শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০১৯

লাশের জিজ্ঞাসা? : জাকির রুবেল

দৃশ্যপট-১
কবরে একটা লাশ নামানো হচ্ছে। ধোয়ানোর পরও রক্ত বন্ধ হয়নি। সাদা কাফসন রক্তে লাল। সবাই বলাবলি করতেছে মাথার খুলিটা অাছে মগজ পাওয়া যায়নি। খুব হৃদয় বিদারক ঘটনা উপস্থিত সবাই চিৎকার করে করে কাঁদতেছে। পুকের পাশে কবর খোঁড়া হয়েছিল। পুকরের অন্য পাশে লাশের বাড়ি। জোরে জোরে বিলাপের কান্নার অাওয়াজ পুকুর চাপিয়ে এপাড়েও অাসছে। সবচেয়ে বেশি কান্না করতেছে লাশের একমাত্র মেয়েটা। যার জন্য বাবা বলেছিল জ্যামিতি বক্স ও রং পেন্সিল অানবে বলে কথা দিয়েছিল। বাবা যে অাজ এসেছিল বাড়ি কিন্তু মৃত লাশ হয়ে। মেয়েটি গড়িয়ে গড়িয়ে কান্না করছে।
হঠাৎ একটা চিৎকারে সবার কান্না থেমে গেল। সবাই হতবিহ্বল ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গল কথাটা শুনে। মাওলানা সাহেব চিৎকার  করে বলছেন "কবর থেকে লাশ উদাউ!  কবর থেকে লাশ উদাউ! হুড়মুড়িয়ে সবাই কবরের কাছে যেতে থাকলো। সবাইকে নিবৃত্ত করর হুজুর যা বললেন তাতে সবার চোখ অারো চানাবাড়া হয়ে গেল। হুজুর বলতে লাগলেন " যখন লাশকে ধরে অামি কবরে নামাচ্ছিলাম তখন লাশটি কবরে যেতে অস্বীকৃতি জানালো, অামাকে বললো "যতক্ষন পর্যন্ত অামার একটি প্রশ্নের উত্তর পাবো না ততক্ষন পর্যন্ত অামি কবরে যাবো না!"
কান্না করে জোরে জোরে কবরে যেতে চাইছিল না। কিন্তু কবরে নামানোর পর হঠাৎ দেখি লাশ উদাও।

দৃশ্যপট -২
আমি লাশ, হুমায়ন অামার নাম।
ঢাকার গুলশান অাবাসিক এলাকার একটি বিলাসবহুল ১০ তলা ভবন। চারদিরে উচু দেয়ালে ঘেরা। সুদৃশ্য গেইট। গেইটে খাকি পোশাক পরা লম্বা গোঁফওয়ালা দুজন গেইটম্যান হাতে লাঠি নিয়ে দুপাশে দাঁড়ানো। গেইটের উপরে এবং দুপাশে লতানো ফুলে অাবৃত। গেইটের খোলা অংশ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম৷ বিশাল বাগান বাড়ি। সামনে কয়েকটা বিলেতি কুকুর। অামাকে দেখে ঘেউ ঘেউ রবে ডেকে উঠলো। একজন মালি দৌড়ে এলেও কাওকে না পেয়ে চলে গেল, একজন গেইটম্যান দৌড়ে লাঠি হাতে ভেতরে ঢুকে কেও অাছে কিনা খুজতে লাগলো। অাশ্চার্য শুধু কুকুরগুলো ছাড়া কেও অামাকে দেখতে পাচ্ছেনা কেন বুঝতে পারছিনা। কয়েক ফোটা রক্ত তখনো টপ টপ করে পড়তেছিল৷ পেটের সেলাইটা যেন এখুনি খুলে যাবে এমন মনে হচ্ছিল! শালার হাসপাতালের লাশকাটা ডোমটা অামার পেট কেটে চৌচির করে সব নাড়িবুড়ি বের করলেও ভালো করে সেলাই করে দেয়নি। ধীর পায়ে সামনে এগুতো লাগলাম। পায়ে অতটুকু শক্তি নেই দুই বড় হাটু পেটে চৌচির। শক্ত করে বেধে দিয়েছিল ডোম।

অারো সামনে এগুতো লাগলাম। একটা দোলনা।দুলতেছে। অামার মেয়ে হুমায়রার বয়সি একটি মেয়ে তাতে দুলতেছে। হাতে একটা বাস্কেটবল। দোলনাটা ঠিক বাগানের মাঝখানে। দুলছে অার গুনগুনিয়ে কি যেন গাইছে। মেয়েটা অামার সারাক্ষন একটা গান নিয়ে পড়ে থাকে। একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার, সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার! হঠাৎ মেয়েটি কি মনে করে বলটু ছুড়ে ফেলে দিয়ে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে দোতালায় উঠে গেল। অামিও পিছু নিলাম অাস্তে আস্তে। অামার শরীর থেকে পড়া রক্তের ফোটাগুলো সাদা মার্বেল পাথরের টাইলসগুলোতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। দোতলায় উঠে দেখলাম একটা লিফট। মেয়েটা লিফটের সামনরে দাড়িয়ে লিফটে উঠার জন্য। লিফট খুলে গেলো। মেয়েটার সাথে অামিও লিফটে ডুকে পড়লাম। অামার রক্ত লিফটেও লাগানো অাছে। মেয়টা অামাকে কেন দেখতে পাচ্ছেনা বুঝতেছিনা। গেইটম্যান গুলোও অামাকে দেখতে পাইনব।

সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০১৯

ফাঁইস্যা গেছিরে : মাইনকার ছিপায়, জাকির রুবেল

রোজ রাতেই আমি টের পাই আমার বড় মেয়ে রাতে পুনুর পুনুর করে ফোনে কথা বলে। আমি ওর রুমে গেলেই একেবারে চুপ হয়ে ঘুমের ভান ধরে ব্যাঙের মতোন পরে থাকে। আমি ওর মা আমিও এমন করে ওর বাপের সাথে প্রেম করতাম।তখন ফোন ছিল না, রাতে চিঠি আদান প্রদান করতাম। আব্বারে দেখলে আমিও ব্যাঙ মরার মতোন পড়ে থাকতাম।

ভাবলাম আমার কিছু একটা করতে হবে। আমার আব্বা কলেজ যাওয়া অফ করে দিছিলো তাই আমি পালিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আমি ডিজিটাল মা, আমার এসব করা চলবে না।
টেকনিক করে মেয়ে যখন ওয়াশ রুমে গেল আর ওর ফোনখানা নিয়ে দেখি রিসিভ কল ভর্তি হয়ে আছে একটি নম্বর। আর তা জান নামে সেভ করা।সুন্দরভাবে ওই নম্বর টুকে নিলাম।
ব্যাস! রান্না ঘরে গিয়ে ওই নম্বরে মেসেজ দিলাম, জান আমি লিমু, এটা আমার নিউ নম্বর। আগের নম্বরে ভুলেও কল দিবা না। ওটা মায়ের কাছে। ওই নম্বর ব্লাক লিস্টে দেও। এখন থেকে মেসেজিং করবো। মা টের পেয়েছে সব। তাই কিছুদিন কথা বলা যাবে না।
ওপাশ থেকে টুং করে ফিরতি মেসেজ, আচ্ছা জান। কী করছো সোনা?
মনে মনে ভাবি, তরে একবার হাতের নাগালে পাই সোনা পুড়ে তামা বানামু।
আমি মেসেজ দিলাম, কিছু না জান। মন খারাপ।
.
এভাবেই আমাদের মেসেজিং চলতেই রইল, চলতেই রইল। ৫ দিনের মাথায় আমি ভোর রাতেও বারান্দায় গিয়ে মেসেজিং করি। আমার বর মহাশয় ইদানীং আমার দিকে কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। তাতে কিছুই আসে যায় না। আমার মেয়ের লাইফ আগে। আমি অনেকদিন মেসেজিং করলে আমার মেয়ে ওদিক থেকে ওই ছেলেকে ভুলে যাবে।
ইদানীং আমার মেয়েকেও মন মরা দেখি। নম্বর ব্লক লিস্টে দিয়েছে কিনা।
যাক, অবশেষে আমি ভাবলাম আমি সেই ছেলের সাথে দেখা করি। ওকে গিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে আসবো। তাহলেই সাকসেস।
সাজুগুজু করছি, মন বেশ ফুরফুরা লাগছে আজ সেই বেয়াদপকে চরম ধোলাই দিবো।
আমার বর মশাই পেপার পড়া বাদ দিয়ে আমায় আড়চোখে দেখছে আর জিজ্ঞেস করছে কী, কই যাও?
ওকে বললে ও ব্যাপারটা নিয়ে হাইপার হবে। তাই বললাম, বাজারে কিছু কেনার আছে
- এই বিকেল বেলা?
তো? মধু নাই বাসায়। তুমি তো জানো সকালে খালি পেটে আমি মধু খাই। ডায়েটে আছি তো।
.
বাসা থেকে নেমে পার্কে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। অল্প বয়সী কাউকেই দেখছি না।কিন্তু আমার বরের চেয়েও বয়স্ক লোক আমার পাশে ঘুরঘুর করছে।
ফোনটা হাতে নিয়ে আবার মেসেজ দিলাম কই তুমি?
ওপাশ থেকে মেসেজ না দিয়েই কল দিলো। আমি রিসিভ করে চুপ করে আছি।কি অদ্ভুত আমার পাশে দাঁড়ানো লোকটির কানেও ফোন আর আমার দিকে শকুনের মতন তাকিয়ে আছে। আমি কেটে দিয়ে আবার কল দিলাম। আমি আরো শিহরিত হলাম। ফোন বাজছে ওই লোকের হাতেরটাই।
রেগে গিয়ে বললাম, আপনিই সেই মানুষ! ছিঃ মেয়ের বয়সী একজনের সাথে প্রেম করতে লজ্জা লাগে না। আবার তারে জান, সোনা ডাকেন!
লোকটি তীব্র দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, বেত্তমিজ মহিলা, তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকছে আর এখন বাচ্চার বয়সী ছেলেকে বিরক্ত করেন!
ঝগড়ার এক পর্যায় জানতে পারলাম, আমার মেয়ে এই লোকের ছেলের সাথে প্রেম করে। তিনি তার ছেলের ফোন নিয়ে গেছিলো। আর আমি এতদিন তার ছেলে ভেবে তার সাথেই প্রেমালাপ করেছিলাম।
.
দুজনেই এক পর্যায়ে হাসতে হাসতে মরার উপক্রম হয়েছে। দুই ব্যর্থ গোয়েন্দাই এক পর্যায় কফি শপে বসলাম। নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য স্যরিও বললাম। তিনিও বললেন। ভাবলাম বেয়াই হিসেবে ছেলের বাবা মন্দ না। হেসে হেসে বললাম ছেলের ফোনটা বাসায় গিয়ে ছেলেকে দিয়ে দিয়েন, আমার মেয়ে খুবই মন মরা হয়ে আছে।
সে উঠে বললো, হুম আগে মেসেজিংগুলি মুছে নেই। এমন প্রেমালাপ দেখলে মামলা খেয়ে যাব হা হা হা।
.
আমি হেসে কুটিকুটি হয়ে কফির মগে চুমুক দিব তখনই দেখছি আমার দিকে রাক্ষসের মতোন তাকিয়ে আছে লিমুর বাবা। এ কি তুমি এখানে?
- বাহ্! আরজু বাহ্! না আসলে তো এমন রঙ্গ দেখতেই পেতাম না।
এই কী বলো? ভুল ভাবছো তুমি আমায়।
- ভুল! ছিঃ এত নিচ তুমি? এখন তো আমি তিতা হয়ে গেছি? আর এই বেটা মধু। তাই তো ভ্রমর মধু খেতে এসেছে। খাও মধু। এই বলে লিমুর বাবা চলে গেল।
আমি পিছন পিছন ছুটছি। বেয়াই মশাই উঠে বললো, ঘাবড়াবেন না সোনা থুক্কু আপা। আমি আছি অলওয়েজ পাশে।
রেগে বললাম, চুপ কর টাকলা ব্যাটা। মেয়ের প্রেম ভাংতে গিয়া আমার সংসারই ভাঙার উপক্রম হইছে।
ও লিমুর আব্বা... খাড়াও তুমি ভুল ভাবতেছো, দুনিয়ার সব মধুই ভেজাল, তুমিই আসল।
ও লিমুর আব্বা খাড়াও কইলাম...
★★★★★
টিট ফর ট্যাট

শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০১৯

সাদাকালো সেই ছবিটা : জাকির রুবেল

এই ছবিটা কার?

-ইনি মায়ের কলেজ মেট।

-উঁহু। ছবির মেয়েটা আমার বান্ধবী নয়। আমি একে কোনওদিন দেখিইনি।     

মায়ের কথা শুনে চমকে উঠেছিলাম। বিয়ের মাসখানেক হয়েছে। নতুন বউ আলমারি থেকে বের করেছে পারিবারিক অ্যালবামগুচ্ছ। পাশে বসে আমি। বাবা-মায়ের বিয়ের ছবি, প্রথমবার ভ্রমন, আমার নাম রাখার অনুষ্ঠান, আমার খৎনার অনুষ্ঠানের ছবি... পাতার পর পাতা জুড়ে কত কত বছরের সালতামামি।     

তার মাঝেই এই ছবিটা। একটা মেয়ে বসে আছে টেবিলের ওপরে কনুই রেখে। পাশে রাখা ফুলের টব। ছোটোবেলা থেকে তো এঁকে মায়ের বান্ধবী বলেই জানি!    

মায়ের মুখে মৃদু হাসির রেখা। তূর্ণার মুখেও মজা পাওয়ার হাসি, ‘কী ব্যাপার মা? কোনও ক্যামিস্ট্রি আছে মনে হচ্ছে!’  

মা আলতো হেসে অ্যালবাম থেকে ছবিটা বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ছবির পিছন দিকটা দ্যাখ একবার।’

দেখলাম। পুরোনো দিনের কালির কলমে লেখা।  বিএ, বাংলা, প্রথম বর্ষ। তার নীচে তারিখ দেওয়া। ১/৭/১৯৮৮ইং। কিন্তু এর মধ্যে রহস্যটা কোথায়?

-হাতের লেখাটা চিনতে পারছিস না?  

চেনা চেনা লাগছিল। মা বলতেই চকিতে চিনে ফেললাম। এটা তো বাবার হাতের লেখা! পরবর্তী সময়ে হাতের লেখা বদলালেও লেখার ছাঁদ চিনতে অসুবিধা হচ্ছে না।

মা ছবিটা অ্যালবামে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, ‘যা ভাবছিস তাই। অনামিকা ছিল তোর বাবার বান্ধবী। তোর বাবা একেই বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু মেয়ের বাবা  সরকারী চাকুরে  ছাড়া দেবেন না, তাই আর...’

দেওয়ালে ঝোলানো বাবার ছবিটার দিকে তাকালাম। ঘুমের মধ্যে হওয়া ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের কয়েক মাস আগের ছবি এটা। ভারী পাওয়ারের চশমা। গম্ভীর মুখে জোর করে আনা সামান্য হাসির ছাপ। বাবা নেই দু-বছর হতে চলল। তাই বাবা বললে এই ছবিটাই আজকাল ভেসে ওঠে মনের মধ্যে। কিন্তু মা যে বাবার কথা বলছে সে অন্য মানুষ।১৯৮৮ সালে বাবার বয়স কত ছিল? হিসেব করলাম। তিরিশ।

মা ছবিটার দিকে তাকিয়ে খানিকটা স্বগতোক্তির ভঙ্গিতে বলছিল, ‘তোর বাবা আমাকে বিয়ের পরপরই জানিয়েছিল সব। কিন্তু ছবিটা দেখায়নি। ঘর গোছাতে গিয়ে আমি এটা খুঁজে পাই, পুরোনো একটা ডায়রির ভেতর। তখন তোর বছরখানেক বয়স। আমিই এটা অ্যালবামে রেখে দিয়েছিলাম। বলে দিয়েছিলাম, ছবিটা অ্যালবামেই রাখছি। সব ছবির সঙ্গে। না হলে হারিয়ে যাবে। তোর বাবা কোনও আপত্তি করেনি।’

মায়ের কথা বলার সহজ ভঙ্গি থেকে স্পষ্ট, হারানো প্রেম বাবার জীবনে আর কখনও উঁকি মারেনি। কেবল একটা সাদা-কালো ছবি হয়ে সেঁধিয়ে গিয়েছিল অ্যালবামের পাতায়।

তূর্ণা একটু অবাক হয়ে বলল, ‘স্ট্রেঞ্জ! আপনি চেয়েছিলেন যাতে ছবিটা হারিয়ে না যায়?’

‘হারিয়ে গেলেই তো মানুষ তাকে হাতড়ে বেড়ায় এদিক সেদিক। তার চেয়ে হাতের কাছেই থাক। চাইলেই দেখতে পাব, এটা ভাবতে ভাবতে দেখার আকুতিটা কমে যায়।’

সত্যিই কমেছিল? বাবা কি কোনওদিন মাকে লুকিয়ে চোখ রাখেনি পুরোনো বান্ধবীর ছবিতে! নাকি মা-র কথাই সত্যি? কে জানে। আর তো কোনওদিন জানা যাবে না। তবে এটা বাবা-মা দুজনেই জানত, অ্যালবামে রাখা হোক বা না হোক, এই সাদা-কালো তরুণী আমাদের পরিবারেরই একজন হয়ে থেকে যাবেন, আজীবন।



রাত্রী বিলাস( ফেনীর রাস্তায় এক রাত্রী) : জাকির রুবেল

সেদিন রাত্তিরে ফিরতে একটু দেরিই হয়েছিল। স্যার কয়েকজনের সাথে জমিয়ে আড্ডা মারতে মারতে কখন যে বরোটা বেজে গেল বুঝতেই পারিনি। এগারোটাই বাসার গেইট ক্লোজ করে দেন বাসার মালিক নবাব......। ফেনী শহরের বাসার মালিকরা এক একজন নবাব। বাসাগুলো এক একটা জেলখানা। গেইটে দারোয়ানও রাখবেন না আবার ভাড়াটেকে চাবিও দিবেননা। সকালে নামাযের জন্য উঠলে বাসার মালিকের কাছে চাবির জন্য যেতে মনে হয় বড় কোন অপরাধ করে জর্জের সামনে যাওয়া। সে জন্য ফজর নামাযটা বাসায়ই পড়া হয়।

বাসায় অাজ কেও না থাকায় আর বাসায় ঢুকতে মন চাচ্ছেনা। মাথায় অন্য একটা প্লান কাজ করছে। সারারাত বাইরে কাটালে কেমন হয়?রাতের ফেনী দেখতে কেমন তা দেখার সখ ছিল অনেক অাগ থেকেই।  আগামীকাল শুক্রবার। স্কুল বন্ধ। সারাদিন ঘুমিয়ে রাতের ঘুম পুসিয়ে দেয়া যাবে। শীতের রাত, চারিদিকে ঘন কুয়াশা। ভাগ্যিস চাদরটা নিয়েই বেরিয়ে ছিলাম। কুয়াশায় ল্যাম্প পোস্টের ল্যাম্পগুলোই শুধু অালোকিত বাকি চারপাশ দেখাই যাচ্ছেনা। যেই ভাবা সেই কাজ। হঠাৎ বউয়ের ফোন - কি কর?  আমি বললাম "ঘুম পাচ্ছে রাখো জানু, সকালে কথা বলবো "। এই বলে ফোন রাখলাম। কারন এত রাতে বাইরে ঘুরার কথা বললে বউয়ের বকা খেতে হবে নিশ্চিত। হাদীসে অাছে নাকি বউয়ের সাথে ছোটখাটো মিথ্যা কথা বলা জায়েজ অাছে।

এনা কাউন্টার থেকে সোজা হাটা ধরলাম মহিপালের উদ্দেশ্যে। হাটলে দু'মিনিটের রাস্তা। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিলাম আস্তে আস্তে হরটে যাবো। কিছুদুর এগুতেই একটা বুড়ো রিক্সাওয়ালা এসে বললো যাবেন?  আমি গাড় নেড়ে না বললাম। আবার হাটা ধরলাম৷ ঘড়িতে দেখি ১২ঃ৩০ মি।রাস্তা ফাঁকা। মাঝে মাঝে দুএকটা মাইক্রো সাই করে চলে যাচ্ছে রাস্তা ফাঁকা পেয়ে। মাথায় একটা গান বাজতেছে। গাইবো কি গাইবোনা এই দোটানায় অাছি। আমরা শিক্ষক মানুষ। মাঝরাতর রাস্তায় জোরে গান করা উচিত না। গানের কথা মনে হতে মনে পড়লো দাদার কথা। দাদা বলতেন রাতে ভূত পেতের ভয়ে নাকি একাকী পথিকেরা জোরে জোরে গান গাইতো।
আমি আবার ভূতে বিশ্বাস করিনা।

ভূতের কথা মনে হতেই মনে পড়লো বন্ধু সিরাজের কথা। আমাদের বন্ধুদের মাঝে একটু ভবঘুরে টাইপের ছেলে সে। ছোটবেলায় রাস্তায় চলতে তার হাতে থাকতো একটা ছোট্ট রেডিও। আমাদের তখন ভূতে ভয় থাকলেও তার সেরকম কোন ভয় ছিলনা। সে রাত বিরোতে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতো। সেই আমার ভুত না বিশ্বাস করার গুরু। যাক! হাটতে হাটতে মহিপাল এসে পৌচলাম। ফ্লাইওভারটা স্বগৌরবে দাড়িয়ে অাছে আওয়ামীলীগের উন্নয়ের স্বাক্ষী হিসেবে। যদিও ফ্লাইওভার হওয়ার পরেো জ্যাম কমেনি। ফ্লাইওভারের নিচে দাঁড়ালাম। এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। কিছু লোক ময়লা কাথা গায়ে শুয়ে আছে। রাস্তা প্রায় ফাঁকা। কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশকে দেখলাম। রাস্তায় ট্রাক থামিয়ে থামিয়ে হাদিয়া নিচ্ছেন। দাড়িয়ে কিছুক্ষন তাদের সেই হাদিয়া নেয়ার দৃশ্যটা উপভোগ করছিলাম। একজন ট্রাফিক পুলিশ আমার কাছে এসে জানতে চাইলেন, নাম পরিচয়, কথায় যাবো কি কি কি ইত্যাদি ইত্যাদি। সত্য কথাটা বলে দিলাম যে চাবির জন্য বাসায় ঢুকতে পারছিনা তাই হাটতে বের হলাম। পুলিশ মসায় কিছু না বলে একগাল হাসলেন।

সামনে দক্ষিনে কিছুদূর এগোলাম। দেখলাম ফ্লাইওভারের নিচে দুজন মহিলা দাঁড়িয়ে অাছে। একটা মাঝবয়সী ছেলের সাথে ঝগড়া হচ্ছে। কিসের যেন টাকা নিয়ে। আরো কাছে এগুতেই বুঝতে পারলাম ওরা দেহ প্রসারনী।রাতের মনি মনসা। ছেলটা ব্যবহার করে টাকা দিচ্ছেনা। তাই ঝগড়া। মহিলাটি যাচ্ছেতাই রকমের বাজে বাজে গালি দিচ্ছিল। পরে ছেলেটা ১০০ টাকার একটা নোট মহিলাটির গায়ে ছুড়ে দিয়ে হন হন করে পশ্চিম দিকে হাটা ধরলো। আর বিড় বিড় করে বলতে লাগলো মাগী........।মহিলাটিও বলতে লাগলো "চু.......বি অার টাকা দিবিনা হারামী বাচ্ছা, মাগীর পুত.......। আরেকবার টাকা ছাড়া আসলে.... কাটি রাখি দিমু.....।

কানে এসব অস্রাব্য গালী শুনে মনটা কেমন যেন বিশ্রী পরিবেশে ঘুরে গেল। যাক, আরো কিছুদুর সামনে এগুলাম। গত পরশু দিনে যে ভিক্ষুককে দেখলাম তার অন্ধ মেয়ের জন্য টাকা তুলছিলো আজ রাস্তায় তাকেই দেখলাম মেয়েটার উপরে উঠে অাছে। এ কোন অাজব খেলা। মাওলাই ভালো জানে। মনের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে এলো 'অসভ্য'! ফ্লাইওভারের উপরে উঠবো বলে পা বাড়ালাম। ল্যাম্প পোস্টে আলো দুই সারিতে। ইউরোপ অামেরিকার মত দৃশ্য,এ যেন অঙ্কিত ছবি! দেশের একমাত্র ৬ লেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভার এটি। সরকারের উন্নয়নের একটি বড় বিজ্ঞাপন।
ভালোই লাগছে। ঘন কুয়াশা চারদিকে। পরিবেশটা অসাধারন। ফ্লাইওভারের ঠিক মাঝ বরাবর এসে পূর্বে দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম। সারাদিনের সেই ব্যাস্ত রাস্তা এখন একেবারেই ফাঁকা। চারদিকে নিশ্চুপ নিরবতা। সামনে একটা বিশাল বিলবোর্ড। কন্ডমের বিজ্ঞাপন "আসল পুরুষ " স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে অাছে। বামে অারেকটা বড় ব্যানার "মহিপাল হারবাল " এক ফাইলে যথেষ্ট।

ঘড়ির দিকে তাকালাম। সময় ১ঃ২০ মি। পেচনে পিরতেই একটি পাগলীকে দেখলাম। চমকে উঠলাম তাকে দেখে। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে অাছে। মুখে কি যেন বলছে বুঝতে পারছিনা। মনের মাঝে শিরশিরে অনুভবের হালকা ভয় খেলে গেল। জানি ভুত বলে কিছু নেই। তবুও হালকা ভয় পাচ্ছি। কি মনে করে হঠাৎ তার হাতে ২০ টাকর একটা নোট গুজে দিতেই দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেলো হাসতে হাসতে। বুকটা তখনো দড়ফড় দড়ফড় করছে। পাগলীর হলুদ দাঁতের হাসি ও ঝট চুলগুলো চোখের সামনে ভাসছে। ভালো লাগছেনা আর। নিচে নেমে এলাম ফ্লাইওবার থেকে। নিচে একটা রিক্সা দাঁড়ানো। ভাই যাবেন?
-"হ যামু।
-কই যাবেন বলেন?
-"আপনাকে নিয়ে পুরো শহর ঘুরবো। সারারাত কত নিবেন?"
মাঝবয়সি লোকটার মুখে হাসির রেখা দেখা দিলো। উত্তরে বললো
-"দিয়েন ইনসাফ করি "
উঠে বসলাম রিকসায়। রিকসা ট্র্যাংক রোড়ের দিকে এগিয়ে চলছে। রিক্সাওয়ালা লোকটাকে রসিকই মনে হলো। তিনি মমতাজের একটা গান ধরলেন " ফাইট্টা যায়, বুকটা ফাইট্টা যায়.... বন্ধু,যখন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া....।
আঞ্চলিকতার ভাবে মনে হলো লোকটি নোয়াখীর। জিগাইলাম -
- "চাচা বাড়ি কই "
-নোয়াখালী সোনাপুর বাজরের পূর্ব পাশে।
এখানে কই থাকেন?
-সহদেবপুর, এক ছেলে দুই মেয়ে। আর আপনেগো বউ থাকে।
ভালো ভালো। তো অারেকটা গান ধরেন না?
এবার একটু জোর গলাই গানটা ধরলেন চাচু।
"ওরে নীল ধরিয়া............. আমায় দেরে....... আমিও চাচার সাথে ঠোট নাড়তেছি।
পুরনো দিনের গানগুলো হৃদয়ে সর্বদাই নাড়া দেয়।

