বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১৮

রমজানের ধারাবাহিক অালোচনা : ১ম পর্ব, গীবত(পরচর্চা)

রমজানের ধারাবাহিক অালোচনা( ১)
অাজকের পর্ব : গীবত(পরচর্চা)
___________________________________
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ জীবনযাপন ছাড়া একাকী জীবন যাপন করা মানুষের পক্ষে সহজ নয়, তেমনটি কেউ কামনাও করে না। আবার পরিচিত সমাজের বাইরেও মানুষের পক্ষে চলা খুবই কঠিন। পৃথিবীর সমাজবদ্ধ কোনো মানুষই সামাজিক বিপর্যয় কামনা করতে পারেন না। মানুষ সব সময় সুখ ও শান্তি চায়। শান্তি মানুষের একটি আরাধ্য বিষয়। কিন্তু এই প্রত্যাশিত সুখ-শান্তি নির্ভর করে সমাজবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর। উঁচু-নিচু, ধনী-দরিদ্র­ এসব পার্থক্যই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। মানুষের পারস্পরিক পরিচয়ের জন্যই এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ সূরা হুজরাতে এরশাদ করেছেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ﴿13﴾

হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। (সূরা হুজুরাত: ১৩)

সুতরাং মানব সমাজের এই পার্থক্য সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার নিমিত্তেই। যেসব কারণে সমাজের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বিনষ্ট হয়, সমাজ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হয়, সামাজিক মূল্যবোধ বিনষ্ট হয়, পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়, তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো গীবত, যা মানুষকে নিকৃষ্টতম প্রাণীতে পরিণত করে। তাই তো মহান আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে এই নিকৃষ্ট স্বভাব থেকে বিরত থাকার তাগিদ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সূরা হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে বলেন,

وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ

‘আর তোমরা কেউ কারো গীবত করো না, তোমরা কি কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে ? একে তোমরা অবশ্যই ঘৃণা করবে।, (সূরা হুজুরাত:১২)

সুস্থ, স্বাধীন কোনো বিবেকবান মানুষই জ্ঞান অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত মৃত মানুষ তো দূরের কথা, যে পশু জীবিত থাকলে হালাল সেই পশু মৃত হলে তার গোশতও ভক্ষণ করবে না। অথচ মানুষ সুস্থ মস্তিষ্কে, স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে গীবতের মতো জঘন্য ফেতনায় নিমজ্জিত হয়।

♣গীবত কী?

গীবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দোষারোপ করা, অনুপস্থিত থাকা, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কুৎসা রটনা করা, পিছে সমালোচনা করা ইত্যাদি।

পরিভাষায় গীবত বলা হয় ‘তোমার কোনো ভাইয়ের পেছনে তার এমন দোষের কথা উল্লেখ করা যা সে গোপন রেখেছে অথবা যার উল্লেখ সে অপছন্দ করে।’ (মু’জামুল ওয়াসিত) গীবতের সবচেয়ে উত্তম ও বাস্তবসম্মত সংজ্ঞা দিয়েছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিম্মোক্ত হাদিস থেকে পেতে পারি।

সাহাবি আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গীবত কাকে বলে, তোমরা জান কি? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তোমার কোনো ভাই (দীনি) সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গীবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যে দোষের কথা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের থাকে তবে তুমি অবশ্যই তার গীবত করলে আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছ। (মুসলিম)
সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, কোনো ভাইয়ের এমন দোষের কথা বলা গীবত যা সে অপছন্দ করে।

♣গীবতের পরিণাম

গীবত ইসলামি শরিয়তে হারাম ও কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,

وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ ﴿1﴾

‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অগ্র-পশ্চাতে দোষ বলে বেড়ায়।’ (সূরা হুমাজাহ-১)

কেউ গীবত শুনলে তার অনুপস্থিত ভাইয়ের পক্ষ থেকে তা প্রতিরোধ করবে সাধ্যমতো। আর যদি প্রতিরোধের শক্তি না থাকে তবে তা শ্রবণ থেকে বিরত থাকবে। কেননা, ইচ্ছাকৃতভাবে গীবত শোনা নিজে গীবত করার মতোই অপরাধ। হাদিসে আছে, সাহাবি মায়মুন রাঃ বলেন, ‘একদিন স্বপ্নে দেখলাম এক সঙ্গী ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে আছে এবং এক ব্যক্তি আমাকে তা ভক্ষণ করতে বলছে। আমি বললাম, আমি একে কেন ভক্ষণ করব? সে বলল, কারণ তুমি অমুক ব্যক্তির সঙ্গী গোলামের গীবত করেছ। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি তো তার সম্পর্কে কখনো কোনো ভালোমন্দ কথা বলিনি। সে বলল, হ্যাঁ, এ কথা ঠিক। কিন্তু তুমি তার গীবত শুনেছ এবং সম্মত রয়েছ।’

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিরাজের সময় আমাকে এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো যাদের নখ ছিল তামার। তারা তাদের মুখমণ্ডল ও দেহ আঁচড়াচ্ছিল। আমি জিবরীল আঃ-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা নিজ ভাইদের গীবত করত ও ইজ্জতহানি করত। (মাজহারি)

আবু সায়িদ ও জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘গীবত ব্যাভিচারের চেয়েও মারাত্মক গুনাহ। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, এটা কিভাবে? তিনি বললেন, ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তওবা করলে তার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু গীবত যে করে তার গোনাহ আক্রান্ত প্রতিপক্ষের ক্ষমা না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।’
সুতরাং এ কথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত  হল যে, গীবত একটি জঘন্য পাপাচার। এ থেকে সবাইকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকতে হবে।

♣যাদের দোষ বর্ণনা করা যায়

গীবত নিঃসন্দেহে হারাম। তারপরও যাদের দোষ বর্ণনা করা যায় তা হচ্ছে­

কোনো অত্যাচারীর অত্যাচারের কাহিনী প্রতিকারের আশায় বর্ণনা করা।
সন্তান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে তার পিতা ও স্বামীর কাছে অভিযোগ করা।
ফতোয়া গ্রহণ করার জন্য ঘটনার বিবরণ দেয়া ও – প্রয়োজন ও উপযোগিতার কারণে কারো দোষ বর্ণনা করা জরুরি।
আবার যাদের স্বভাব গীবত করা তাদের সম্পর্কে অন্যদের সাবধান করার জন্য তার দোষ বর্ণনা করা জায়েজ। যেমন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা এক ব্যক্তি (মাখরামা ইবনে নওফেল) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন তিনি বললেন, তাকে আসার অনুমতি দাও, সে গোত্রের কতই না নিকৃষ্ট লোক। অতঃপর তিনি তার সাথে প্রশস্ত চেহারায় তাকালেন এবং হাসিমুখে কথা বললেন। অতঃপর লোকটি চলে গেলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তার সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন, অতঃপর আপনিই প্রশস্ত চেহারায় তার প্রতি তাকালেন এবং হাসিমুখে কথা বললেন। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়েশা, তুমি কি কখনো আমাকে অশ্লীলভাষী পেয়েছ ? নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালার কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে সর্বাধিক নিকৃষ্ট সেই লোক হবে, যাকে মানুষ তার অনিষ্টের ভয়ে ত্যাগ করেছে। (বুখারি, মুসলিম)

♣গীবত করার কারণ

মানুষ সব সময় নিজেকে বড় করে দেখে, এই আমিত্বের আরেক নাম আত্মপূজা। এটা শুরু হয়ে গেলে আত্মপ্রীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তখন তার আত্মত্যাগের মতো মহৎ বৈশিষ্ট্য দূরিভূত হতে থাকে। ফলে এ স্থানে দানা বাঁধে হিংসা-বিদ্বেষ। আবার হিংসা-বিদ্বেষ থেকেই অপরের প্রতি কুধারণার সৃষ্টি হবে, যা মানুষকে গীবত করতে বাধ্য করে। সুতরাং আত্মপূজা, আত্মপ্রীতি, হিংসা-বিদ্বেষ, কুধারণাই মানুষকে গীবত করতে বাধ্য করে।

♣বেঁচে থাকার উপায়

গীবত থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরি। এ থেকে বাঁচার প্রথম উপায় হচ্ছে অপরের কল্যাণ কামনা করা। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দীন হচ্ছে নিছক কল্যাণ কামনা করা।’

দ্বিতীয়ত, আত্মত্যাগ অর্থাৎ যেকোনো প্রয়োজনে অপর ভাইকে অগ্রাধিকার দেয়া। যেমন আল্লাহ সূরা হাশরের ৯ নম্বর আয়াতে এরশাদ করেছেন,

وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ ﴿9﴾

‘তারা নিজের ওপর অন্যদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তারা অনটনের মধ্যে থাকে।’

তৃতীয়ত, অপরের অপরাধকে ক্ষমা করে দেয়া।

চতুর্থত, মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী বেশি বেশি করে অধ্যয়ন করা।

শেষ কথা আমাদের সব সময় আল্লাহতায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে তিনি যেন অনুগ্রহ করে গীবতের মতো জঘন্য সামাজিক ব্যাধিতে আমাদের নিমজ্জিত হতে না দেন। এ ক্ষেত্রে জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সর্বাগ্রে। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দা যখন ভোরে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয় তখন শরীরের সব অঙ্গ জিহ্বার কাছে আরজ করে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহর নাফরমানি কাজে পরিচালিত করো না। কেননা, তুমি যদি ঠিক থাক, তবে আমরা সঠিক পথে থাকব। কিন্তু যদি তুমি বাঁকা পথে চলো, তবে আমরাও বাঁকা হয়ে যাবো। (তিরমিজি)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’ (বুখারি)
wwww.Quraneralo.com

Ramadan Index

নোয়াখালীতে ইফতার ও সেহেরী সময় সূচীঃ
রমজানুল মুবারক।                      রমজানুল মুবারক
   রহমতের ১০ দিন
► ১ রমজান ১৮ মে শুক্রবার সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৪৭  ইফতার ৬ঃ৩৩
► ২ রমজান ১৯ মে শনিবার  সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৪৬ - ইফতার ৬ঃ৩৪
► ৩ রমজান ২০ মে রবিবার  সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৪৫  ইফতার ৬ঃ৩৪
► ৪ রমজান ২১ মে সোমবার - সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৪৫  ইফতার ৬ঃ৩৫
► ৫ রমজান ২২ মে মঙ্গলবার - সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৪৪ - ইফতার্ ৬ঃ৩৫
► ৬ রমজান ২৩ মে বুধবার  সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৪৩ - ইফতার ৬ঃ৩৬
► ৭ রমজান ২৪ মে বৃহঃবার - সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৪৩ - ইফতার ৬ঃ৩৬
► ৮ রমজান ২৫ মে শুক্রবার - সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৪২ - ইফতার ৬ঃ৩৭
► ৯ রমজান ২৬ মে শনিবার - সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৪২ - ইফতার ৬ঃ৩৭
► ১০ রমজান ২৭ মে রবিবার - সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৪২ - ইফতার ৬ঃ৩৮

মাগফেরাতের ১০ দিন
►১১ রমজান২৮ মে সোমবার সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৪২  ইফতার ৬ঃ৩৮
►১২ রমজান২৯ মে মঙ্গলবার সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৪১ ইফতার  ৬ঃ৩৯
►১৩ রমজান ৩০ মে বুধবার  সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৪১ - ইফতার ৬ঃ৩৯
►১৪ রমজান ৩১ মে বৃহঃবার সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৪০ - ইফতার ৬ঃ৪০
►১৫ রমজান ১ জুন শুক্রবার - সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৪০ - ইফতার : ৬ঃ৪০
►১৬ রমজান ২ জুন শনিবার -সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৩৯  ইফতার: ৬ঃ৪০
►১৭ রমজান ৩ জুন রবিবার সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৩৯ ইফতার : ৬ঃ৪১
►১৮ রমজান ৪জুন সোমবার সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৩৯ ইফতার: ৬ঃ৪১
►১৯ রমজান ৫জুন মঙ্গলবার সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৩৯ - ইফতার: ৬ঃ৪১
►২০ রমজান ৬ জুন বুধবার  সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৩৯ - ইফতার : ৬ঃ৪২

   নাযাতের ১০ দিন
►২১ রমজান ৭জুন বৃহঃবার  সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৩৮ - ইফতার : ৬ঃ৪২
►২২ রমজান ৮ জুন শুক্রবার সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৩৮ - ইফতার: ৬ঃ৪২
►২৩ রমজান ৯ জুন শনিবার সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৩৮ - ইফতার: ৬ঃ৪৩
►২৪ রমজান ১০জুন রবিবার সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৩৮ ইফতার: ৬ঃ৪৩
► ২৫ রমজান - ১১ জুন - সোমবার - সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৩৮ - ইফতারের সময়: ৬ঃ৪৪
► ২৬ রমজান - ১২ জুন - মঙ্গলবার - সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৩৮ - ইফতারের সময়: ৬ঃ৪৪
►২৭ রমজান ১৩ জুন বুধবার সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৩৮ - ইফতার: ৬ঃ৪৫
►২৮রমজান ১৪জুন বৃহঃবার সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৩৮ - ইফতার: ৬ঃ৪৫
►২৯রমজান ১৫জুন শুক্রবার সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৩৮ - ইফতার: ৬ঃ৪৫
►৩০রমজান ১৬জুন শনিবার সেহেরির শেষ সময়: ৩ঃ৩৮ ইফতার: ৬ঃ৪৬
রমজানুল মুবারক             রমজানুল  মুবারক

তারাবিহ এর নামাযে রাকায়াত বিতর্কের সমাধান

তারাবীহ নামাজের রাকাআত নিয়ে ঈমাম ইবনু তাইমিয়া র. এর ফাতওয়া :

