মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই, ২০১৮

উচ্চাসিত টুকটুকিরা: ফারজানা হোসেন ফারজু

উচ্ছাসিত টুকটুকিরা:
-------------------

ভোর বেলা মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে টুকটুকির। মা ডাকছে " এই টুকটুকি উঠ। লক্ষি মা আমার উঠ। হুজুর আসছে। " টুকটুকি মনের মাঝে হাজার বিরক্তি নিয়ে উঠে।চোখ কচলাতে কচলাতে ওর কানে ভেসে আসে একটা মধুর ডাক। কু..হু  কু..হু......। টুকটুকি দৌড়ে গিয়ে মা কে রান্না ঘর থেকে টেনে বারান্দায় নিয়ে আসে। মা তো অবাক। মা তুমি কি একটা ডাক শুনতে পাচ্ছ?
মাঃ  কিসের ডাক বলতো?
এই যে কুহু কুহু ডাকটা।
মাঃও হ্যা। এটা তো কোকিল এর ডাক।
ও আমার বইয়ে আছে যে কোকিল পাখি, সেই পাখিটির ডাক?
মাঃ হ্যা মা সেই পাখিটা।
মা কোকিল কি ডাকতে জানে?
মাঃ কেন জানবেনা। না জানলে ডাকছে কিভাবে।
তাহলে আগে কখনো শুনিনি যে?
মাঃ কোকিল সারাবছর ডাকেনা মা।
   কেন?
উফ সেই প্রশ্ন ( বিরক্তি আর আনন্দে ভরা ভঙ্গিতে)। যাও ব্রাশ করে আস। খাওয়ারর টেবিলে মা সব বুঝিয়ে বলছি। টুকটুকি দিল দৌড়।  মা ( উচ্চস্বরে) ভাল করে ব্রাশ করো কিন্তু একদম তাড়াহুড়ো নয়। তোয়ালে তে মুখ মুছে টুকটুকি দৌড়ে খাবার টেবিলে। মা এবার বলো। মা বলছে " তোমার বইয়ে পড়েছনা ছয় ঋতুর দেশ -বাংলাদেশ।  ওই ছয় ঋতুর শেষ ঋতুর নাম বসন্ত। কোকিল শুধু মাত্র বসন্ত কালেই ডাকে। বাকি পাঁচ ঋতুতে ডাকেনা।  তাই আমরা বসন্তকাল ছাড়া বাকি ঋতু গুলোতে কোকিলের কথা ভুলে যাই।" ও তাই! আল্লাহ! ( চোখে মুখে বিষ্ময়)। আবার কি হলো? (টুকটুকির মায়ের জিজ্ঞাসা)। টুকটুকি বলে" না আমি ভাবছি আল্লাহ কি সুন্দর করে আমাদের এক ঋতুতে একরকম আনন্দ দেয়। তাই না? টুকটুকির মা বাবা হেসে- পাকা বুড়ি একটা। টুকটুকির মা ওকে ষ্কুলের জন্য প্রস্তুত করাতে নিয়ে যায়। প্রস্তুতি শেষে মা আর মেয়ে প্রতিদিনকার মত একটা সেলফি নেয়। সেলফি শেষে মায়ের গালে আদর খেয়ে বাবার হাত ধরে গাড়িতে উঠে। বাবা অফিস যাওয়ার পথে ওকে নামিয়ে দিয়ে যায়। বাবার অফিসের তাড়া থাকাতে কখন যে টুকটুকির স্কুল পেরিয়ে যাচ্ছিল দেখতে পায়নি। টুকটুকি চিৎকার করে" উফ বাবা পেরিয়ে যাচ্ছ তো স্কুল। প্রতিদিন আস  তবুও খেয়াল থাকেনা।" আর ভুল হবেনা মা( বাবার হাসি হাসি কন্ঠে)। ক্লাসে ঢুকেই সব বন্ধুদের সাথে কুশল বিনিময়।  এসেম্বলি করার জন্য স্যার ডাকছে। সারি সারি ছাত্র /ছাত্রী দাঁড়ানো।  স্যারঃ আজ আমি কাওকে জোর করবোনা। দেখি কে আজ সাহস করে আস। কেউ আসছেনা। একটু পর প্রথম সারির ৪-৫ জন ছাত্রী পর ছোট একটা মেয়ে বের হয়ে আসছে।একি টুনটুনি!  তোমার শরীর খারাপ করছে বুজি? চলে যাবে ক্লাসে? না স্যার আজ আমি আপনার সাথে এসেম্বলি করাবো। বাহ্  সে তো ভালো। কিন্তু তুমি তো ছোট তোমার গলার আওয়াজ তো কেউ শুনবেনা।  স্যার আপনার হাতের ওইটা দিয়ে বলব। আচ্ছা নাও। স্কুল ছুটি হলে ক্লাস থেকে বের হতেই আম্মু.............। আম্মুর হাত ধরে রিক্সায় উঠে বাসায় আসে। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে কার্টুন দেখতে দেখতে বাড়ির কাজ টা সেরে ফেলে। কার্টুন চ্যানেলে বিজ্ঞাপন এলে চ্যানেল পরিবর্তনের সময় তার চোখে পড়ে একটা ছেলের হাতে হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মা দেখ একটা ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কেন মা?
মাঃ ওই ছেলেটা একজন কে এসিড মারছে তাই?
    এসিড কি মা?