রিক্সা চলছে হনহনিয়ে, গান গাইতেছি গুনগুনিয়ে। হঠাৎ কানে গালিগালাজের শব্দ শুনতে পেলাম। পাশে ২০/২২ বছরের একটা যুবক ছেলে। হাতে একটা বোতল। মেদর বোতলই হবে হয়তো। মদ খাচ্ছে অার গাল দিচ্ছে। হঠাৎ যুবকটি দেখলাম একটা বৈদ্যুতিক খুটিকে জড়িযে ধরে বলতেছে " বাবা আমায় মাপ করে দাও, বাবা বাবা বাবা বলে চিৎকার করছে। ততক্ষনে অামরা পুলিশ ফাঁড়ি পেচনে পেলে সামনে এগিয়ে গেল।। মুখ থেকে ছেলেটার জন্য"উফ" শব্দটি বেরিয়ে গেলো। কত ছেলের জীবনটা ছারখার হয়ে যাচ্ছে এই মাদকের ছোবলে তার ইয়ত্তা নেই।তরুনদের ভবিষ্যৎ আজ হুমকির মুখে।

(চলবে............................

বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৯

ভূতুড়ে ২, ভুতের সাথে সেই রাত্রী : জাকির রুবেল

আসসালামু আলাইকুম! দরজায়  মেহমান!  দরজা খুলুন! দরজয় মেহমান!  দরজা খুলুন! কলিং বেলটা বেজেই যাচ্ছে..........

ধুর...!! এতো রাতে কে আসলো?
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ৩:২১। এতো রাতে বিরক্ত করার কোন মানে হয়??
--- কে...?
--- দোস্ত আমি সালমান। দরজা খোল।
সালমান,তাও এতো রাতে? আর যে কিনা হারিয়ে গিয়েছে গত ২ বছর আগে................।
আমি ভূত-প্রেত বিশ্বাস করি না। তাই ব্যাপার টা স্বাভাবিক ভেবেই দরজা খুলে দিলাম।
দরজা খোলার সাথে সাথেই কেমন যেন একটা শীতল শিহরণ বয়ে গেল আমার শরীরের মধ্য দিয়ে।ঘাড়ের পিছনের লোমগুলো সরসর করে দাঁড়িয়ে গেল।
দেখলাম যে মসিউর আগাগোড়া একটা কালো কোট পড়ে এসেছে এবং হুডিটা মুখ পর্যন্ত নামিয়ে দিয়েছে।
এই গরমের মধ্যে সে হুডি দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে কেন?
পলাতক ফাঁসির আসামী নাকি,মনে মনে বলে উঠলাম আমি।
--- দোস্ত ভিতরে ডাকবি না ? আমায় বসতে দিবি না?এতো রাতে বিরক্ত করলাম নাকি তোকে?জানি যে তুই রাত জাগোস। তাই তো তোর কাছেই এলাম।
--- না না দোস্ত বিরক্ত কিসের?আয় বোস।

--- মনে মনে ভাবছিস এই গরমের মধ্যে কোট পড়ে এসেছি কেন তাই না?আসলে আমার খুব জ্বর।শরীরে খুব ঠান্ডা লাগছে তাই পড়ে এসেছি।
--- (ও আমার মনের কথা জানলো কিভাবে মনে মনে ভাবলাম) সমস্যা নেই দোস্ত।আগে বল যে তুই এই দুই বছর কই ছিলি।

--- বলবো বলেই তো এত রাতেও তোর কাছে ছুটে এসেছি।
সালমান আর আমি মুখোমুখি বসে।সালমানকে দেখতে কেমন যেন মৃত মনে হল।কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে ওর মুখাবয়ব। দৃষ্টি কেমন যেন ঘোলাটে মনে হলো। তবুও ওর কথা শোনার জন্য এতো উদগ্রিব ছিলাম যে আর বেশি কিছু ভাবি নি।

মন দিয়ে ওর গল্প শুনতে শুরু করলাম।

--- দোস্ত আমি আজ থেকে ২ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিলাম সে তো জানিস।আসলে আমি তো হারিয়ে যাই নি।আমি খুব খারাপ কাজ করেছিলাম তার মাশুল দিয়েছিলাম সেদিন।
ঘটনার দিন সন্ধ্যা বেলা আমি বাসায় ফিরছিলাম।মোটামুটি চারিদিকে ঘন অন্ধকার ছিলো।
আমাদের সেই ব্রীজের কাছাকাছি আসতেই কে যেন বলে উঠলো।

--- ভাইয়া আমাকে বাঁচান প্লিজ!আমাকে আমার বফ ছুরি মেরে ফেলে গিয়েছে।
আমি দেখলাম মেয়েটি পেট চেপে ধরে রেখেছে।বুঝলাম যে তাজা রক্ত ঝরছে সেখান থেকে।হাসপাতালে না নিলে মরেই যাবে বোঝা যায়।
একে তো এদিকে তেমন একটা যানবাহন নেই।তার উপর এই অবস্থায় সে যদি মারা যায় এবং আমায় কেউ দেখে ফেলে তাহলে ভাববে আমি মেরে ফেলেছি তাকে।

এখন দোটানায় পড়ে গেলাম- কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না?

মেয়েটির দিকে মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে তাক করলাম।যা দেখলাম তাতে আমার মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা।
দেখি যে,সারা গায়ে তার জুয়েলারি দিয়ে ভরা ছিল।গলায়,কানে, নাকে,হাতে সব জায়গায় স্বর্ণ দিয়ে যেন মোড়া ছিল।
আমি একটু যেন লোভে পড়ে গেলাম...।

দোস্ত তুই তো জানোস,আমি জুয়া খেলে অনেক টাকা খুঁইয়ে ফেলেছিলাম। আমার পাওনাদাররা টাকার জন্য আমায় চাপ দিচ্ছিল...

সাথে সাথেই সিদ্ধান্ত নিলাম মেয়েটাকে খুন করবো..
খুন করে ওর স্বর্ণ নিয়ে পালাবো। কিন্তু খুন করার জন্য অস্ত্র দরকার।মেয়েটিকে একটা ঝোপের পাশে নিয়ে গেলাম।বললাম যে তুমি বসো আমি গাড়ি নিয়ে আসি........।

এই বলে সেখান থেকে সরে গিয়ে একটা বড় পাথর খুঁজতে লাগলাম।
পাথর খুঁজে এনে মেয়েটির মাথায় আঘাত করতে থাকলাম। আঘাত করতে করতে তার মাথাটা পুরো থেঁতলে দিলাম..রক্ত আর মগজে আমার হাতের তালু ভিজে গেল।এরপর তার মুখটা থেঁতলে দিলাম যাতে কেউই লাশ শনাক্ত করতে না পারে।

তারপর সেই লাশের গা থেকে সবকিছু খুলে নিলাম।খুলে নিয়ে আমার শার্ট দিয়ে স্বর্ণগুলোকে জড়িয়ে নিয়ে আমি নদীতে গোসল করে বাসায় ফিরে আসলাম।কয়েকদিন পর স্বর্ণ বিক্রি করে পাওনা শোধ করলাম।তারপর একদিন সেই ব্রিজ দিয়ে রাতের বেলা ফিরছিলাম।হঠাৎ কে যেন ডেকে উঠলো,
--- ভাইয়া আমাকে বাঁচান।
আমাকে মেরে ফেলছে... (সেই অজ্ঞাত মেয়েটি)
এটা শুনে আমার মাথার পিছনের লোমগুলো সরসর করে দাঁড়িয়ে গেল।

সামনে গিয়ে যা দেখলাম তার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিলাম ন।
দেখলাম সেই মেয়েটিই পড়ে রয়েছে..তার দেহ পঁচে গলে অর্ধগলিত হয়ে গিয়েছে। মুখ বলতে ছিল শুধু কালো গর্ত।সেই গর্ত থেকে আওয়াজ আসছে-
" ভাইয়া আমাকে বাঁচান"

এটা দেখে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না।অজ্ঞান হয়ে গেলাম সেখানেই।
জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি কোন গুহায় বন্দি আছি।
সেই লাশটা তার গলিত দেহ নিয়ে আমার সামনে এসেছে।তারপর সে আমায় বলতে শুরু করলো।

তোর মত লোভী মানুষের বেঁচে থাকার কোন অধিকারই নেই।তুই সাহায্য করলে আমি আজ হয়তো বেঁচে থাকতাম।তোর জন্যই আজ আমার পরিবার শোকাহত হয়ে আছে।এই বলে সে পাথর এনে আমাকে মেরে ফেললো।আমি যেভাবে মেরেছিলাম তাকে, ঠিক সেভাবেই আমাকে পাথর দিয়ে মেরে ফেললো।
সেদিন থেকেই আমি নিখোঁজ হয়ে গেলাম..

এই বলে সালমান চুপ হয়ে গেল...............

--- আমি এসব মেনে নিতে পারছিলাম না আর। মাথাটা কেমন যেন ঘোরা শুরু করলো।
তবুও সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম,,
তাহলে কে তুমি..?

--- আমি সেই মেয়েটির আত্মা।সালমানের মধ্যে ভর করেছি...আমার বেঁচে থাকার জন্য মানুষের হৃদপিন্ড খাওয়া লাগবে।সালমানের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলে তুমি।তাই তোমার কাছেই এসেছি আমি।এই বলে সে কোটের পকেট থেকে ছুরি বের করল।তারপর আমাকে খুন করে ফেললো।

ঘটনার দুদিন পর সালমানের লাশ পাওয়া গেল সেই ব্রিজের কাছেই।দু'বছর পর সালমানের লাশ পাওয়া গিয়েছিল।ক্ষতবিক্ষত মুখ ছিল লাশের এবং হৃদপিন্ড ছিল না।পুলিশ অনেক ভেবেও কেসটির কোন কুল কিনারা করতে পারে নি.........।

এবং

এখন আমার মধ্যেই ভর করেছে সেই মেয়েটির আত্মা।আমি ছুরি নিয়ে কাউকে খুন করে তার হৃদপিন্ড খাওয়ার জন্য ঘুরছি এই মধ্যরাতে।

আর আমার শেষ টার্গেট হবে তুমি...!!!