ইমাম ইবনু তাইমিয়া (র) এর  ফাতওয়া যদি কেউ পড়ে দেখেন, তাহলে আশা করি তারাবীহ নামাজের রাকাআত নিয়ে তিনি বিতর্ক করবেন না। 'মাজমূ’উল ফাতাওয়া' কিতাবে তিনি তারাবীহ এর রাক'আত নিয়ে অত্যন্ত সুস্পষ্ট মতামত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন-
-
১০
কিয়ামু রমাদ্বান ( অর্থাৎ- তারাবীহের নামাজ) এর ব্যাপারে নবী (সা) কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ করেন নি। কিন্তু তিনি রমাদ্বান কিংবা রমাদ্বান ছাড়া অন্য সময়ে ১৩রাক’আতের বেশী পড়তেন না। তবে তিনি রাক’আতগুলো অনেক দীর্ঘ করে পড়তেন।
২০
উমার (রা) এর সময়ে উবাই ইবনু কা’ব (রা) সাহাবাদের নিয়ে ২০রাক’আত পড়তেন এবং তার সাথে ৩রাক’আত বিতর পড়তেন। আর রাক’আতের সংখ্যা বাড়ার কারণে কিরা’আত সংক্ষেপ করতেন মুসল্লিদের জন্য সহজ করার উদ্দেশ্যে। কারণ  দীর্ঘ সময় নিয়ে এক রাকা’আত পড়ার চেয়ে অল্প-অল্প করে অধিক রাক’আত পড়া বেশী সহজ।
৪০
পরবর্তীতে সালাফদের কিছু লোক ৪০রাক’আত পড়তেন  এবং তার সাথে ৩রাক’আত বিতর পড়তেন।
৩৬
সালাফদের মধ্যে আবার কিছু লোক, ৩৬রাক’আত পড়তেন তার সাথে ৩রাক’আত বিতর পড়তেন।
-
এগুলো (অর্থাৎ-১০, ২০, ৩৬, ৪০ রাক’আত) সবগুলোই গ্রহণযোগ্য। তাই উক্ত পদ্ধতিগুলোর যে কোন একটির আলোকে যদি কেউ রমাদ্বানে কিয়ামুল লাইল (তারাবীহ) পড়ে তাহলে সে উত্তম কাজ করলো।
-
তবে এ ক্ষেত্রে সর্বোত্তম কোনটি তা  মুসল্লিদের অবস্থার উপর নির্ভর করবে। যদি মুসল্লিরা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে সক্ষম হন, তাহলে তাদের জন্য (দীর্ঘ কিরা'আতে) ১০রাক’আত পড়ে ৩রাক’আত বিতর পড়াই উত্তম যেমনটি রাসূল (সা) করতেন ।
-
আর যদি মুসল্লিরা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে অপারগ হন, তাহলে তাদের জন্য জন্য ২০রাক’আত পড়ে ৩রাক’আত বিতর পড়াই উত্তম, যেমনটি অধিকাংশ মুসলিমরা করতেন । এতে মধ্যম পন্থাও অবলম্বন করা হয়। কারণ ২০ রাক’আত হলো ১০ ও ৪০ এর এর মাঝামাঝি।
-
আর কেউ যদি ৪০  বা ৩৬রাক’আত পড়ে সেটাও জায়িয আছে।এগুলোর কোনটাই মাকরূহ নয়। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (র) ছাড়াও একাধিক ইমাম এ মত দিয়েছেন।
-
আর যে  মনে করে কিয়ামু রমা্দ্বান (তারাবীহ) এর রাক’আত সংখ্যা নবী (সা) নির্ধারণ করে দিয়েছেন; তাই একে বাড়ানো বা কমানো যাবে না, তাহলে  সে ভুল করেছে।
-----------------------------------------------------------------------------------
(ইমাম ইবনু তাইমিয়ার মাজমূ’উল ফাতাওয়া, খ.২২, পৃ.২৭২)

বৃহস্পতিবার, ১০ মে, ২০১৮

মালয়েশিয়ার নির্বাচন ২০১৮

লিখেছেন Saqib Helal
মালয়েশিয়া নির্বাচন:

১)  কয়েকদিন আগে লিখেছিলাম যে আগাম নির্বাচন অনেক সময় শাসক দলের জন্য ব্যাকফায়ার হতে  পারে,  নিকট অতীতের কয়েকটি শকিং আগাম নির্বাচনের উদাহরণ দিয়েছিলাম যেমন ২০০৪ সালের  ভারতের নির্বাচন আর ২০১৭ সালের ব্রিটেনের নির্বাচন,  তার সাথে আরেকটি ঐতিহাসিক নির্বাচন যুক্ত হলো।  এই সবগুলো নির্বাচনের প্রাক্কালেই জনমত জরিপে শাসকদলগুলোর নিশ্চিত বিজয়ের কথা  বলা হয়েছিল-  অথচ ফলাফল হয়েছে বিপরীত, এককথায় শকিং!  মালয়েশিয়ার এই নির্বাচন বিভিন্ন পাপ আর জঞ্জালে আবদ্ধ চোখে অন্ধকার দেখা  শাসক আর শাসকদলগুলোর  অতি চালাকি সত্বেও যে শেষ রক্ষা হয় না   তার একটা  টেক্সটবুক উদাহরণ হয়ে থাকবে। 

২) মাহাথির-আনোয়ার জোটের বিজয়ের পেছনে সবচাইতে বেশি কৃতিত্ব আনোয়ার ইব্রাহিমের স্ত্রী আর কন্যার।  দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে এমন পারিবারিক বিপর্যয়,   সবচাইতে সেনসিটিভ বিষয়ে আঘাত দিয়ে মানসন্মান নষ্ট করার এমন  নিকৃষ্টতম জঘন্য কুটিলতা,   জেলজুলুম সহ  নানা হয়রানি- ইত্যাদি মোকাবেলা করে একটা  স্বৈরাচারী পাহাড় এর সাথে অনবরত লড়াই করে একপ্রকার শূন্য  থেকে নিজেদের দল/জোটকে আজ ক্ষমতায় নিয়ে এসেছেন এই মা-মেয়ে জুটি।  এরকম তীক্ষ্ন মেধাবী ও সর্বোচ্চ সুশিশিক্ষিত,   অসাধারণ যোগ্যতাসম্পন্ন এবং অদম্য  পরিশ্রমী,  পরিশীলিত আচরণ ও মার্জিত রুচিবোধ ব্যবহার,  সর্বগুণে গুণাণ্বিতা মা-মেয়ে জুটি সারাবিশ্বের ইসলামিস্ট  ফ্যামিলিগুলোতে আর দুয়েকটা আছে কিনা সন্দেহ আছে।  এই বিজয়ের অর্ধেক কৃতিত্ব শুধুমাত্র তাদের দুইজনের।  মাহাথির-আনোয়ার সহ বাকি অন্যরা  সবাই মিলে অর্ধেক!   ডাঃ আজিজাহ ইসমাইল নিজেই প্রাইম মিনিস্টার হবার যোগ্য। তার ত্যাগ অং সান সুচির চাইতে কোন অংশেই কম নয় ।  আনোয়ার ইব্রাহিমের পরম ভাগ্য এমন স্ত্রী পাওয়া,  আর সবচেয়ে বড় সফলতা এমন কন্যা গড়ে তোলা।

৩) আনোয়ার ইব্রাহিম শুধু মালয়েশিয়ার নয়-  বরং সারাবিশ্বের ইসলামিস্ট তথা কনজারভেটিভ মুসলিম নেতৃত্বের মাঝে পাইওনিয়ার ফিগার।  যখন তুরস্ক বা তিউনিশিয়ার ইসলামিস্টদের ক্ষমতায় যাওয়ার কথা কল্পনা করা যেত না তখন আনোয়ার ইব্রাহিম ইসলামিস্ট ব্যাকগ্রাউন্ড সত্বেও অতি সুনাম আর সফলতার সাথেই দীর্ঘকাল ধরে ক্ষমতার কেঁন্দ্রবিন্দুতে।  মুরসি বা ইসমাইল হানিয়া বা এরদোয়ানের নাম শোনার অনেক আগেই আনোয়ার ইব্রাহিম ইসলামিস্টদের কাছে রোল মডেল।  কতটা মেধা, যোগ্যতা আর ক্যারিশমা  থাকলে  একটা  ইসলামিস্ট ব্যক্তি সেক্যুলার পরিবেশে এসেও এমন প্রভাব প্রতিপত্তির সাথে সর্বোচ্চ স্থান পর্যন্ত এগিয়ে যেতে পারে আর নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারে!  তার পলিটিক্যাল আপিল, পার্সোনাল ক্যারিশমা,  আর  প্রফেশনাল কোয়ালিটির সাথে সাথে ইন্টেলেকচুয়াল ডেপ্থ- এক কথায় একজন অলরাউন্ডার।    এতো যোগ্যতা সত্বেও পলিটিক্সের পিচ্ছিল পথে তিনিও হোঁচট খেয়েছেন, কিছু স্ট্র্যাটেজিক  ভুল করেছেন।  এবারের সফলতায় সেসব মুছে যাবে।  তবে তা থেকে আমাদের কিছু শেখার আছে- তাই সেসব  পড়া উচিত।

