মঙ্গলবার, ২৪ জুলাই, ২০১৮

ভালোবাসা বিনিময় : ফারাজানা হোসেন ফারজু

•                     ভালোবাসা বিনিময়
---------------------------------
মা ও ভাই বোনের আহ্লাদে ভরা নিশি। চুলায় কি করে আগুন দিতে হয়? তরকারী তে কতটা লবণ দিতে হয়? আদৌ লবণ দেয় কিনা তার জানা নেয়। তার জগত পড়ালিখা,  ঘোরাফেরা আর হাসি।  দুপুর বেলা খেয়ে বিশ্রাম নিতে নিতে ফেচবুক এ চোখ বুলাচ্ছে নিশি। তার শিক্ষকের আইডিতে ঢুকে ওনার পোস্ট গুলা দেখছে। হঠাৎ তার নজর কাড়ে একটা পোস্ট।  তার পোস্ট টা অনেক ভালো লাগে। পোস্ট টা শিক্ষকের নিজের নয়। কারও পোস্টে লাইক দেওয়া। যেই আইডির পোস্ট লাইক দিছে সেই আইডি টা ঘুরে দেখে নিশি। সে দেখতে পায় তার এক বন্ধুর আইডি ওই আইডিটার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড। সে রাতে বন্ধুর সাথে আলাপ করে। জানতে পারে খুব ভালো লোক। নিশি ওই আইডিটা তে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়।

হঠাৎ করে একদিন নিশি দেখে ওই আইডি থেকে মেসেজ।  ওদের আলাপ হয়। কয়েকদিন আলাপের একপর্যায়ে রোহান রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করে। আলাপের মাত্রা বাড়তে থাকে।নিশির নেশা হয়ে দাঁড়ায় রোহানের পোস্ট গুলা পড়া। মনে হয় সে রোহানের লিখার প্রেমে পড়ে যায়। রোহানের লিখার প্রথম পাঠক নিশি।
কখন যে মন বিনিময় হয়ে যায় তাদের তারা বুজতেও পারেনি। এক ঘন্টা যদি রোহানের সাথে নিশির আলাপ না হয় নিশি উম্মাদ হয়ে পড়ে। তারা খেয়াল করে দেখে সারাক্ষণ তাদের আলাপ হয়। ভোরে ফোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে নিশির। সেই মধুর কন্ঠে হ্যাল শুনে সকাল শুরু হয় রোহানের। নিশি চোখ কচলাতে কচলাতে রোহানের শুভ সকালের উত্তর দেয়। নিত্যকর্ম সেরে স্কুলে যায় নিশি। নিশি একটি কিন্ডারগার্টেন এ চাকরী করে। যাওয়ার পথে ফোনে আলাপ হয় তাদের। স্কুলে পৌছে তারা চ্যাট করে। অফিসে ক্লাসের ফাকে কথাহয়। কাজ করলে মাঝেমাঝে চ্যাট হয়। স্কুল থেকে ফেরার পথে আবার ফোন। বাড়ি এসে চ্যাট- ফোন কি যেন এক অপুর্ব টান। কেন এমন হচ্ছে তাদের?
এক রাতে ফ্যাল ফ্যাল করে কান্না শুরু করে নিশি। কারন আজ বিকাল থেকে রোহান ফোন ধরেনি। কোন সান্তনাই যে বাদ মানছেনা। রাগ, অভিমান, বকা, কান্না সব একসাথে হয়ে যায়। রোহান বুজতে পারে নিশির দুর্বলতা।  রোহান নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সে হেরে যায় তার নিজের কাছে। সে ও যে পারছেনা নিশি কে ভুলতে। তারা প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে। তিনিই উত্তম বিচারক।  তিনি তাদের প্রার্থনা কবুল করেন। কোন এক মিষ্টি রোদেলা দিনে তাদের প্রভু এক করে দেন। জোছনা ভরা পূর্ণিমা রাতে তারা শপথ নেই পাশে থাকার।

