বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৭

অসম : জাকির রুবেল

স্যার!  আমাকে প্রাইভেট পড়াবেন?
জিনিয়া জিজ্ঞেস করল তার প্রিয় শিক্ষক জনাব কামরুল হাসান স্যারকে। মাত্র ২ মাস হলো স্কুলে জয়েন করেছেন। ইতমধ্যেই সকল ছাত্রছাত্রীর প্রিয় শিক্ষকে পরিনত হয়েছেন। ইংরেজিটা মহা সুন্দর করে স্টুডেন্টদের গুলিয়ে মাথায় ডুকিয়ে দিতে পারেন অনায়াসে। সদা হাস্যোজ্বল ও মিষ্টভাষী। মাত্রই অনার্স শেষ করে প্রথম চাকুরি এই স্কুলে। মহাখালী উচ্চ বিদ্যালয়।

জিনিয়া, দশম শ্রেনীর রোল ৫। খুবই মেধাবী ভদ্র বলে সকল শিক্ষকের কাছে সুনাম আছে তার। তাই জিনিয়ার কথায় রাজি হলেন প্রাইভেট পড়াতে। বাসায় গিয়ে পড়াতে হবে। অনেক জোর করে স্যারকে রাজি করানো হল।পড়ানো শুরু করলেন নাজমূল স্যার।

স্যারের বাসা থেকে জিনিয়াদের বাসা দুই কিলোমিটারের  পথ। কিন্তু এই পথ কোন এক অজ্ঞাত কারনে তিনি প্রতিদিন হেটে হেটেই অতিক্রম করেন। পড়াশোনা চলছে জোর কদমে। প্রতিদিনই চা নাস্তা। প্রতিদিন পড়াশোনা। ইতোমধ্যে দুইমাস পার হল। ২য় সাময়িক পরীক্ষায় জিনিয়া প্রথম হয়েছে। সবার মুখে হাসি খুশি। চলছে  স্যারের জয়ধ্বনি।

স্যারের ভাব ভঙ্গিমা, কথা বার্তা, আচরন সবই জিনিয়ার খুবই ভালো লাগতে শুরু হল। কিশোরী বয়সের এই ভালোলাগা দিনে দিনে ভালোবাসার দিকে গড়াচ্ছিল। মনের গহীন কোনে বয়সের দোষ বা ভালোবাসা যাই হোক না কেন ভালোবাসা চরম আগ্রহে রুপান্তরের দিকে মোড় নিচ্ছে। ভাবনার নদী বয়ে উঝানেতে তরী বাওয়া শুরু হল জিনিয়ার। মনে মনে সে ভীষন খুশি। স্যারের পিটুনীও তার কাছে ভালো লাগে। বকুনিও মিস্টি লাগছে। স্যারকেও এই ভালোবাসার কথা জানানোর কথাও ভাবছে সে। রোমান্টিক মুভিও দেখা শুরু করেছে সে।

সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছেন নাজমুল স্যার। সাদাসিদে সরল টাইপ বলা যায়। এসব নিয়ে কখনো ভাবেন নি। ভাবার প্রশ্নই উঠেনা।

৫ মাস পেরিয়ে গেল। জিনিয়া স্যারকে তার মনের কথা খুলে বলতে পারে নি। চলছে সব কিছুই স্বাভাবিক শুধু,জিনিয়ার মনের ভিতর ঝড় চলছে। কিন্তু একদিন জিনিয়ার মনের আশায় আরেকটু সুবাতাস ছড়িয়ে দিয়ে নাজমুল স্যার বললেন '"
জিনিয়া,  তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল, কিছু মনে না করলে বা রাগ না করলে বলতে পারি?
বলেন স্যার, কোন রাগ করবো না।"
জিনিয়ার মুখটা লজ্জায় ও আনন্দে লাল হয়ে উঠলো। মাথা উপর দিকে উঠাতে পারছেনা সে। উত্তেজনায় নাকের উপর ও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।
কিন্তু সেদিন নাজমুল স্যার কিছুই বললেন না। পরে বলবেন বলে এড়িয়ে গেলেন।চলে গেলেন সেদিনকার মতো।

স্যারের এই কথাটা জিনিয়ার মনে উত্তাপ আরো বাড়িয়ে দিল। রাতদিন এসব ভাবতে ভাবতে জিনিয়ার পড়াশুনা লাটে উঠতেছে। জিনিয়া সিদ্ধান্ত নিল সামনের শুক্রবারে যে করেই হোক সে স্যারকে তার ভালোবাসার কথাটা বলবে। এদিকে নাজমুল স্যারও মনে মনে ভেবে রেখেছেন যে করেই হোক না বলা কথাটা জিনিয়াকে তিনি বলবেনই। সামনে ঈদ। বলতে যে তাকে হবেই।

স্যার কথাটা বলেন না, প্লিজ। আমি রাগ করবো না। না বললেই আমি রাগ করবো --এটা ছিল গত কিছুদিনকার জিনিয়ার নিত্য ডায়লগ। নাজমুল স্যারও কাল বলবো কাল বলবো বলে কথাটা লজ্জায় কিছুতেই বলতে পারছেন না। অবশেষে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।

কুরবানীর ঈদ। আর মাত্র দুই দিন বাকি। অাগামীকালই বাড়ীর উদ্দ্যেশে রওনা দিবেন। আজই তাকে কথাটা বলতে হবে জিনিয়াকে। কিন্তু আজ যে শুক্রবার। উহ!  টিউশন বন্ধ। মনটাই খারাপ হয়ে গেল নাজমুল স্যারের। ফোনটা বেজে উঠলো। মন খারাপ নিয়েই ফোনটা রিসিভ করলেন। জিনিয়ার মায়ের নাম্বার। তবে জিনিয়ার কন্ঠ।  স্যার আজ একটু আসতে হবে, ঈদের পরেতো অাপনি এক সপ্তাহ আসবেন না। ঈদের পরেই আমার পরীক্ষা। গনিতের একটা চ্যাপ্টার বাকি আছে। আজ ওটা শেষ করে দিবেন।
আচ্ছা। ১১টায় আসবো।

ঘড়িতে বরাবর ১১টা। জিনিয়াদের দরজার সামনে দাড়ালেন নাজমুল স্যার। কলিং বেলে চাপ দেয়ার আগে নিজেকে প্রস্তুত কররছেন। যে করেই হোক জিনিয়াকে আজ কথাটা বলতেই হবে। কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে গেল। জিনিয়া মনে হয় দরজা ধরেই দাঁড়িয়ে ছিল। ঘরে ঢুকতেই একটা কড়া  পার্টি পারফিউমের ঘ্রান নাকে প্রবেশ করলো। পাশেই বড় ঘোমটা দিয়ে চমৎকার শাড়ী পরা কে একজন দাঁড়িয়ে। নাজমুল স্যার সেদিকে বেশি খেয়াল না করেই। জিনিয়ার পড়ার রুমে প্রবেশ করলেন। কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করলেন তিনি। প্রতিদিনের আগোছালো রুমটা আজ পরিপাটি করে  সাজানো। আবারো সেই পারফিউমের ঘ্রান। লাল জামদানি পরা সেই মেয়েটা আবারো জিনিয়ার পড়ার ঘরে ডুকলেন। ভালো করে খেয়াল করতেই নাজমুল স্যারতো অবাক। এ যে জিনিয়া! স্যারের দিকে মুখ পরতেই লজ্জায় মুখ ঢাকলো সে। পড়ার সেই চেয়ারটাতে বসলো সে।

জিনিয়াকে আজ সুন্দর লাগছে। লাল একটা জামদানি পরেছে সে। মুখে হালকা মেইকাপ নেয়াতে চেহারা আরো উজ্জল লাগছে। হাতে মেহেদি ও চুড়ি পরেছে। মোট কথা সে সেজেগুজেই এসেছে সে। বাসায় কারো কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছেনা। ছোট বোনটাকেও আজ দেখা যাচ্ছে না । কি ব্যাপার জিনিয়া? আজ এত সেজেগুজে কেন?  কোথাও কি যাচ্ছো নাকি? বাসার বাকিরা কোথায়?

কোথাও যাচ্ছিনা। সাজতে মন চাইছিল তাই সাজলাম। বাসায় কেউ নেই। সবাই নানুর বাসায় গেছে। ফিরতে রাত হবে। আজ আমি বাসায় একা। স্যার আমাকে কি খারাপ লাগছে?  এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে গেল জিনিয়া। নাজমুল
স্যার নিরুত্বর। হালকা লজ্জা ও ভয় মিশ্রিত মুখে জিনিয়ার দিকে আরেকবার তাকালেন। আজ কেন জানি সত্যিই জিনিয়াকে নারী নারী মনে হচ্ছে। ওভাবে এতদিন ভালো করে তাকানোই হয়ে উঠেনি। কড়া পারফিউমের ঘ্রানটা আবারো ফ্যানের বাতাসে নাক ছুয়ে গেল।

  কোন এক বিপদের অাশংকা

সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭

৭১ এ হাসিনা খালেদা কে কোথায় ছিলেন?

 বিশ্লেষন ১:
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ২টায় (তখন ২৬ মার্চ) চট্টগ্রামে ৮ম ইষ্ট বেঙ্গলের সহ-অধিনায়ক মেজর জিয়া পাকিস্তানের সাথে বিদ্রোহ করলেন “উই রিভোল্ট।” অতঃপর বাংলাদেশকে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করেন প্রথমে নিজ ইউনিটের সৈন্যদের মাঝে। অতঃপর কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে নিজকে বাংলাদেশের প্রভিশনাল সরকারের প্রধান হিসাবে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন এবং সকলকে স্বাধীনতার যুদ্ধে শামিল হতে আহবান জানালেন। এ সময় মেজর জিয়ার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে পালিয়ে ছিলেন। কিন্তু ২ জুলাই ১৯৭১ পেট্রোবাংলার কর্মকর্তা ড. এস আবদুল্লাহর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে মিসেস জিয়াকে আটক করে পাক বাহিনী। দুই শিশু সন্তানসহ খালেদা জিয়াকে বন্দি করে পাক বাহিনী প্রথমে রাখে পুরনো সংসদ ভবন এলাকায় (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়)। এরপর সেখান থেকে ক্যান্টনমেন্টের একটি ‘এল’ প্যাটার্নের বাড়িতে রাখা হয়। সেখানে তার সঙ্গে কোনো আত্মীয়-স্বজনের দেখা করতে দেয়া হতো না। দুই শিশুপুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে নিয়ে খালেদা জিয়া সাড়ে পাঁচ মাসের বন্দী ছিলেন ঐ বাড়িতে। অবশেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে বেগম জিয়া শিশুপুত্রদের নিয়ে ছাড়া পান।আর আপনার বর্তমান নেতা শেখ হাসিনাকে মগবাজারের একটি ভাড়া বাড়ি থেকে পাক বাহিনীর লোকজন আটক করে এপ্রিল মাসে। ধানমন্ডি স্কুলের কাছে ১৮ নম্বর সড়কের একটিএকতলা বাড়িতে নিয়ে বন্দি করে রাখে পাক বাহিনী। বাড়িটি সর্বদা পাকিস্তানি সৈন্যদের পাহারায় থাকত। বাড়িতে কোনো আসবাবপত্র ছিল না। ফ্লোরে চাদর বিছিয়ে সবাইকে থাকতে হতো। ড. ওয়াজেদ মিয়া আণবিক শক্তি কমিশনের চাকরিতে যোগ দিলেন। তাকে প্রতি মাসে বেতন দেয়া হতো। পাকিস্তানি সৈন্যরা ওয়াজেদ মিয়া ছাড়া ওই বাড়ি থেকে কাউকে বের হতে দিত না। ওই বন্দী অবস্থায় শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম হয়। হাসপাতাল থেকে শেখ হাসিনাকে আবারও ফিরিয়ে আনা হলো ধানমন্ডি ১৮ নম্বর সড়কের বন্দিশিবিরে। এরপর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে ১৭ ডিসেম্বর ‘৭১ ধানমন্ডির পাক হানাদার বাহিনীর বন্দিশিবির থেকে বেগম মুজিব, শেখ হাসিনাসহ সবাই মুক্তি পান। শেখ হাসিনার ঐ বন্দি শিবিরও ছিলো জেনারেল জামসেদের অধীনে।

বিশ্লেষন ২ ও হাসিনার মন্তব্য:

জাতির বিবেক এবং আওয়ামীলীগের বিবেকের কাছে প্রশ্ন সেই নয় মাস শেখ হাসিনা কই ছিলেন ?

নিজের বগল কি কেউ শুঁকে দেখেছেন ? নাকি অন্যের বগলের গন্ধের খবর নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন ?

পাকিস্তান সেনাবাহিনী সম্পর্কে শেখ হাসিনার মন্তব্যটা একটু দেখুন তার পর উত্তর দিন।

৩রা মে ১৯৮৪ এর এক পড়ন্ত বিকেলে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে বসে গল্প করছেন বঙ্গবন্ধু কন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ কয়েকজন। গল্পে গল্পে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গ উঠলো। প্রসঙ্গ উঠলো ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যে দিয়ে গড়ে উঠা আমাদের সেনাবাহিনীর কথা।

জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে বললেন, এটা একটা সেনা বাহিনী হলো ? এটা একটা বর্বর, নরপিশাচ, উচ্ছৃংখল, লোভী, বেয়াদপ বাহিনী। এই বাহিনীর আনুগত্য নেই , শৃংখলা নেই , মানবিকতা নেই, নেই দেশ প্রেম। এটা একটা দেশদ্রোহী অসভ্য হায়েনার বাহিনী। তোমরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কথা বল। সারা বিশ্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মতো এতো ভদ্র, নম্র, সভ্য, বিনয়ী এ‌বং আনুগত্যশীল বাহিনী খঁজে পাওয়া যাবেনা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মানবিকতা বোধের কোন তুলনাই চলেনা। কি অসম্ভব সভ্য আর নম্র তারা।

পচিশে মার্চ রাতে তারা ( পাকিস্তান আর্মি) এলো, এসে আব্বাকে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব) সেলুট করলো, মাকেও সেলুট করলো, আমাকেও সেলুট করলো। সেলুট করে তারা বলল, স্যার আমরা এসেছি শুধু আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। অন্য কোন কিছুর জন্য নয়। আপনারা যখন খুশি যেখানে খুশি যেতে পারবেন। যে কেউ আপনার এখানে আসতে পারবে। আমরা শুধু আপনাদেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। আপনারা বাইরে গেলে আপনাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা আপনাদের সাথে যাবো। কেউ আপনাদের এখানে এলে আমারা তাকে ভালভাবে তল্লাশি করে তার পর তাকে এখানে ঢুকতে দিব। এসবই করা হবে আপনাদের নিরাপত্তার জন্য। সত্যিই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যা করেছে তা সম্পুর্ন আমাদের নিরাপত্তার জন্য করেছে।

২৬ শে মার্চ দুপুরে আব্বাকে (শেখ মুজিব) যখন পাকিস্তানী বাহিনী নিয়ে যায়, তখন জেঃ টিক্কা খান নিজে এসে আব্বাকে ও মাকে সেলুট দিয়ে আদবের সাথে দাড়িয়ে বলে, স্যার প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আলোচনার জন্য নিয়ে যেতে বলেছেন। আমি আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি। আপনাকে নেওয়ার জন্য বিশেষ বিমান তৈরি(স্পেশাল ফ্লাইট রেডি) আপনি তৈরি হয়ে নেন এবং আপনি ইচ্ছা করলে ম্যাডাম (বেগম মুজিব) সহ যে কাউকে সঙ্গে নিতে পারেন। আব্বা-মা’র সাথে আলোচনা করে একাই গেলেন। পাকিস্তান আর্মি যতদিন ডিউটি করেছে এসেই প্রথমে সেলুট দিয়েছে।

শুধু তাই নয়, আমার দাদীর সামান্য জ্বর হলে পাকিস্তানীরা হেলিকপ্টার করে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকা পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছে। জয় তখন আমার পেটে, আমাকে প্রতি সাপ্তাহে সি এম এইচ নিয়ে ওরা চেকআপ করাতো। জয় হওয়ার একমাস আগে আমাকে সি এম এইচ-এ ভর্তি করিয়েছে। ৭১ সালে জয় জন্ম হওয়ার পর পাকিস্তান আর্মিরা খুশিতে মিষ্টি বাটোয়ার করেছে এবং জয় হওযার সমস্ত খরচ পাকিস্তান আর্মিরাই বহন করেছে । আমরা যেখানে খুশি যেতে পারতাম। পাকিস্তানীরা দুটি জীপে করে আমাদের সাথে যেতো নিরাপত্তার জন্য আমাদের পাহারা দিতো।
আর বাংলাদেশের আর্মিরা! জানোয়ারের দল, অমানুষের দল এই অমানুষ জানোয়ারেরা আমার বাবা-মা, ভাই সবাইকে মেরেছে- এদের যেন ধ্বংশ হয়।

সুত্র : আমার ফাঁসি চাই (৫৩ ও ৫৪ পৃষ্টা)
লেখক : মতিউর রহমান রেন্টু

ভালবাসার গলিত হৃদপিন্ড এখন পোকার দখলে : Zaker rubel


স্কুল থেকে ফিরছেন নাজিম সাহেব। স্ত্রীর ভালোবাসা মোড়ানো ফোন কল পেয়ে খুশি মনে রিসিভ করলেন। স্ত্রী তার পোয়াতি।  মহা খুশিতে তাকে জানালো যে পেটের বেবিটা নাকি আজ নড়াচড়া বেশি করতেছে। কয়েকবার লাথিও মেরেছে নাকি। হালকা ব্যাথা কিন্তু তা সুখানুভূতিতে ভরা। এ যেন এক স্ববর্গীয় সুখ। গাড়ী থেকে নামলেন। তার বাসা মিজান রোড থেকে কয়েক মিনিটের হাটার পথ। প্রতিদিনকার মতো আজো হাটছেন আর মোবাইল ঘাটাঘাটি করছেন।

সামনে একটা ডাস্টবিনে হঠাত নজর গেল। কতগুলো কুকুর ঘেউ ঘেউ করে বাতাশ ভারী করে তুলছে। অারেকটু সামনে এগুলেন তিনি। দেখলেন দলা পাকানো লাল ফুটবলের মত একটা কিছু। পুরোটা কতগুলো পিপড়ের দখলে। হঠাৎ একটা কাকের ডানা ঝাপটানোর করনে পিপড়ের দল সরে গেল। বেরিয়ে এল  মানব শিশুর হাতের মত কিছু একটা। রক্ত লেগে আছে তাতে। আঙুলগুলো অনেক ছোট। মানব শিশু দেখে চারপাশে এদদিক ওদিক তাকিয়েএকটু এগিয়ে গলেন কৌতুহল ও ভয় দুটোই লাগছে। সত্যিইতো। মানুষের বাচ্ছা!  কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না নাজিম সাহেব। সাহস সঞ্চয় করে পকেটের রুমাল বের করে পিপড়েগগুলোকে তাড়ালেন।

না। বাচ্ছাটি বেচে নেই।তার হৃদপিন্ড, ফুসফুস এখন পোকার দখলে । এইতো সেদিন ক্লাশে ছাত্রছাত্রীদের হৃদপিন্ড পড়াচ্ছিলেন। কতবার আঁকার পরেও বোর্ডে সুন্দর করে সঠিক আকৃতি আঁকতে পারেননি তিনি। মহান আল্লাহ কত সুন্দর করে গড়েছেন এ মানব শরীর।   হঠাৎ কেন যাননি তার কান্না পেয়ে গেল। নিজের স্ত্রী ও অনাগত বাচ্ছার কথা মনে পড়ে গেল। আর ভাবতে পারছেন না তিনি।চোখের কোন ঝাপসা হয়ে এল।কার বাচ্ছা, কোথাকার বাচ্ছা এখানে কি করে এল, এসব ভাবনায় ডুবে গেলেন তিনি।  হঠাৎ খেয়াল করলেন প্রায় অর্ধগলিত বাচচ্ছাটির গলায় একটা চিরকুট ঝুলানো। একটি কালো সুতা দিয়ে বাধা। কাঁপা কাঁপা হাত দিয়ে চিরকুটটি নিলেন।

চারপাশে অনেক লোক জমা হয়ে গেল। কেওবা গলিত বাচচ্ছার মা বাবাকে গালি দিচ্ছে, কেওবা হায় হায়! করছে, কেওবা সমাজ নীতি নৈতিকতার বুলি অাওড়াচ্ছে। কেওবা কমিশনার বা পুলিশকে ফোন দিচ্ছে। সবাইকে সাইডে করে চিরকুটটি হাতে নিয়ে পড়ার জন্য বেরিয়ে এলেন বিড় ঠেলে। চারদিক থেকে আরো লোক জড়ো হচ্ছে।

চিরকুট খুলে  প্রথম লাইনটি পড়েই নাজিম সাহেব তো থ। পড়তেছেন আর কাঁদছেন....

নাজিম সাহেব কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে অশ্রুসজল নয়নে চিরকুটটি পড়তে লাগলেন। পায়ের গতি স্লথ হয়ে আসছে তার। রক্তের চোপ চোপ দাগ লেগে আছে চিরকুটে। অপরিপক্ক হাতের লেখা। কোন প্রাইমারীর বাচ্ছার লেখার মত।নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় লেখা চিররকুটটি বানানে ভুলে ভরা। পাঠকের সুবিধার্থে প্রমিত ভাষায়  চিরকুটটি ঠিক এরকম...... "

আমি মরিয়ম। ফাজিলপুর আমার বাড়ি। গরিব বিধায় মা ফেনীতে কাকার বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাবা মাকে ছেড়ে কোথায় গিয়েছে জানিনা। গ্রামের দাদারা বলতেন আমি নাকি অপয়া? আচ্ছা অপয়া কি?আমি নাকি আমার বাবার নিরুদ্দেশের জন্য দায়ী?  আমার জন্মের দিনই বাবা মাকে ছেড়ে কোথায় ছলে গেছেন। মেয়ে হয়েছে তাই। বাবাকে কখনো দেখিনি। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। একবার টানা ৫ দিন ঘরে কোন খাবার না থাকায় মা আমাকে কাকার সাথে শহরের কাকার বাসায় কাজের জন্য পাঠিয়ে দেন। সেই থেকে আমি শহরে।

কাকা আমায় খুব আদর করেন। নিয়মিত খোজ খবর করেন। তিনি খুব ভালো।চাচিমাও ভাল। তবে চাচার মত ভাল না।  তার ছোট ছেলেটা মানে রাজু ভাইয়া খুব খারাপ। আমাকে শুধু শুধু কষ্ট দেন।ভাইয়া অনেক রাত পর্যন্ত পড়েন। তিনি কোন ভার্সিটি নাকি কিসে পড়েন। আমি জানিনা। রাতে অামি ঘুমালে আমার রুমে এসে  এসে শুধু কাতুকুতু দেন।আমার জামার ভিতরে হাত ডুকিয়ে দেন। একদিন অামাকে তিনি খুব কষ্ট দিয়েছেন। খুব ব্যাথা পেয়েছিলাম। সারা রাত কেঁদেছিলাম। তিনি আমার সাথে নোংরামি করলেন। আমি কাকাকে বলে দেব বললে তিনি বলেছেন "আমাকে মরে ফেলবেন। আরো বললেন যে তিনি আমাকে ভালোবাসেন।ভালবাসলে নকি এসব করতে হয়। কিছুদিন পররপর ভাইয়া রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে আমার রুমে এসে আমার সাথে নোংরামি করতেন। আমি ভয়ে আর কাওকে কিছু বলিনি।

৫/৬ মাস পরে একদিন খুব সকালে আমার প্রচন্ড পেটে ব্যাথা। সাথে বমিও করতেছিলাম বাররবার। কাকা আফিস থেকে ফিরে আমাকে নিয়ে গেলেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার পরিক্ষা নিররিক্ষা করে কি যেন বললেন কাকাকে। কাকা এসে আমার মাথায় হাত বুলোলেন। মুখটা তার মলিন। কিন্তু কিছুই বললেন না। বাসায় ফেরার পর রাতে চাচি আমাকে কি কি অনেক কথা জিজ্ঞেস করে প্রচন্ড মারলেন। তিনি আগে কখনো আমায় মারতেন না এই প্রথম তিনি আমায় মারলেন। পরে আমি ভাইয়ার কথা বলেছিলাম যে তিনি আমার সাথে রাতে মাঝে মাঝে যা কররতেন তা সব বলে দিলাম। তিনি শুধু বার বার একথা বললতে নিষেধ  করতেছেন যেন রাজু ভাইয়ার বিষয়ে কাওকে কিছু না বলি।

একদিন রাতে আমাদের পাশের বাসার বুয়া আমায় বললেন যে আমার পেটে নাকি ৬মাসের একটি বচ্ছা আছে। আমি বুঝতে পারছিনা আমার পেটে বাচ্ছা ডুকলে কিভাবে? সেজন্যইতো আমার পেটে ব্যাথা লাগে। আমার খুশি লাগছে যে কাকাদের বাসায় আর কোন ছোট বাচ্চা নেই। তাহলে আমার একজন খেলার সাথী পাব। কি মজা কি মজা।! আমি তার নামও ঠিক করেছি। নামম দেব তার টগর। সারাক্ষন তার সাথে খেলবো, হাসবো আরো কত কি করবো।

সেদিন কাকাদের বাসায় একজন ডাক্তার এলেন। আমাকে একটা ইনজেকশান দিয়ে ঘুমিয়ে দিলেন। সকাল হওয়ার আগেই জেগে উঠলাম। দেখি আমার পাশে একটা দলা পাকানো ছোট বাচ্চা। আমি খুশি হলাম দেখে। কিন্তু ব্যাথায় উঠতে পারছিলাম না। পাশে ফিরে দেখি পাশে বাসার বুয়া আমার পাশে বসে কাঁদতেছেন। তিনি আমাকে বললেন এই তোমার বাচ্ছা। মরে গেছে। মেরে ফেলা হয়েছে তাকে। আমার কাকা ও চাচি নাকি রাতে বাচ্চাটিকে বের করে মেরেছেন। বুয়া আমার সব কথাগুলো একটা কাগজে লিখে বললেন একটা সুতা দিয়ে যেন চিরকুটটি বাবুর গলালায় বেধে দিই। তাতে নাকি কি উপকার হবে। বাচ্চাটা নাকি আবার বেচে উঠবে তাতে।

ব্যাথায় আমি নড়তে পারচিনা। বুয়া আমার বাচ্চাটির গলায় ঝুলিয়ে কেন দিবেন বুঝতে পারছিনা। তবুও লিখলাম।

রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৭

টুনটুনি ও মিনুর গল্প


গল্পে গল্পে শিশুদের প্রকৃতি পরিচিতি :  টুনটুনির হাসি কান্না
_________________________________________
টুনটুনি। বয়স ৬ বছর। শিশু নিকেতনে ক্লাশ টুর ছাত্রী। খুব মিষ্ট একটা মেয়ে। গড়ন ছোট খাটো দেখে মামা তার নাম দিয়েছিল টুনটুনি। অবশ্য এ নামে এখন কেও তাকে ডাকে না। গ্রাম থেকে দাদু এবং আমেরিকা থেকে ছোট চাচ্ছু এলে তাকে টুনটুনি নামে ডাকে। মা তাকে মিনু নামে ডাকে। সে নিজেকে নিজে  বার বার জিজ্ঞেস করেও টুনটুনি নামের ব্যাখ্যা পায়নি। ক্লাশে তার বন্ধু রুনাকে জিজ্ঞেস করেছিল একবার। রুনা তাকে বলেছিল এটা একটা পাখির নাম। যাকে গ্রামে প্রায় দেখা যায়। খুব সুন্দর একটা পাখি। রুনাদের বাড়ী গ্রামে। তাই সে ফুল পাখি সম্পর্কে ভালোই জানে। সে থেকে মিনুর মনে টুনটুনিকে জানার ও সরাসরি দেখার আগ্রহ ক্রমেক্রমে বাড়তেই আছে। কিন্তু গ্রামে যাওয়ার সুযোগ মিলছেনা।

গ্রীষ্মকালীন অবকাশ। মামা আমেরিকা থেকে এসেছেন। দাদুও গ্রামে অাছেন। দাদু অনেক জোর করে মিনুকে গ্রামে নিয়ে গেলেন। যদিও মায়ের হাজারো বারন। এটা করা যাবেনা ওটা করারা যাবেনা। দাদুর বাড়ড়িতে মিনুর যাওয়ার তেমন আগ্রহ না থাকলেও টুনটুনি ইস্যুতে সে প্রায় পাগলপ্রায়। যে করেই হোক সে দেখবেই তার নামের সেই ছোট্ট প্রিয় পাখিটাকে। শুনবে তার টুনটুন গানের সুর। দেখবে তার বাসা। আরো কত কি?
সেদিন আর পাখির বাসা দেখা হলনা। দাদুর মধুর গল্পে গল্পে কেটে গেল সেই রাত।

খুব সকালে টুনটুনি পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে গেল মিনুর।মিনু জানেনা সে পাখিটার নাম কি? মোরগের সকাল বেলার কুক্কুরুকু কুক্কুরুকু ডাকটিও সে এই প্রথমবার শুনেছে। সে দাদুকে জিজ্ঞেস করলো পাখিটার নাম কি?  টুনটুনি নাম শুনে সেতো মহাখুশি। দাদদুকে জোর করে বাহিরে নিয়ে গেল পাকিটাকে দেখবে বলে। কিন্তু পাখিটা তাকে ফাঁকি দিয়ে ফুরুত করে চলে গেল। সকাল সকাল মিনুর মনটা খারাপ হয়ে গেল। তার প্রায় কান্না চলে আসছে। দাদু ও ছোট চাচা অনেক কষ্ট করে তাকে বুঝিয়ে বলল যে তাকে অবশ্যই তাকে টুনটুনি দেখাবে। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

ছোট চাচ্ছু  বলছেন এবং দেখাচ্ছেন। মিনু মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে আছে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছে এবং দেখছে। ঘরের পেছনে ছোট্ট একটা ডুমুর গাছ।জীবনে এই প্রথমবার সে ডুমুর গাছ দেখছে। খুব সুন্দর করে একটা বড় পাতা ভাঁজ করে বাসা বানিয়েছে পাখিটি। বাড়ীতে তার বয়সী সব শিশুদের ডেকেছেন ছোট চাচ্ছু। সবাই একটু দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে টুনটুনির বাসা। হঠাৎই একটা টুনটুনি পাখি ফুরুত করে ডুকে গেল বাসাটিতে। ভেতরে হালকা খড়কুটো। মিনুর আশা পূর্ন হল। এত সুন্দর একটা পাখি। যার নাম টুনটুনি। মিনুর নামও টুনটুনি। ছোট চাচ্ছু পাখিটির বর্ননা দিতে দিতে টুনটুনিটি   বাসা ছেড়ে আবার ও বেরিয়ে গেল। বাসার কাছে গিয়ে তারা দেকতে পেল বাসায় দুটো একেবারে ছোট ছোট দুটো ডিম আছে। টুনটুনি ওরফে মিনুর মনটা আজ ভীষন খুশি। তার টুনটুনি নামটিই সুন্দর। আজ থেকে মিনুর নাম মিনু নয় টুনটুনি নামেই সে সবার নিকট পরিচিত হবে। টুনটুনিকে যে  সে  খুব ভালোবেসে ফেলেছে। তা চোখো পাখিটি  ও পাখির বাসাটি ভাসছে। পাখিটি সম্ম্পর্কে সে জেনেছে যে

"'''টুনটুনি আকারে ছোট পাখি। এদের যত চালাক পাখি ভাবা হয় আসলে তা নয়। এরা যেমন চালাক তেমন বোকা। টুনটুনি বিপদ দেখলেই চেঁচামেচি করে। ফলে সহজেই শত্রুর কবলে পড়ে।

টুনটুনির ইংরেজী নাম Common tailorbird অর্থাৎ দর্জি পাখি। এরা গাছের পাতা ঠোঁট দিয়ে সেলাই করে বাসা বানায়।বৈজ্ঞানিক নাম--Orthotommus sutoriu

দেহের গঠন :

টুনটুনির বুক ও পেট সাদাটে। অনেকটা মাটির ঢিলার মত। ডানার উপরিভাগ জলপাই-লালচে। মাথা জলপাই-লালচে। চোখের মনি পাকা মরিচের মত।বুক সাদা পালকে ঢাকা। লেজ খাড়া, তাতে কালচে দাগ আছে। ঋতুভেদে পিঠ ও ডানার রঙ কিছুটা বদলায়।

টুনটুনির খাদ্য:

টুনটুনি বিভিন্ন রকম খাবার খায়। এরা অনেক অপকারী পোকামাকড়,কীটপতঙ্গ খাদ্য হিসেবে খায়। তাছাড়াও ছোট কেঁচ, মৌমাছি, ফুলের মধু, রেশম মথ ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে। ধান-পাট-গম পাতার পোকা, শুয়োপোকা ও তার ডিম, আম পাতার বিছা পোকা তাদের খাদ্য তালিকায় আছে।

টুনটুনির বাসা:

টুনটুনির বাসা খুব বেশি উচুতে হয়না। সাধারনত এরা ৬-১০ সেমি উচ্চতায় বাসা বাধে। ছোট গুল্ম জাতীয় গাছ অথবা ঝোপঝাড় এদের প্রধান পছন্দ।শিম, লাউ, কাঠ বাদাম, সূর্যমূখী, ডুমুর, লেবু এগুলো গাছে এরা বেশি বাসা বাধে।পুরুষ ও স্ত্রী পাখি মিলে বাসা তৈরী করে।""""