মাহাথিরের পরে মালয়েশিয়ার প্রাইম মিনিস্টার হবার যোগ্যতম ব্যক্তি যে আনোয়ার ইব্রাহীম তা তো অনেক আগে থেকেই একপ্রকার সবার কাছেই  পরিষ্কার ছিল। মাহাথির নিজেও আনোয়ারকেই নিজের উত্তরসূরি হিসেবে গড়ে তুলছিলেন।  আনোয়ারের অবস্থান এতটা সুদৃঢ় ছিল যে অন্য কেউ মাহাথিরের উত্তরসূরি হবার খায়েশ কখনো প্রকাশ করেনি।   একপর্যায়ে যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটলো- তার পেছনে শুধু মাহাথিরকে দোষ দেয়াটা কোনমতেই  ঠিক হবে না।  আনোয়ার যে কিছু সিরিয়াস মিসক্যালকুলেশন করেছিলেন তা থেকে বোঝা যায় অতি মেধাবী লোক হয়েও এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকেও ক্ষমতার অন্দরমহলের মারপ্যাঁচ এবং ক্ষমতাশীল ব্যক্তিদের মেন্টালিটি তিনিও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেন নি।   তাই যথাসময়ের আগেই তিনি কিছু প্রিম্যাচিউর চাইল্ডিশ  কাজ করে ফেলেছিলেন।   তিনি মাহাথিরের সবচেয়ে সফলতম এবং যোগ্যতম  মন্ত্রী ছিলেন যার জন্য তাকে মাহাথিরের  ডেপুটি বানানো হলো- কিন্তু তাতে মনে হয় তিনি  রিয়েলিটি সম্পর্কে সেন্স কিছুটা হারিয়ে ফেলেছিলেন।  ডেপুটি হয়ে যে তার অবস্থান পাকা হবার বদলে বরং আরো সেনসিটিভ  হয়ে গেছে-  তা বুঝতে পারেন নি।  প্রমোশন সবসময় পজিশন  শক্ত করে না-  বরং অনেকসময় আরো নড়বড়ে করে দেয়।  এতদিন  তাকে মাহাথিরের উত্তরসূরি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছিল,  কিন্তু ডেপুটি হবার পরে আস্তে আস্তে তাকে 'উত্তরসূরি" থেকে "প্রতিদ্বন্দ্বী" করে ফেলা হলো!  এতে আনোয়ারের বিরোধীদের যেমন হাত ছিল তেমনি ওয়েস্টার্ন ইন্টেলিজেন্সগুলোরও হাত ছিল-  যারা কিছুতেই একজন ইসলামিস্ট ব্যাকগ্রাউন্ডের লোককে কোনমতেই শাসক হিসেবে মেনে নেবে না।  তার কিছুদিন আগেই ইন্দোনেশিয়ার সুহার্তোর পতনের পর তার প্রটেজে ভাইস প্রেসিডেন্ট হাবিবি "কনজারভেটিভ মুসলিম" হবার কারণে বেশিদিন থাকতে পারেন নি কারণ পশ্চিমারা চায় নি- অথচ তিনি মেধা যোগ্যতায় সুহার্তোর স্থলাভিষিক্ত হবার সবচাইতে যোগ্যতম ব্যক্তি ছিলেন।  আনোয়ার সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেন নি।  তিনি বরং পশ্চিমাদেরকে অতিমাত্রায় আস্থাভাজন মনে করলেন এবং তাদের ফাঁদে পা দিলেন।  পশ্চিমা মিডিয়ায় উদ্দেশ্যমূলকভাবেই তাকে মাহাথিরের "উত্তরসূরীর" বদলে "প্রতিদ্বন্দ্বী" হিসেবে প্রচার করতে লাগলো।  আনোয়ার এসবের গভীরতা বা মারপ্যাঁচ বুঝতে পারেন নি।  এগুলো মাহাথিরের মনে কিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে- মাহাথির তো তখনো ক্ষমতা থেকে অবসরের সিদ্বান্ত নেন নি- এধরণের লোকেরা কিরকম আত্বসম্মান তথা ইগো কেন্দ্রিক হয়- তা তিনি উপলব্দি করেন নি।  তিনি এসব প্রচারণাকে  পজিটিভ মনে করে আহ্লাদিত হয়ে পড়েন এবং কিছু চরম হঠকারী  কাজ করে বসেন।  মাহাথির একবার বিদেশ সফরে গেলে আনোয়ারকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে যান- আনোয়ার ভারপ্রাপ্তের বদলে স্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর মতো আচরণ করেন, নিজে নিজেই  কিছু পলিসি গ্রহণ করে ফেলেন।  ইকোনোমিক ক্রাইসিসের সময় সরাসরি মাহাথিরের মতের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নেন-  মাহাথিরের বদলে ওয়ার্ল্ড  ব্যাংক এর সাজেশনকে বেশি গুরুত্ব দেন।  আমেরিকা সফরে গেলে লাল গালিচা সংবর্ধনা গ্রহণ করেন, অথচ তার কিছুদিন আগে মাহাথির আমেরিকা সফরে গেলে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়নি!  আমেরিকান থিঙ্কট্যাংকগুলো তাকে নিয়ে বেশ মাতামাতি করে, মালয়েশিয়ার নানা উন্নয়নের জন্য মাহাথিরের বদলে তাকে ক্রেডিট দেয়া শুরু করে, বিভিন্ন জায়গায় তার লেকচার ও মিডিয়ায় ইন্টারভিউর  ব্যবস্থা করে,  অথচ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া সসবসময় মাহাথিরের সমালোচনা করতো।  এগুলো সবই ছিল আনোয়ারকে নিয়ে সিআইএর "ওভারগেম" খেলা- সিআইএ জানতো এতে মাহাথিরের সাইকোলজিক্যাল প্রতিক্রিয়া কি হবে- যা আনোয়ার বুঝতে পারেন নি। মাহাথিরের সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়েও তার মেন্টালিটি বুঝেন নি এবং অতীতে বিরোধী বা প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে মাহাথির কিরূপ আচরণ করেছিলেন- তা  মোটেই চিন্তা করেন নি। বরং মাহাথিরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রচারণা দেখে সম্ভবত নিজেকে সত্যিই  মাহাথিরের মতো জনপ্রিয় বা ক্ষমতাবান মনে করেছিলেন। তাই তিনি  বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে  সবচেয়ে বড় হঠকারিতা করেন দলের নির্বাচনে মাহাথিরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়িয়ে গিয়ে-  অথচ এতদিন মাহাথির অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন।  তার এসব হঠকারী আচরণের মোক্ষম সুযোগ গ্রহণ করে তার বিরোধীরা।  তারা মাহাথিরকে বুঝাতে  সক্ষম হয় যে সুহার্তোর মতো তাকেও ক্ষমতাচ্যুত করার  ওয়েস্টার্ন ষড়যন্ত্র হচ্ছে এবং সেই ষড়যন্ত্রের পেছনে আনোয়ার জড়িত।   তখনকার মালয়েশিয়া এবং পার্শবর্তী ইন্দোনেশিয়ার যে পরিস্থিতি ছিল- সেই পরিস্থিতিতে যে কেউই আনোয়ারের বিরুদ্বে একইরকমের চরম পদক্ষেপ নিতেন।  তারপরেও বিষয়টা হয়তো এতটা তিক্ত বা কুৎসিত হতো না যদি মাহাথিরের নির্দেষক্রমে আনোয়ার স্বাভাবিকভাবে পদত্যাগ করতেন।  কিন্তু সেখানেও তিনি আরেক হঠকারী কাজ করে বসলেন।  সরকার প্রধান হিসেবে মাহাথির যে কাউকে মন্ত্রিসভায় নিতে পারেন,  পদত্যাগের নির্দেশও দিতে পারেন।  মাহাথির যখন আনোয়ারকে পদত্যাগ করতে বললেন তিনি তা  প্রফেশনালি না নিয়ে  বৈঠকে মাহাথিরের সাথে তর্ক শুরু করে দিলেন।  আমার মনে হয় তিনি স্বাভাবিকভাবে পদত্যাগ করলে মাহাথির তার বিরুদ্বে এমন চরম পদক্ষেপ নিতেন না, কিছুদিনের মধ্যেই  তাদের সম্পর্ক আবার রিকোভার করতো এবং মাহাথিরের অবসরের পরেই আনোয়ারই প্রধানমন্ত্রী হতেন।  এতো  কাঠগড় পোড়াতে হতো না,  প্রায় দুই দশক আনোয়ারের জীবন থেকে নষ্ট হতোনা,  মাঝখানে প্রায় দেড়যুগ দুই অপদার্থ শাসকের কবলে পড়ে  মালয়েশিয়ার এমন চরম ক্ষতি হতো না।

৪) মাহাথির-আনোয়ার সম্পর্কের ভাঙা-গড়ার মাঝে ক্ষমতার একটা বেসিক রুল সম্পর্কে সবার জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হলো- এক বনে রাজা একজনই থাকবেন।  যতদিন পর্যন্ত আপনি রাজা হতে পারছেন না- ততদিন পর্যন্ত রাজার যতই প্রিয়ভাজন হন না কেন,  একটু সামলে চলতে হবে।   নিকট অতীতে প্রায় একইরকম একটা ঘটনা প্রায় ঘটতে চলছিল তুরস্কে- এরদোয়ান আর দাউতুগলোর মাঝে।  ভাগ্য ভালো যে দাউতুগলো সেই ভুল করেন নি যেই ভুল আনোয়ার করেছিলেন।  পশ্চিমা মিডিয়াতে অলরেডি দাউতুগলোকে নিয়ে আরেকটা ওভারগেম শুরু করে দিয়েছিল-  তাকে এরদোয়ানের চাইতে বেশি ইন্টেলেকচুয়াল,  এমনকি এরদোয়ানের চাইতে বেশি সৎ ও জনপ্রিয় ইত্যাদি কিছু প্রচারণা শুরু  করে দিয়েছিল। তিনিও প্রথমে কিছুটা আহ্লাদিত হয়ে পড়েছিলেন- প্রধানমন্ত্রী হয়ে নানা সস্তা জনপ্রিয়তার কাজ যেমন বাজার  পরিদর্শনে গিয়ে সাধারণ মানুষকে চুমু খাওয়া সেলফি তোলা ইত্যাদি শুরু করে দিয়েছিলেন।  এরদোয়ানের পছন্দের প্রেসিডেন্ট পদ্দতির বিরুদ্বে  মত প্রকাশ করতে শুরু করেন।  এসব  যে রাজার মনে কিছুটা বিরক্তি সৃষ্টি করছে তা বোঝা গেল রাজা একসময় প্রকাশ্যেই তার অনেকদিনের কাছের বন্ধু এবং আস্থাভাজন পরামর্শদাতা  সম্পর্কে বলে ফেললেন-  "ভুলে যাবেন না আপনাকে কে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে"!   যাইহোক- বিষয়টা বেশিদূর  গড়ানোর আগেই দাউতুগলু  এমিকেবলি সরে পড়েছেন-  তিনিও রক্ষা পেয়েছেন,  তুরস্কও রক্ষা পেয়েছে। বিশ্বের নানাদেশে ইসলামিস্টরা জোটবদ্ব হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে-  তাদের নেতৃত্বপর্যায়ের লোকদের  এই জিনিসগুলো  মাথায় রাখতে হবে।  নিজেদের  পজিশন সম্পর্কে যেন অহেতুক বাগড়ম্বতা পেয়ে না বসে।  কখন কনফিডেন্স দেখাতে হবে আর কখন এমিকেবলি সরে যেতে হবে- সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। 

বাংলাদেশে ২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকারকে  আওয়ামী  মিডিয়ায়  বলা শুরু করে দেয় "খালেদা-নিজামী" সরকার। অথচ দুইজনের ক্ষমতার  অংশের  হিসেবে আকাশ পাতাল পার্থক্য।  কারণ একটাই-  নিজামীকে খালেদার প্রতিদ্বন্দ্বী করে ফেলা।  নিজামী চমৎকার সুবক্তা  ছিলেন,  সংসদে তার হাসিমুখে আস্তে আস্তে বলা প্রাঞ্জল  বক্তৃতাগুলো হতো অসাধারণ স্টেটসমেন সুলভ, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার স্টাইল ছিল গতানুগতিক বাংলাদেশী মেঠো  রাজনৈতিক  ধারার।  এনিয়ে কথা শুরু হলো,  কয়েকদিন পরে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতার ঢং পরিবর্তন করে নিজামীর স্টাইলে "স্টেটসমেন" সুলভ বক্তৃতা দিচ্ছেন,  সাথে নিজামীর মন্ত্রিত্ব পরিবর্তিত হয়ে একধাপ নিচে।  এই হলো রাজা/রানীদের মেন্টালিটি।    এই মেন্টালিটি না বুঝে বেশি ওভারস্মার্ট  দেখাইতে গেলে ধরা খেতে হবে।   ক্ষমতার ধরা শক্ত ধরা,  ক্ষমতার খেলা কুৎসিত  খেলা -  অনেক ভালো মানুষ এসব  কুটিলতা  কল্পনা করতে পারে না, এসব মারপ্যাঁচ বুঝে   উঠতে পারে না,  তাই মাঝে মাঝে ধরা খায়।  কিন্তু কিছু শেয়াল এগুলো ভালো বুঝে।  বাংলাদেশের এরকম একটা ধূর্ত শেয়াল একবার বলেছিল- "খোদা ধরলে ছাড়ে,  কিন্তু হাসিনা ধরলে ছাড়ে  না"-  শেয়ালে শেয়াল চিনতে পেরেছিল!