বিয়ের পর দিন সকাল থেকেই নিশি মেয়ে নয় বৌ। সে ভোরে ঘর ঝেড়ে রান্না ঘরে যায়।  সে কখনো পাতিল ধোয়নি এত্ত বড় বড় পাতিল দেখে সে অবাক। এছাড়া গ্রামীণ দেওয়া নেওয়ার বিষয় তো আছেই।নিশির খুব খারাপ লাগে। অপমানিত হচ্ছে ও যেখানে সেখানে।কিন্তু ওই যে সে বৌ। নিশি বুঝতে পারে সে কিছুটা ভিন্ন পরিবেশে এসে পড়েছে।সে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। যতটা পারে আয়ত্ত করে। এভাবে চলতে থাকে কয়েকবছর।  রোহান নিশির কষ্ট টা বুঝে।কিন্তু সে ও যে নিরুপায়। একদিকে পরিবার একদিকে প্রেয়সী।  পরিবারের লোকজন তো কথা শুনাচ্ছেই এদিকে প্রেয়সীর চোখের পানি। আহ্লাদী নিশি যে অভাব দেখেনি। তার পরিবার হাজার কষ্টের মাঝেও তার চাহিদা পূরণ করেছে। রোহান ও প্রেয়সীর চাহিদা পূরণে কুণ্ঠাবোধ করেনা। কিন্তু রোহানের পরিবার তা পছন্দ করেনা। নিশি আস্তে আস্তে তার আবদার গুটিয়ে নিতে থাকে।রোহানকে বুঝতে দেয়না নিশির কি প্রয়োজন।
খুব খুশি কারন রোহান তাকে ভালোবাসে।  তবে সে দামী জামার জন্য মনে মনে আকাঙখিত।  দামী গহনা, ফার্নিচার এসব তার কাছে মৌলিক চাহিদা কিন্তু রোহানের জন্য বিলাসিতা।  নিশি রোহানের কষ্ট টা বুজে তাই সে চায়না।
কিন্তু ঐ যে মানুষ তো।  নিশি কথার  ফাকে একদিন তার ব্যাবহারের সুবিধার জন্য রোহানের কাছে তার ভাইয়ের দেওয়া উপহার টা চেয়ে ফেলে। নিশি অত ভেবে বলেনি ও শুধু নিজের ব্যাবহারের সুবিধার্থে বলেছে।  কিন্তু তা যে প্রচন্ড আঘাত করে রোহান কে। রোহানের মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা যেদিন নিশি রোহানের পরিবারের বর্ণনা  শুণে বলেছিল আমি ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা চাই। আমার কোন প্রকার লোভ থাকবেনা। সত্যি নিশির আজও কোন লোভ নেই। সে শুধু তার স্বামীর আর্থিক দিক চিন্তা করে এবং নিজের সুবিধার জন্য চেয়েছে। নিশি মনে করে এটা কোন ব্যাপার নয় ভাই আমাকে দিছে আমি নিব। রোহান বিশাল কষ্ট পায়। সে ভাবে নিশি পরিবারকে আলাদা করতে চায়। এটা শুনে নিশি আঘাত পায়।  নিশি ক্ষমা চেয়ে নেয়। কিন্তু রোহান যে ক্ষমা করতে পারছেনা। নিশি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় রোহান ভুল বুঝাতে। সত্যিই নিশি ভালোবাসার বিনিময়ে কিছু চায়নি। বিশাল ভুল বোঝাবুঝির কারনে তাদের সম্পর্ক টা বিলুপ্ত প্রায় ।  এভাবেই দিনের পর দিন পারিবারিক কারনে হাজার হাজার নিশিরা নিজেদের চাহিদা বিসর্জন দিচ্ছে আর হাজার হাজার রোহানরা প্রেয়সী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ভালোবাসা বিনিময় কষ্টের কারন হয়ে যাচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন