শুক্রবার, ২৩ জুন, ২০১৭

বর্নবাদ :কোন প্রশ্নটি ঠিক? "সে কালো নাকি সুন্দর? " অথবা "সে কালো নাকি সাদা?"

আপনি, আমি, আমরা হরহামেশাই এই কথা জিজ্ঞেস করি মেয়েটি সুন্দর নাকি কালো? /ছেলেটি সুন্দর নাকি কালো? মাথায় হাত রেখে বলুনতো ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত বিপরিত শব্দের কোথাও কি পড়েছেন কালোর বিপরীত শব্দ সুন্দর?  না - আপনি পড়েন নি। আপনি পড়েছেন কালোর বিপরীত সাদা। আর কুৎসিৎ এর বিপরীত সুন্দর। এটাতো সুস্পষ্ট এক বর্নবাদী প্রশ্ন করলেন আপনি?  সুকৌশলে শেতাংগদের শেখানো বুলিটা আউড়ে গেলেন। যারা কৃষ্ঞাঙ্গ দের মানুষই মনে করতো না এখনো করেনা। কালোদের হাটা পথে তারা হাটতো না। কালোদের খাওয়ার স্থানে তারা খেতো না। কেও কেও হয়তোবা বলবেন জাকির সাহেব কালো দেখে নিজের পক্ষে ওকালতি করতেছেন। আরে না ভাই আমি আমার রং নিয়ে অসন্তুষ্ট নই কারন তাতে আমার হাত নেই? 
বিয়ের বাজারেতো কালোরা হিজড়ার সমতূল্য!

আচ্ছা কালো রংয়ের কোন কিছুই কি সুন্দর নয়? আপনার মাথার কেশ কালো, কাবা শরিফের গিলাফ কালো..... ইত্যাদি কোটি উদাহারন দেয়া যায়। থাক সেটা দেবো না। কালোদের জন্য আমাদের ভাষাও বড় বর্নবাদী। দেখুন না কিছু শব্দ ২৫ শে মার্চের কালো রাত? আরো কত কি?  বর্নবাদকে উসকে দিচ্ছে আজকের দুনিয়ার মিডিয়া ফেয়ার এন্ড লাভলির কথাতো সবাই জানেন। ফেয়ার এন্ড লাভলীতো সাদা ব্রিটিষদের পন্য যারা দাস প্রথা বা বর্নবাদকে লালন করতেন।

এখনও বাবা-মা মেয়েটার গায়ের রং চাপা বলে দুঃখবোধ করে। কিভাবে মেয়ের বিয়ে দিবেন সেটা নিয়ে ভাবিত হন। কালো মেয়েটি পড়া-লিখা কিম্বা ক্যারিয়ার এর চেয়ে বেশী চিন্তা করেন কিভাবে তার গায়ের রঙ ফরসা করা যায়। গায়ের রঙ কালো হবার জন্য হীনমন্যতায় ভুগে। তাদের এই হীনমন্যতা আরো বাড়িয়ে তুলে বিজনেস করে যায় বহুজাতিক কোম্পানী আর বিউটি পারলার গুলো। চ্যানেলে চ্যানেলে হয় সুন্দরী প্রতিযোগিতা। 

ফেয়ার এন্ড লাভলী কখনো-সখনও নয়, প্রতিদিন মাখা চাই, না হলে সেটা হবে নিজের সাথে চিটিং। কারন তা না হলে রঙ ফরসা হবে না, আর রং ফরসা না হলে পুরুষ দের চোখে তোমার কোন দাম নাই। এমন কি অফিসে মিটিং এর আগে পাচ মিনিট সময় পেলেও এর ফাকে মেখে নিতে হবে ফেয়ার এন্ড লাভলী। কারন, তা না হলে মিটিং-এ যে সমস্ত পুরুষ অংশগ্রহন করবে তাদের দৃষ্টি তোমার দিকে আকৃষ্ট হবে না, তোমার বিদ্যা এবং পজিশনের গুরুত্ব যাই হোক না কেন। 

কারন হে নারী, তোমাকে আমরা মা-হিসাবে কিম্বা বোন হিসাবে কিম্বা নিদেন পক্ষে একজন মানুষ হিসাবে দেখতে চাই না, কারন তা আমার দ্বায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়, নিজের লালসা কে দমন করার মত একটা কঠিন কাজের সম্মুখিন করে দেয়।