মাঃ ওই টা তুমি বুজবানা। বড় হলে বুজবা। কিন্তু এটা শরীরে লাগলে খুব জ্বালা করে। পুড়ে যায়।
টুকটুকিঃ কি বাজে লোক। ওর আম্মু আব্বু ওকে মারতে পারেনা। পঁচা কোথাকার। আবার বাড়ির কাজে মন দেয়। গোসল ও দুপুরের খাবার সেরে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে উঠতেই গানের শিক্ষক হাজির। স্যার আজ আমি জাতীয় সংগীত গাইছি। কিন্তু আমি তো পুরা পারিনা। তাছাড়া আমারটা কারও সাথে মেলেওনি। স্যার আজ আমাকে সুন্দর করে শিখাই দিবেন। কাল আমি আবার গাইব। স্যার যাওয়ার পর সন্ধ্যে নামল। নাশতার টেবিলে টুকটুকি বলে জানো মা আজ আমি পুরা জাতীয় সংগীত শিখেছি। রাতে পড়া শেষ করে শুইয়ে পড়ে। সকালে উঠে প্রতিদিকার মতো তাড়াহুড়ো।  টুকটুকি মা কে বলছে- মা আমাদের স্কুলে সামনে একটা অনুষ্ঠান আছে আমি তাতে নাচবো। আমাকে একটা নাচ শিখাবে? দু চারদিন নাচের রিহার্সাল এর পর আসল টুকটুকির সেই কাঙখিত দিন। মা আজ তুমি স্কুলে কটায় যাবে? আমাদের স্যাররা বলছে অনুষ্ঠান ৯ টায় শুরু হবে। মা বলল- আমি আজ যেতে পারবোনা মা। তুমি আব্বুর সাথে চলে এসো। টুকটুকি ঘাড় নেড়ে সায় জানালো। কিন্তু তার ভিষন মন খারাপ।  সে চায় তার মা সবসময় তার পাশে থাকুক। স্কুলে এসে টুকটুকি স্টেজ এ নাচল। সবাই তার নাচের প্রশংসাও করল। অনুষ্ঠান শেষে ওর আব্বু ওকে নিতে এলো। গাড়ির এককোনে চুপ করে বসে রয়েছে টুকটুকি। বাসার সামনে গাড়ি থামলো।  আজ খুব শান্ত ভাবে নামছে টুকটুকি কোন দৌড় ঝাপ নেই।" বাহ্! আজ তো ভিষন লক্ষি হয়ে গেছে আমার মামুনি। মুখে কোন আওয়াজ নেই বাবাকে একদম বিরক্ত করেনি রাস্তায়" টুকটুকির বাবা ওর মাকে বলছে। মা হেসে -তোমার মেয়ে বড় হচ্ছে তো তাই। আজ টিভি চালিয়েছে। কিন্তু প্রতিদিনকার মত কার্টুন দেখে হাসছেনা। কিছুক্ষণ দেখেই বাথরুম এ গোসল করতে চলে গেল। ফিরে এসে মা ঘুম পেয়েছে।  মা তো অবাক কিরে গোসল করে ফেললি? আজ তাহলে আম্মুকে আর করাতে হলোনা। ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড় সোনা মা আমার। ভাত টেবিলে রেখে মা কাজে গেল। এসে দেখে কয়েক লোকমা খেয়েছে। আজ টুকটুকির প্রিয় চিকেন টাও খেলোনা।  বিকালে গানের স্যার আসে। মা ডাকলে সে জানায় আজ সে গান করবেনা। মা নাশতা দিয়ে স্যারের সাথে কথা বলে ওনাকে পাঠিয়ে দেন। রাতে ও নিজের পড়ায় তেমন একটা মনযোগ দেয়না।আজ একটু তাড়াতাড়ি ই ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে মা উঠে তো অবাক। মা জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার টুকটুকি তুমি বারান্দায়? আজ তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙেছে মা। টুকটুকির নিরব উত্তর।  খাওয়ার টেবিলে বাবা বলে " এই আজ একটু তাড়াতাড়ি টুকটুকি কে রেডি করাই দাও। আমার তাড়া আছে। " আজ আমি যাবনা না যাবনা( চোখে মুখে ভয়ের আভা)। মা দৌড়ে এসে কি হলো মা কেন যাবেনা? তুমিতো স্কুলে যাওয়ার জন্য খুব পাগলামি কর আজ হঠাৎ যাবেনা? কি হয়েছে মা তোমার। বাবা চলে যায় অফিসে। মা সারাদিন চিন্তা করে। আমার টুকটুকি তো এমন মেয়ে নয়। প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে থাকা মেয়েটা কোন প্রশ্নই করছেনা। গান ও শিখলনা। রাতে টুকটুকির বাবা সহ বসে আলোচনা করে। টুকটুকির বাবা তেমন টা পাত্তা না দিয়ে " হঠাৎ শরীর খারাপ করছে হয়তো। " মা বাবা দুজন টুকটুকির কাছে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন