর্ডার দাও ওটার অর্ডার দাও। অারো কত কি?
ফুটিয়ে পানি পান ছিল তার চরম অনভ্যাস কিন্তু ফারাবীর জন্য সেটাও অভ্যাসে পরিনত করেছিল সে। মশারি টাঙানো ছিল তার কাছে পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন কর্ম কিন্তু নিজের অসুখ হলেতো ফারাবীরও অসুখ হবে তাই সে এটাও অায়ত্ব করে নিয়েছিল। নিজাম সাহেবের অাজ সবচাইতে বেশি মনে পড়ছে একটা ঝগড়া কথা।

ফারবী কোথায় জন্ম নিবে এ নিয়েতো নিজাম সাহেবের সাথে তার মায়ের কত ঝগড়া হয়েছিল। মা বলে গ্রামে হবে। নিজাম সাহেব বলেন শহরে সুযোগ সুবিধা ভালো, ভালো ডাক্তারও পাওয়া যাবে কাছাকাছি। একদিনতো নিজাম সাহেবেররনমার সাথে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও হয়ে গিয়েছিল। মা শহরের বাসায় অাসাই বন্ধ করে দিয়ে ছিলেন।
ফারাবীর খালাতো ভাই ফারাবীর জন্যতো অাগেই মার্কেটিং করে রেখেছিল। ফারাবীর খালা তার জন্য কাথা সেলাই করে রেখেছেন। ফারাবীর দাদাতো নাতী হবে বলে খুশিতে অাত্মহারা।অাগেই বলে রেখেছেন কত কেজি মিষ্টি খাওয়াবেন। বড় ছেলের বড় নাতি বলে কথা। ফারবীর মামাতো অাগেই বলে রেখেছেন ফারবীর জন্য কিছু যেন না কিনি, তিনি সবকিছু বিদেশ থেকে পাঠাবেন বাগীনার জন্য।

একে একে সব মনে পড়ে যাচ্ছে অাজ নিজাম সাহেবের। প্রথমে কাকে ফোন করে জানাবেন এমন সংবাদটা। এ সংবাদ যে কেও অাশা করেনি। ঘুর্নাক্ষরে কেওতো কল্পনাও করেনি এমনটা ঘটবে। দু একজনকে ফোন করতেই কান্নায় মোবাইল ভারী হওয়ার উপক্রম। খবর শুনে দাদা দাদীতো সাথে সাথেই বেহুশ। চারদিক থেকে কল অাসছে। কারো কলই অার রিসিভ করছেন না তিনি। সবার একই জিজ্ঞাসা?উত্তর জানা নেইই তার।

ফারাবীর অাকার সকল স্বাভাবিক বাচ্ছাদের থেকে একটু বড়ই ছিল। কেমন একটা অদ্ভুদ মায়া ছিল তার মুখে। সাধারন বাচ্ছারা অনেক দেরিতি হাসলেও সে কিন্তু ২য় দিনই সে হেসেছিল। বাবার হাতের অাঙুলটা মুষ্টি করে ধরে রেখেছিল চলে যাবার অাগের দিন। মাত্র অাট দিনের হায়াতে সে শত বছরের মায়া দিয়ে গিয়েছিল। হাসিটা ভীষন সু্ন্দর ছিল বিধায় হয়তো মহান রবের পচন্দ হয়েছিল। তাইতো তিনি জান্নাতের মেহমান করে ফারবীকে নিয়ে গেলেন।

এম্বুল্যান্সের দীর্ঘ যাত্রার সমময় মিলি প্রিয় সন্তানকে বুকে রেখে তখনো ঘুমোচ্ছে। ঘুম যেন মৃত্যু ঘুম। জাগ্রত থাকলেতো কতবার বেহুশ হতো তার ইয়ত্তা নেই। গাড়ী থেকে নেমেই নিজাম সাহেব বাড়া দেয়ার জন্য পকেটে হাত দিলেন। মানিব্যাগটা উদাও। দৌড়াদুড়ির কোন ফাঁকে যে পকেটমার তার তার কাজ করে গেছে খবর নেই। পকেটের সবকিছু নিয়ে গেলেও পড়ে রইলো মৃত্যু সনদটি। সেই সনদ যা এলোমেলো করে  সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে তাদের সকল অাশা ভরসাকে। বাড়ীতে লোকজনের প্রচুর ভীড়। কান্নার অাওয়াজ। ১২টায় জানাজা। নিজাম সাহেব মৃত্যু সনদটা হাতে নিয়ে  কপালে হাত দিয়ে ঘরের দরজার সামনে বসে গেলেন।তার স্বপ্নের ফারবীর জন্ম সনদ পাওয়ার অাগেই যে মৃত্যু সনদটা পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

শনিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সিনহা বাবুর বইয়ের অনুবাদ লিংক

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার "A Broken Dream”(ক্ষতিগ্রস্হ স্বপ্নের) বইয়ের পুরো বাংলা অনুবাদ

সবাই বইটি নিচের লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

অনুবাদ সম্পাদনায়ঃ সালাউদ্দিন আইয়ুবী
সার্বিক সহযোগিতায় : রাজ্ হাসান

https://l.facebook.com/l.php?u=https%3A%2F%2Fcdn.fbsbx.com%2Fv%2Ft59.2708-21%2F41947768_255637018627718_1330690759334035456_n.pdf%2F%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A8Surendra-Kumar-Sinha.pdf%3F_nc_cat%3D0%26oh%3De52ff144de3121b748aa92ba4e83661a%26oe%3D5BA8C5FF%26dl%3D1&h=AT30Gd2M9Inbioe6YmKLoM-QLHFvnly9h1o8woV3ARzbtCcWeiuuPOapxH5oyLK4Fd_edBxbCBhJud60LFDgp8TEb9hnH6ZYcr5LjbKzaapFoozD2lfG5yEVqWrC8cSX4RzuYs9kKZtM7TPkxOlb_IATNjw3MJjythVvPMD-_j5OhR7LyFM11cFGDn5GPbj9VDgiVy5sqFnnCUMG8v-0M_sQRvu-naqy4DHVjM4_TbuX6TwYdzYe43pogsw-UE5IlfgPM_lt88OsfLu-LYXGJ08extTubP3miEis6L4ljjhffw4iNhoQmmI5rx1GP6XGImEQj6XxopvL0sg-qMeelZAy53rreopv0XF8eoYsF8LvgUmyZ1hOSskFF0DmVCxHM9M7rzkJSwKmq59BXY-o0zs2Gg6slRsZ

মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই, ২০১৮

রেল স্টেশন : ফারজানা হোসেন ফারজু

রেইল ষ্টেশন

ষ্টেশন এর প্রধান দরজা দিয়ে ঢুকতেই দেখি দুপাশে রেইল কর্মকর্তা কর্মচারী দের কক্ষ। দু পা এগিয়ে গেলাম। সারী সারী ব্যাঞ্চ বসানো। ব্যাঞ্চে বসে কেউ অপেক্ষা করছে ট্রেন আসার। চোখে অজানা সুন্দর স্বপ্ন।কেউ আপন জনের কাছে যাবে। কেউবা আপন জনকে ছেড়ে যাবে। তাদের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে পুলিশ বাহিনী। কাধে বন্ধুক, পায়ে ব্যুট জুতো, গায়ে খাকি পোষাক,পোষাকে বুকের উপর দিয়ে তাদের নাম খোদাই করা ব্যাচ লাগানো। প্রশাসনিক ব্যাক্তি বলে কথা। তারা তো আবার জনগণের বন্ধুও বটে।তারা পায়চারী করছে ষ্টেশন এর দুপাশে। কয়েক গজ পর পর বাহারি খাবারের দোকান। দোকানিরা মোটামুটি ভালই বেচাকেনা করছে। রেইল লাইনের দুপাশে কিছু মানুষ শুয়ে বসে রয়েছে। পুরাতন বগি গুলাও পড়ে রয়েছে রেইল লাইনের পাশে পরিচর্যার অভাবে। সন্ধ্যার পরে নারীরাও শুয়ে পড়ে রেইল লাইনের পাশে। আমার হঠাৎ করে চোখ পড়ল একটা ছোটখাটো ঝগড়ার দিকে। ঝগড়া হচ্ছিল একজন৩৫- ৪০ বয়স এমন মহিলা এবং ১৬-২০ বছর বয়স এক ছেলের মধ্যে। মহিলার পাশে একটি ১৩-১৪ বছরের মেয়ে।দাঁড়িয়ে ঝগড়ার কথা গুলা শুনছিলাম।কথা গুলা ছিল এমন -"২০ টাকা দিব
                          -না যত বলছি তত
                     -কম হলে থাক
                      -আচ্ছা ৫০ ই দিব।"
কথা শুনে ভাবলাম মনে হয় কিছু কেনা বেচা করছে। ভাল করে লক্ষ করে দেখি দুজনের হাতেই কিছু নেই। আমি চিন্তায় পড়ে যায় কি বেচা কেনা হচ্ছে? পরক্ষনে দেখি বয়ষ্ক মহিলাটি শিশুপ্রায় মেয়েটিকে বলছে- এই যা। মেয়েটি মুচকি হেসে চলে গেল পুরাতন বগির ভিতরে। পেছন পেছন ছেলেটিও। আমি আবার হাটতে থাকি। দেখি কিছু মানুষ রান্না করা খাবার বিক্রি করছে। কেউ আবার পুরাতন কাপড় চোপড় ও বিক্রি করছে। দূরে ট্রেনের আলো দেখা যাচ্ছে। উচ্চ আওয়াজ দিয়ে আমার সামনে হাজীর হলো একটি ট্রেন। কিছুক্ষন থামলো। অনেক লোক নামলো কঠিন বাস্তবতার স্বীকার হয়ে।আবার অনেকেই উঠছে অজানা সুন্দর স্বপ্নের উদ্দেশ্যে। আমি কিছুদূর পর্যন্ত হেটে আবার ফিরে আসি। ও একটা কথা বলাই হয়নি। আমি একা ছিলাম না সেখানে ছিলাম আমরা।আসার পথে দেখি বগি থেকে এলোমেলো অবস্থায় নামছে সেই ছেলেটি। খানেক পর মেয়েটিও নামছে। আমি বিষ্মিত হলাম। ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম সেখানে। আমার জীবনসঙ্গী আমার কাধে হাত রেখে বলল- কি হলো দাঁড়িয়ে রইলে যে? ওর ডাকে আমার ঘোর কাটল। আমি ওর দিকে অবুজ দৃষ্টি তে তাকিয়ে বললাম-এ থেকে কি পরিত্রাণ নাই? আমরা কি কিছু করতে পারিনা? ও বলল- আমাদের একার পক্ষেই কি সম্ভব? আমাদের কথোপকথন এর মাঝখানে একজন পুলিশ বলল -আপনারা কি যাত্রি? আমরা বললাম না। পুলিশ বলল তাহলে বেশিক্ষন হাটবেন না। যাত্রী ছাড়া ঢুকা নিষেধ।  আমি পুলিশ  লোকটার কথা শুনে উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম।

বৃক্ষ ও মানব : ফারজানা হোসেন ফারজু

বৃক্ষ ও মানব

প্রতিদিন খুব ভোরেই উঠে যান রহমান সাহেব। তাড়াহুড়ো করে নাস্তা খান তিনি।সখের টবে লাগানো গাছ টাতে পানি দিতে কখনো ভুল করেন না। কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হো হো করে গাড়ি নিয়ে অফিস যান। বাসায় নতুন বৌ লিলি ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।  অফিস থেকে বারবার ফোন করে লিলির খোজ নেন।মাঝে মাঝে গাছটির কথাও জিজ্ঞাস করেন।" রোদ পড়েছে কিনা? টব টা কাত পড়ে গেল কি না?" লিলি প্রায়ই বিরক্ত হয়ে যায়। অফিস থেকে বাসায় এসেই শুরু করে জেরা। লিলি পরিমাণ মত পানি পান করল কিনা? ঔষধ খাচ্ছে তো? হেটেছে কিনা? রাতে শুতে গেলেই লিলির বকবক শুরু হয়। আমাদের বাবুটা কেমন হবে? দেখতে কার মত? তোমার নাকি আমার? কি নাম দেব তার? এটা কি ছেলে না মেয়ে? কদিন পর থেকে লিলির মাথায় নতুন ভুত চেপেছে। বাবুর নাম ঠিক করবে। দুজনে মিলে সুন্দর একটা নাম ঠিক করল। অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত দিন টি এলো। লিলির কোল জুড়ে সুন্দর ফুটফুটে একটা ছেলে এলো। লিলি কে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি তে ব্যাস্ত রহমান। এক সপ্তাহ তারা হাসপাতালে ছিল। এবার তাদের প্রথম কাজ বাবুর নাম রাখা। মা বাবার পছন্দের নাম টি রাখল। পরদিন রহমান ও লিলির ছেলেটি তাদের রেখে চলে গেল। ছেলের সবকাজ শেষ করে বাসায় ফিরল তারা। ঘর দোর ঘুছিয়ে বারান্দায় আসে লিলি। গাছ টা কেমন শুকিয়ে গেছে।  গাছে পানি দিল কিন্তু কোন পরিবর্তন দেখলোনা। এভাবে এক সপ্তাহ দিল ভাবলো অনেক দিনের পানির অভাবে শুকিয়ে গেছে। একদিন পাশের বাসার এক ভাবি এসে বলল -গাছ টা তো মরে গেছে। পানি দিলেও নাকি লাভ হবে না। বারান্দা পরিষ্কার করার জন্য গাছটা ফেলে দিল।

কাকতালীয় : ফারজানা হোসেন ফারজু

....................কাকতালীয়................ F
হঠাৎ কোন এক ব্যাস্ত দুপুরে শিমুল ও বকুলের পরিচয় হয় তাদেরই এক বন্ধুর বাসায়। বেশ কিছুক্ষণ আলাপ হয় দুজনের।বিদায় বেলায় তারা একে অপরের সাথে ফোন নাম্বার বিনিময় করে। মাঝেমাঝে কথা হয় দুজনের। আলাপচারীতা চলতে থাকে দুজনের। একসময় তারা জানতে পারে তাদের দুজনই ডিভোর্স।  শিমুল ও বকুল নিজেদের মনের মিল উপলব্দি করে। তারা নিঃসঙ্গ জীবনটাকে সঙ্গী দেওয়ার সীদ্ধান্ত নেয়। পারিবারিক ভাবে অনেক আলোকসজ্জার মাঝে একে অপরের হাতে হাত রাখে। শিমুল খুব সহজেই মানিয়ে নেয় বকুল ও তার পরিবার কে। খুব সুখেই দিন কাটে তাদের। হঠাৎ করে শিমুল বকুল কে তার আগের পক্ষকে নিয়ে সন্দেহ করতে থাকে।বকুল হাজার চেষ্টা করেও বুজাতে পারলনা। এ নিয়ে তাদের মাঝে ঝগড়া, রাগ, ক্ষোভ,অভিমান সৃষ্টি হতে থাকে। মাঝে মাঝে এসব কেটে তাদের ঘরে ভালোবাসার চাঁদ উকি মারে। শিমুল খুব খুশি থাকে সেই সময়টুকু। সে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি ও ভাগ্যবতি রমণী মনে করে। অথচ ভালোবাসার সময়টুকু খুব একটা দীর্ঘ নয় একদিন অথবা একঘণ্টা। তবুও শিমুল খুশি। সে ভাবে সে পেয়েছে চিরতরে পেয়েছে বকুল কে। কিন্তু না। বকুলের আচরনে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না। আবার শুরু হয় কথা কাটাকাটি।  তারা আলাদা থাকার সীদ্ধান্ত নেয়। পৃথক হয়ে যায় দুজন। পৃথক দিনযাপন করে। দিনের নিষ্ঠুর ব্যাস্ততা তাদের আফিমের নেশার মত ডুবিয়ে রাখে কিন্তু রাত? বাচ্চাদের ঘুমপাড়ানি গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। দুজনেই জেগে থাকে চন্দ্রের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে। কেউ বই পড়ে নিজেকে ঘোরের মধ্যে রাখার চেষ্টা করে আর কেউ বাচ্চা বুকে নিয়ে। এভাবেই চলতে থাকে বেশ কিছু বছর।  একপর্যায়ে তারা নিজেদের মত করে নিজেকে ঘুছিয়ে নেয়। হয়তো আজও মাঝে মাঝে রাত জাগে। বকুল একটা বই লিখবে বলে মনঃস্থির করে। বইটা লিখা শেষ হলে প্রকাশ সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার জন্য এক প্রকাশনী তে যায়। সেখানে বকুলের চোখে সুন্দর মলাটের এক বই চোখে পড়ে। সে নিষ্ঠুর জীবনের কঠিন বাস্তবতা উপলব্দি করে এই বইয়ের প্রতিটি পাতায়।সে পুলকিত হয় এই বইটি পড়ে। সাথে সাথে লেখক পরিচিতিটা পড়ে ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে। বিকেলে নিজের জন্য যে সময়টুকু রেখেছে বকুল সে সময়েই ফোন করে।
হঠাৎ করে শিমুলের ঘুম ভাঙ্গে কোন এক বিরক্তিকর ফোনের আওয়াজে। অনেকটা বিরক্তিনিয়েই ফোন রিচিভ করে।
শিমুলঃ হ্যাল কে?
ওপার থেকেঃ আমি আপনার একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। আপনার কি একটা বই প্রকাশ হতে যাচ্ছে?
শিমুলঃ জ্বি, কিন্তু সেটাতো এখনো প্রকাশ হয়নি। আপনি কোথায় পেলেন?
ওপার থেকেঃআমার বই প্রকাশ সংক্রান্ত কথা বলতে গিয়ে আপনার টা চোখে পড়ে।
শিমুলঃও তাই বলুন। আপনার পরিচয়?
ওপার থেকে আমি 'বকুল'
দুজন দুজনের লেখার প্রশংসা করে। এতে করে দুজনেই অনুপ্রাণিত হয়। আগামী তে আরও ভালো লেখার উৎসাহ জাগে।
দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে। আবার উঠে শুরু করতে হবে দৈনন্দিন জীবন।

উচ্চাসিত টুকটুকিরা: ফারজানা হোসেন ফারজু

উচ্ছাসিত টুকটুকিরা:
-------------------

ভোর বেলা মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে টুকটুকির। মা ডাকছে " এই টুকটুকি উঠ। লক্ষি মা আমার উঠ। হুজুর আসছে। " টুকটুকি মনের মাঝে হাজার বিরক্তি নিয়ে উঠে।চোখ কচলাতে কচলাতে ওর কানে ভেসে আসে একটা মধুর ডাক। কু..হু  কু..হু......। টুকটুকি দৌড়ে গিয়ে মা কে রান্না ঘর থেকে টেনে বারান্দায় নিয়ে আসে। মা তো অবাক। মা তুমি কি একটা ডাক শুনতে পাচ্ছ?
মাঃ  কিসের ডাক বলতো?
এই যে কুহু কুহু ডাকটা।
মাঃও হ্যা। এটা তো কোকিল এর ডাক।
ও আমার বইয়ে আছে যে কোকিল পাখি, সেই পাখিটির ডাক?
মাঃ হ্যা মা সেই পাখিটা।
মা কোকিল কি ডাকতে জানে?
মাঃ কেন জানবেনা। না জানলে ডাকছে কিভাবে।
তাহলে আগে কখনো শুনিনি যে?
মাঃ কোকিল সারাবছর ডাকেনা মা।
   কেন?
উফ সেই প্রশ্ন ( বিরক্তি আর আনন্দে ভরা ভঙ্গিতে)। যাও ব্রাশ করে আস। খাওয়ারর টেবিলে মা সব বুঝিয়ে বলছি। টুকটুকি দিল দৌড়।  মা ( উচ্চস্বরে) ভাল করে ব্রাশ করো কিন্তু একদম তাড়াহুড়ো নয়। তোয়ালে তে মুখ মুছে টুকটুকি দৌড়ে খাবার টেবিলে। মা এবার বলো। মা বলছে " তোমার বইয়ে পড়েছনা ছয় ঋতুর দেশ -বাংলাদেশ।  ওই ছয় ঋতুর শেষ ঋতুর নাম বসন্ত। কোকিল শুধু মাত্র বসন্ত কালেই ডাকে। বাকি পাঁচ ঋতুতে ডাকেনা।  তাই আমরা বসন্তকাল ছাড়া বাকি ঋতু গুলোতে কোকিলের কথা ভুলে যাই।" ও তাই! আল্লাহ! ( চোখে মুখে বিষ্ময়)। আবার কি হলো? (টুকটুকির মায়ের জিজ্ঞাসা)। টুকটুকি বলে" না আমি ভাবছি আল্লাহ কি সুন্দর করে আমাদের এক ঋতুতে একরকম আনন্দ দেয়। তাই না? টুকটুকির মা বাবা হেসে- পাকা বুড়ি একটা। টুকটুকির মা ওকে ষ্কুলের জন্য প্রস্তুত করাতে নিয়ে যায়। প্রস্তুতি শেষে মা আর মেয়ে প্রতিদিনকার মত একটা সেলফি নেয়। সেলফি শেষে মায়ের গালে আদর খেয়ে বাবার হাত ধরে গাড়িতে উঠে। বাবা অফিস যাওয়ার পথে ওকে নামিয়ে দিয়ে যায়। বাবার অফিসের তাড়া থাকাতে কখন যে টুকটুকির স্কুল পেরিয়ে যাচ্ছিল দেখতে পায়নি। টুকটুকি চিৎকার করে" উফ বাবা পেরিয়ে যাচ্ছ তো স্কুল। প্রতিদিন আস  তবুও খেয়াল থাকেনা।" আর ভুল হবেনা মা( বাবার হাসি হাসি কন্ঠে)। ক্লাসে ঢুকেই সব বন্ধুদের সাথে কুশল বিনিময়।  এসেম্বলি করার জন্য স্যার ডাকছে। সারি সারি ছাত্র /ছাত্রী দাঁড়ানো।  স্যারঃ আজ আমি কাওকে জোর করবোনা। দেখি কে আজ সাহস করে আস। কেউ আসছেনা। একটু পর প্রথম সারির ৪-৫ জন ছাত্রী পর ছোট একটা মেয়ে বের হয়ে আসছে।একি টুনটুনি!  তোমার শরীর খারাপ করছে বুজি? চলে যাবে ক্লাসে? না স্যার আজ আমি আপনার সাথে এসেম্বলি করাবো। বাহ্  সে তো ভালো। কিন্তু তুমি তো ছোট তোমার গলার আওয়াজ তো কেউ শুনবেনা।  স্যার আপনার হাতের ওইটা দিয়ে বলব। আচ্ছা নাও। স্কুল ছুটি হলে ক্লাস থেকে বের হতেই আম্মু.............। আম্মুর হাত ধরে রিক্সায় উঠে বাসায় আসে। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে কার্টুন দেখতে দেখতে বাড়ির কাজ টা সেরে ফেলে। কার্টুন চ্যানেলে বিজ্ঞাপন এলে চ্যানেল পরিবর্তনের সময় তার চোখে পড়ে একটা ছেলের হাতে হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মা দেখ একটা ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কেন মা?
মাঃ ওই ছেলেটা একজন কে এসিড মারছে তাই?
    এসিড কি মা?
মাঃ ওই টা তুমি বুজবানা। বড় হলে বুজবা। কিন্তু এটা শরীরে লাগলে খুব জ্বালা করে। পুড়ে যায়।
টুকটুকিঃ কি বাজে লোক। ওর আম্মু আব্বু ওকে মারতে পারেনা। পঁচা কোথাকার। আবার বাড়ির কাজে মন দেয়। গোসল ও দুপুরের খাবার সেরে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে উঠতেই গানের শিক্ষক হাজির। স্যার আজ আমি জাতীয় সংগীত গাইছি। কিন্তু আমি তো পুরা পারিনা। তাছাড়া আমারটা কারও সাথে মেলেওনি। স্যার আজ আমাকে সুন্দর করে শিখাই দিবেন। কাল আমি আবার গাইব। স্যার যাওয়ার পর সন্ধ্যে নামল। নাশতার টেবিলে টুকটুকি বলে জানো মা আজ আমি পুরা জাতীয় সংগীত শিখেছি। রাতে পড়া শেষ করে শুইয়ে পড়ে। সকালে উঠে প্রতিদিকার মতো তাড়াহুড়ো।  টুকটুকি মা কে বলছে- মা আমাদের স্কুলে সামনে একটা অনুষ্ঠান আছে আমি তাতে নাচবো। আমাকে একটা নাচ শিখাবে? দু চারদিন নাচের রিহার্সাল এর পর আসল টুকটুকির সেই কাঙখিত দিন। মা আজ তুমি স্কুলে কটায় যাবে? আমাদের স্যাররা বলছে অনুষ্ঠান ৯ টায় শুরু হবে। মা বলল- আমি আজ যেতে পারবোনা মা। তুমি আব্বুর সাথে চলে এসো। টুকটুকি ঘাড় নেড়ে সায় জানালো। কিন্তু তার ভিষন মন খারাপ।  সে চায় তার মা সবসময় তার পাশে থাকুক। স্কুলে এসে টুকটুকি স্টেজ এ নাচল। সবাই তার নাচের প্রশংসাও করল। অনুষ্ঠান শেষে ওর আব্বু ওকে নিতে এলো। গাড়ির এককোনে চুপ করে বসে রয়েছে টুকটুকি। বাসার সামনে গাড়ি থামলো।  আজ খুব শান্ত ভাবে নামছে টুকটুকি কোন দৌড় ঝাপ নেই।" বাহ্! আজ তো ভিষন লক্ষি হয়ে গেছে আমার মামুনি। মুখে কোন আওয়াজ নেই বাবাকে একদম বিরক্ত করেনি রাস্তায়" টুকটুকির বাবা ওর মাকে বলছে। মা হেসে -তোমার মেয়ে বড় হচ্ছে তো তাই। আজ টিভি চালিয়েছে। কিন্তু প্রতিদিনকার মত কার্টুন দেখে হাসছেনা। কিছুক্ষণ দেখেই বাথরুম এ গোসল করতে চলে গেল। ফিরে এসে মা ঘুম পেয়েছে।  মা তো অবাক কিরে গোসল করে ফেললি? আজ তাহলে আম্মুকে আর করাতে হলোনা। ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড় সোনা মা আমার। ভাত টেবিলে রেখে মা কাজে গেল। এসে দেখে কয়েক লোকমা খেয়েছে। আজ টুকটুকির প্রিয় চিকেন টাও খেলোনা।  বিকালে গানের স্যার আসে। মা ডাকলে সে জানায় আজ সে গান করবেনা। মা নাশতা দিয়ে স্যারের সাথে কথা বলে ওনাকে পাঠিয়ে দেন। রাতে ও নিজের পড়ায় তেমন একটা মনযোগ দেয়না।আজ একটু তাড়াতাড়ি ই ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে মা উঠে তো অবাক। মা জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার টুকটুকি তুমি বারান্দায়? আজ তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙেছে মা। টুকটুকির নিরব উত্তর।  খাওয়ার টেবিলে বাবা বলে " এই আজ একটু তাড়াতাড়ি টুকটুকি কে রেডি করাই দাও। আমার তাড়া আছে। " আজ আমি যাবনা না যাবনা( চোখে মুখে ভয়ের আভা)। মা দৌড়ে এসে কি হলো মা কেন যাবেনা? তুমিতো স্কুলে যাওয়ার জন্য খুব পাগলামি কর আজ হঠাৎ যাবেনা? কি হয়েছে মা তোমার। বাবা চলে যায় অফিসে। মা সারাদিন চিন্তা করে। আমার টুকটুকি তো এমন মেয়ে নয়। প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে থাকা মেয়েটা কোন প্রশ্নই করছেনা। গান ও শিখলনা। রাতে টুকটুকির বাবা সহ বসে আলোচনা করে। টুকটুকির বাবা তেমন টা পাত্তা না দিয়ে " হঠাৎ শরীর খারাপ করছে হয়তো। " মা বাবা দুজন টুকটুকির কাছে

ভালোবাসা বিনিময় : ফারাজানা হোসেন ফারজু

•                     ভালোবাসা বিনিময়
---------------------------------
মা ও ভাই বোনের আহ্লাদে ভরা নিশি। চুলায় কি করে আগুন দিতে হয়? তরকারী তে কতটা লবণ দিতে হয়? আদৌ লবণ দেয় কিনা তার জানা নেয়। তার জগত পড়ালিখা,  ঘোরাফেরা আর হাসি।  দুপুর বেলা খেয়ে বিশ্রাম নিতে নিতে ফেচবুক এ চোখ বুলাচ্ছে নিশি। তার শিক্ষকের আইডিতে ঢুকে ওনার পোস্ট গুলা দেখছে। হঠাৎ তার নজর কাড়ে একটা পোস্ট।  তার পোস্ট টা অনেক ভালো লাগে। পোস্ট টা শিক্ষকের নিজের নয়। কারও পোস্টে লাইক দেওয়া। যেই আইডির পোস্ট লাইক দিছে সেই আইডি টা ঘুরে দেখে নিশি। সে দেখতে পায় তার এক বন্ধুর আইডি ওই আইডিটার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড। সে রাতে বন্ধুর সাথে আলাপ করে। জানতে পারে খুব ভালো লোক। নিশি ওই আইডিটা তে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়।

হঠাৎ করে একদিন নিশি দেখে ওই আইডি থেকে মেসেজ।  ওদের আলাপ হয়। কয়েকদিন আলাপের একপর্যায়ে রোহান রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করে। আলাপের মাত্রা বাড়তে থাকে।নিশির নেশা হয়ে দাঁড়ায় রোহানের পোস্ট গুলা পড়া। মনে হয় সে রোহানের লিখার প্রেমে পড়ে যায়। রোহানের লিখার প্রথম পাঠক নিশি।
কখন যে মন বিনিময় হয়ে যায় তাদের তারা বুজতেও পারেনি। এক ঘন্টা যদি রোহানের সাথে নিশির আলাপ না হয় নিশি উম্মাদ হয়ে পড়ে। তারা খেয়াল করে দেখে সারাক্ষণ তাদের আলাপ হয়। ভোরে ফোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে নিশির। সেই মধুর কন্ঠে হ্যাল শুনে সকাল শুরু হয় রোহানের। নিশি চোখ কচলাতে কচলাতে রোহানের শুভ সকালের উত্তর দেয়। নিত্যকর্ম সেরে স্কুলে যায় নিশি। নিশি একটি কিন্ডারগার্টেন এ চাকরী করে। যাওয়ার পথে ফোনে আলাপ হয় তাদের। স্কুলে পৌছে তারা চ্যাট করে। অফিসে ক্লাসের ফাকে কথাহয়। কাজ করলে মাঝেমাঝে চ্যাট হয়। স্কুল থেকে ফেরার পথে আবার ফোন। বাড়ি এসে চ্যাট- ফোন কি যেন এক অপুর্ব টান। কেন এমন হচ্ছে তাদের?
এক রাতে ফ্যাল ফ্যাল করে কান্না শুরু করে নিশি। কারন আজ বিকাল থেকে রোহান ফোন ধরেনি। কোন সান্তনাই যে বাদ মানছেনা। রাগ, অভিমান, বকা, কান্না সব একসাথে হয়ে যায়। রোহান বুজতে পারে নিশির দুর্বলতা।  রোহান নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সে হেরে যায় তার নিজের কাছে। সে ও যে পারছেনা নিশি কে ভুলতে। তারা প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে। তিনিই উত্তম বিচারক।  তিনি তাদের প্রার্থনা কবুল করেন। কোন এক মিষ্টি রোদেলা দিনে তাদের প্রভু এক করে দেন। জোছনা ভরা পূর্ণিমা রাতে তারা শপথ নেই পাশে থাকার।

বিয়ের পর দিন সকাল থেকেই নিশি মেয়ে নয় বৌ। সে ভোরে ঘর ঝেড়ে রান্না ঘরে যায়।  সে কখনো পাতিল ধোয়নি এত্ত বড় বড় পাতিল দেখে সে অবাক। এছাড়া গ্রামীণ দেওয়া নেওয়ার বিষয় তো আছেই।নিশির খুব খারাপ লাগে। অপমানিত হচ্ছে ও যেখানে সেখানে।কিন্তু ওই যে সে বৌ। নিশি বুঝতে পারে সে কিছুটা ভিন্ন পরিবেশে এসে পড়েছে।সে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। যতটা পারে আয়ত্ত করে। এভাবে চলতে থাকে কয়েকবছর।  রোহান নিশির কষ্ট টা বুঝে।কিন্তু সে ও যে নিরুপায়। একদিকে পরিবার একদিকে প্রেয়সী।  পরিবারের লোকজন তো কথা শুনাচ্ছেই এদিকে প্রেয়সীর চোখের পানি। আহ্লাদী নিশি যে অভাব দেখেনি। তার পরিবার হাজার কষ্টের মাঝেও তার চাহিদা পূরণ করেছে। রোহান ও প্রেয়সীর চাহিদা পূরণে কুণ্ঠাবোধ করেনা। কিন্তু রোহানের পরিবার তা পছন্দ করেনা। নিশি আস্তে আস্তে তার আবদার গুটিয়ে নিতে থাকে।রোহানকে বুঝতে দেয়না নিশির কি প্রয়োজন।
খুব খুশি কারন রোহান তাকে ভালোবাসে।  তবে সে দামী জামার জন্য মনে মনে আকাঙখিত।  দামী গহনা, ফার্নিচার এসব তার কাছে মৌলিক চাহিদা কিন্তু রোহানের জন্য বিলাসিতা।  নিশি রোহানের কষ্ট টা বুজে তাই সে চায়না।
কিন্তু ঐ যে মানুষ তো।  নিশি কথার  ফাকে একদিন তার ব্যাবহারের সুবিধার জন্য রোহানের কাছে তার ভাইয়ের দেওয়া উপহার টা চেয়ে ফেলে। নিশি অত ভেবে বলেনি ও শুধু নিজের ব্যাবহারের সুবিধার্থে বলেছে।  কিন্তু তা যে প্রচন্ড আঘাত করে রোহান কে। রোহানের মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা যেদিন নিশি রোহানের পরিবারের বর্ণনা  শুণে বলেছিল আমি ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা চাই। আমার কোন প্রকার লোভ থাকবেনা। সত্যি নিশির আজও কোন লোভ নেই। সে শুধু তার স্বামীর আর্থিক দিক চিন্তা করে এবং নিজের সুবিধার জন্য চেয়েছে। নিশি মনে করে এটা কোন ব্যাপার নয় ভাই আমাকে দিছে আমি নিব। রোহান বিশাল কষ্ট পায়। সে ভাবে নিশি পরিবারকে আলাদা করতে চায়। এটা শুনে নিশি আঘাত পায়।  নিশি ক্ষমা চেয়ে নেয়। কিন্তু রোহান যে ক্ষমা করতে পারছেনা। নিশি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় রোহান ভুল বুঝাতে। সত্যিই নিশি ভালোবাসার বিনিময়ে কিছু চায়নি। বিশাল ভুল বোঝাবুঝির কারনে তাদের সম্পর্ক টা বিলুপ্ত প্রায় ।  এভাবেই দিনের পর দিন পারিবারিক কারনে হাজার হাজার নিশিরা নিজেদের চাহিদা বিসর্জন দিচ্ছে আর হাজার হাজার রোহানরা প্রেয়সী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ভালোবাসা বিনিময় কষ্টের কারন হয়ে যাচ্ছে।