আমরা চাই এমন নারী যে প্রথম দৃষ্টিতেই হৃদয় হরণ করবে, মনে লালসার ঢেউ তুলবে, যার পাশের সীটে বসবার কাড়াকাড়ি পড়বে। যার কাপড়ের স্বল্পতা দেখে আমার মনে দুঃখবোধ নয় বরং খুশীর সৃষ্টি হবে। এই কথা আমাদের শিখাচ্ছে আমাদের অল্প-শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত পুর্ব-পুরুষরা নয়, খোদ আধুনিক যুগের বহুজাতিক কোম্পানিগুলি। 

বংশ কৌলিন্য ও বর্ণবাদ বিষয়ে মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোন অনারব ব্যক্তির ওপর কোন আরববাসীর এবং কোন কৃষ্ণাঙ্গের উপর কোন স্বেতাঙ্গের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের একমাত্র মাপকাঠি হল তাকওয়া।’ উক্ত বক্তব্যে মহানবী (সা.) বংশ কৌলিন্য বর্ণবাদ প্রথাকে স্থান দেননি।

 বর্ণবাদ সমাজ শোষণের এক অন্যতম হাতিয়ার। ইসলামে বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই। ইসলাম বর্ণবাদকে নির্মূল করে আদর্শ রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করে এর উদাহরণ বিশ্ববাসীর সামনে পেশ করে গেছে। তাই তো আমরা দেখতে পাই হাবশার হজরত বিলালকে (রা.) ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিনরূপে।

বর্নবাদ নিপাত যাক।

বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭

ঈ এবং ই বিতর্ক। অযথা সময় নষ্ট। অনেকটা "কাজ নাই তো খৈ ভাজ এর মত।

শতকরা ৯৫ ভাগ বাঙালিকে যদি ৫ বাংলা শব্দ দিয়ে বলা হয় যে এগুলোর মধ্যে তৎসম, অর্ধতৎসম, তদ্ভব, দেশি এবং বিদেশী কোনটা তা আলাদা করুন, তবে আমার মনে হয় এদের মধ্যে কেউ তা আলাদা করতে পারবেন না। এমনকি বাংলার ছাত্র ছাত্রীরাও সকলে তা পারবে বলে মনে হয় না। যে কারণে চিরকাল সাধারণ ছাত্র ছাত্রী হ্রস্ব ও দীর্ঘ স্বরের বানান নিয়ে বিপদে থাকে। আইন যদি সবার জন্য সমান হয় তবে তৎসম শব্দের জন্য আলাদা নিয়ম কেন? আর বাংলা একাডেমির যদি বানানের নিয়ম শৃঙ্খলা আনয়নের আইনগত ভিত্তি থাকে তবে তারা এটা করে না কেন যে সকল দীর্ঘ স্বর বাদ এবং সেই সাথে জ, ন, র, স সবগুলোই একটি । তাতে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা বাংলা বানানের ঝক্কি থেকে কিছুটা মুক্তি পায়। বাংলার তাবৎ বিশেষজ্ঞরাই যেখানে এখন পর্যন্ত বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধির মত বিশেষ বিষয় টিকিয়ে রেখেছেন সেখানে আরও কিছু বিশেষ নিয়ম থাকলে সমস্যা কোথায়? মানুষের জন্য করা কোন আইন বা নিয়মই শতকরা শত ভাগ সম্ভবত পালন সম্ভব নয় কারণ মানুষতো শতভাগ নিখুঁত হতে পারে না। যে কারণে দরকার হয় বিশেষ নিয়মের। তারপরও ভাষা বিশেষজ্ঞরা বৈজ্ঞানিক ভাবে বানানের শৃঙ্খলা আনয়নে কাজ করে যাবেন যাতে ঝামেলা কমে, সে আশা রাখি।

আজাদ পত্রিকা ৫০ বছর চেষ্টা করেছে ইকবালকে একবাল, ইসলামকে এসলাম লিখতে। টেকেনি। ভাষা বেশি ইডিওসিনক্রেসি বা মতাচ্ছন্নতা পছন্দ করে না।

বানান তো বানান, ভাষা নিজেই কালে কালে বদলায়। সেসব পরিবর্তন মূলত ভাষাভাষী জনগণ থেকে আসে। কিন্তু যখন প্রতিষ্ঠান ওপর থেকে কোনো অপ্রচলিত বানান প্রবর্তন করতে চায়, তখন এসব অপ্রচলিত বানান প্রবর্তনের তাগিদ কোথা থেকে এল, আবার সেই অর্বাচীন বানান প্রাচীনটির চেয়ে কিসের দিক থেকে ‘সংগততর’-এমন সব প্রশ্ন না উঠে পারে না। কথাগুলো অবশ্যই বাংলা একাডেমির অনুধাবন করা উচিৎ।

আমদের যে কোন বিতর্কে একটা বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে সেটা হল যুক্তি । এখন সবকিছুতেই যদি আমরা গণতান্ত্রিক ধারায় ভোটাভুটি করি তবে সেটা হবে শিক্ষার অবমাননা , শুধু বাংলা ভাষা নয় বিশ্বের প্রায় সকল ভাষাই দীর্ঘ গবেষণা ও কাল পরিক্রমার ধারাতে একটা পরিশীলিত রুপ পরিগ্রহ করেছে । লিখার ক্ষেত্রে প্রমিত শুদ্ধ ভাষা নিরভর করে বানানের উপর আর তা উচ্চারিত হয় প্রমিত উচ্চারণ , যার জন্য একই অর্থের অনেক শব্দ থাকতে পারে বা আছে । সাধু ভাষা এক বাঞ্জনা পেয়ে থাকে লিখতে যা লেখককে স্বাতন্ত্র্য দেয় আর তার গভীরতাকে নান্দনিক মননশীলতা দান করে কিন্তু কথ্য ভাষা চলতি কথায় ব্যবহার হয় ।

এখন যদি প্রশ্ন ওঠে কি দরকার সাধু ভাষার ? কথ্য ভাষাতেইতো সব কাজ চলে ,মনের ভাব প্রকাশ পরিপূর্ণ ভাবেই করা যায় তাই সাধু ভাষা উঠিয়ে দাও - তার পিছনে যদি গণতান্ত্রিক যুক্তি গ্রাহ্য করা হয় তবে বৃহৎ স্বল্প শিক্ষিত সমাজ সাধু ভাষাকে উঠিয়ে দেবার পক্ষেই রায় দেবে নিঃসন্দেহে । কিন্তু সাহিত্যে যে বিপর্যয় নেমে আসবে তা বোধ করি প্রজ্ঞাবান কাউকে বোঝানোর দরকার হবে না।আজ যে একটা অযৌক্তিক বিষয় অবতারণা করে হ্রস্ব ই , দীর্ঘ ঈ প্রসঙ্গে মাঠ গরম করা হচ্ছে তার আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা? কবি গুরুর হিংটিংছট এর মত রাজাকে বোঝাতে যবন পণ্ডিতের গুরু মারা চেলার আগমন রোধ করা যাবে না । এখন যখন প্রসঙ্গ উঠেই পড়েছে তখন যুক্তির প্রশ্ন উঠবে এবং তা যুক্তির মাধ্যমেই ফয়সলা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে । এক্ষেত্রে আমার যুক্তি হচ্ছে - যেহেতু 'ই' এবং ' ঈ ' দুটি অক্ষরই অভিধানে আছে আর তা সংজ্ঞাসহ বিদ্যমান তাই এ ক্ষেত্রে প্রচলিত শব্দটা যখন বহুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং তা কোন সমস্যার সৃষ্টি করছে না তাই 'ঈ' থাকলে দোষ কি - বৃথাই বিতর্কের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না । আবেগপ্রবণ জাতি আমরা বাঙ্গালী অসংখ্য সমস্যা জর্জরিত নতুন সমস্যা সৃষ্টির কন মানেই হয়না।

শনিবার, ১০ জুন, ২০১৭

সম্পতিতে নারীর অধিকার ও ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং

সম্পত্তিতে নারীর অধিকার ও ইমোশনাল ব্ল্যকমেইলিং
______________________________Zaker Rubel

®আধুনিক সমাজে এখনো নানা ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে নারীরা। আর এসব বঞ্চনার মধ্যে পরিবারের সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঘটনা অন্যতম। সমাজ ব্যবস্থার পরির্বতনে এখনো অনেক নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন নয়। গ্রামে এখনো অনেক নারী উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সাধারণত মুসলিম আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তিতে একজন ছেলে সন্তান যে সম্পদের ভাগ পায়, কন্যা সন্তান তার অর্ধেক ভাগ পায়।

®একজন নারী সন্তান হিসেবে মা-বাবার কাছ থেকে, স্বামী মারা গেলে স্ত্রী হিসেবে স্বামীর কাছ থেকে, মা হিসেবে সন্তানের কাছ থেকে সম্পত্তির অংশ পায়। সব অংশ যোগ করলে এবং উল্লিখিত সব দিক বিবেচনা করলে নারীর অংশের সম্পত্তি, মা-বাবার কাছ থেকে পাওয়া পুরুষের অংশের সম্পত্তির চেয়ে বেশিই হয়।

®©কিন্তু শুভংকরের ফাঁকি টা অন্য যায়গায়। যাকে বলা যায় ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল। নারীরা সম্পত্তি বা হক বা অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে ইমোশনালী প্রতারিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যেমন : আপনি ভাই, তাই বোনের ২০ লাখ টাকার জমি ইমোশনের ট্র্যাফে তাকে আটকে রেখে ২০ হাজার টাকায় কিনে নিলেন। অথবা বোনদের মাথায় পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে এমন একটা বিষয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন যে "বাবার হক নাকি মেয়েদের সহে না "। আরো দেখেন যে ইমোশনালী তাদের মাথায় এটা ঢুকিয়ে দিয়েছি যে ভাইকে সম্পত্তি দিয়ে আসো ভাই তো আপনজনই। অার গ্রামে সম্পতি ভাগের সময় বোনদের জন্য এমন যায়গা নির্বাচন কর যেটার দাম খুব কম অথবা প্রোপার এরিয়াতে নেই, জলায় বা ডোবায় অথবা চরের কাছে। আরো একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন যে অধিকাংশ নারীই ভাইদের নিকট থেকে সম্পত্তি হক না নেওয়ার কারন হল "'হক নিয়ে অাসলে ভাইয়েরা অার দেখভাল করবে না "" এটা ১০০% সত্য। হক অানার পর ভাইদের সাথে বোনদের আর তেমন সম্পর্ক থাকে না। তার মানে এই দাঁড়ালো যে সম্পর্ক বাবার সম্পত্তি পাবার  জন্য ভাই বোনের সম্পর্কের কোন মূল্য নাই।
সম্পতি ভাগ হওয়ার অাগেই ভাই বিদেশ যাবে বা অন্য কোন দরকারে কৌশলে বোনদের স্বাক্ষর নিয়ে হরহামেশায় বাবার সম্পতি বিক্র করতেছেন কিন্তু ভাগ করার সময় বোনদের সেই সেক্রিপাইসের কথা অার মনে রাখেন না। মনে রাখেন শুধু নিজের ২:১ এর কথা তাও অাবার..................।

®©অভাবে মরতেছে তবুও বাবার বাড়ি থেকে হক অানবেন না। কারন ভাইয়েরা কি মনে করবে?  অর্থাৎ আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীদের মাথায় এমন ইমোশনাল বিষয়গুলো ডুকিয়ে দিয়েছি যে তারা সম্পতি চাইবেও না নিবেওনা। অর্থাৎ যত অাইনই থাকুক না কেন সিস্টেমে তাদের বঞ্চিত করবোই। যে মাওলানা নিয়মিত নারী অধিকারের পক্ষে আল্লাহ প্রদত্ত হুকুমের ওয়াজ করেন, যে নেতা প্রতিনিয়ত নারী অধিকারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন তিনিও, যিনি প্রতিদিন সহনশীলতার স্ট্যটাস দেন তিনিও /তাদেরকেও দেখি হরহামেশায় নিজের বোনের অধিকার মেরে দিতে বা না দিতে বা বেশিরভাগই বঞ্চিত করতে।

এসব লিখা দেখলে অনেকে অাবার অামাদের নারীবাদী বলেও নিজেদের চুলকানী শুরু করেন। যিনিই এই স্ট্যটাসটা পরবেন অনুরোধ রইলো একবার অন্তত নিজের অাশেপাশে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবেন কতটা নির্মম সত্য এটি।