আর হয়তো আমারই ক্ষতবিক্ষত হৃদপিন্ডহীন লাশ পড়ে থাকবে সেই ব্রিজের কাছে.........................।

ভালোবাসার গলিত হৃদপিন্ড : জাকির রুবেল


স্কুল থেকে ফিরছেন নাজিম সাহেব। স্ত্রীর ভালোবাসা মোড়ানো ফোন কল পেয়ে খুশি মনে রিসিভ করলেন। স্ত্রী তার পোয়াতি।  মহা খুশিতে তাকে জানালো যে পেটের বেবিটা নাকি আজ নড়াচড়া বেশি করতেছে। কয়েকবার লাথিও মেরেছে নাকি। হালকা ব্যাথা কিন্তু তা সুখানুভূতিতে ভরা। এ যেন এক স্ববর্গীয় সুখ। গাড়ী থেকে নামলেন। তার বাসা মিজান রোড থেকে কয়েক মিনিটের হাটার পথ। প্রতিদিনকার মতো আজো হাটছেন আর মোবাইল ঘাটাঘাটি করছেন।

সামনে একটা ডাস্টবিনে হঠাত নজর গেল। কতগুলো কুকুর ঘেউ ঘেউ করে বাতাশ ভারী করে তুলছে। আরেকটু সামনে এগুলেন তিনি। দেখলেন দলা পাকানো লাল ফুটবলের মত একটা কিছু। পুরোটা কতগুলো পিপড়ের দখলে। হঠাৎ একটা কাকের ডানা ঝাপটানোর করনে পিপড়ের দল সরে গেল। বেরিয়ে এল  মানব শিশুর হাতের মত কিছু একটা। রক্ত লেগে আছে তাতে। আঙুলগুলো অনেক ছোট। মানব শিশু দেখে চারপাশে এদদিক ওদিক তাকিয়েএকটু এগিয়ে গলেন কৌতুহল ও ভয় দুটোই লাগছে। সত্যিইতো। মানুষের বাচ্ছা!  কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না নাজিম সাহেব। সাহস সঞ্চয় করে পকেটের রুমাল বের করে পিপড়েগগুলোকে তাড়ালেন।

না। বাচ্ছাটি বেচে নেই।তার হৃদপিন্ড, ফুসফুস এখন পোকার দখলে । এইতো সেদিন ক্লাশে ছাত্রছাত্রীদের হৃদপিন্ড পড়াচ্ছিলেন। কতবার আঁকার পরেও বোর্ডে সুন্দর করে সঠিক আকৃতি আঁকতে পারেননি তিনি। মহান আল্লাহ কত সুন্দর করে গড়েছেন এ মানব শরীর।   হঠাৎ কেন যাননি তার কান্না পেয়ে গেল। নিজের স্ত্রী ও অনাগত বাচ্ছার কথা মনে পড়ে গেল। আর ভাবতে পারছেন না তিনি।চোখের কোন ঝাপসা হয়ে এল।কার বাচ্ছা, কোথাকার বাচ্ছা এখানে কি করে এল, এসব ভাবনায় ডুবে গেলেন তিনি।  হঠাৎ খেয়াল করলেন প্রায় অর্ধগলিত বাচচ্ছাটির গলায় একটা চিরকুট ঝুলানো। একটি কালো সুতা দিয়ে বাধা। কাঁপা কাঁপা হাত দিয়ে চিরকুটটি নিলেন।

চারপাশে অনেক লোক জমা হয়ে গেল। কেওবা গলিত বাচচ্ছার মা বাবাকে গালি দিচ্ছে, কেওবা হায় হায়! করছে, কেওবা সমাজ নীতি নৈতিকতার বুলি অাওড়াচ্ছে। কেওবা কমিশনার বা পুলিশকে ফোন দিচ্ছে। সবাইকে সাইডে করে চিরকুটটি হাতে নিয়ে পড়ার জন্য বেরিয়ে এলেন বিড় ঠেলে। চারদিক থেকে আরো লোক জড়ো হচ্ছে।

চিরকুট খুলে  প্রথম লাইনটি পড়েই নাজিম সাহেব তো থ। পড়তেছেন আর কাঁদছেন....
নাজিম সাহেব কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে অশ্রুসজল নয়নে চিরকুটটি পড়তে লাগলেন। পায়ের গতি স্লথ হয়ে আসছে তার।
রক্তের চোপ চোপ দাগ লেগে আছে চিরকুটে। অপরিপক্ক হাতের লেখা। কোন প্রাইমারীর বাচ্ছার লেখার মত। নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় লেখা চিররকুটটি বানানে ভুলে ভরা। পাঠকের সুবিধার্থে প্রমিত ভাষায় চিরকুটটি ঠিক এরকম...... "
আমি মরিয়ম। ফাজিলপুর আমার বাড়ি। গরিব বিধায় মা ফেনীতে কাকার বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাবা মাকে ছেড়ে কোথায় গিয়েছে জানিনা। গ্রামের দাদারা বলতেন
আমি নাকি অপয়া? আচ্ছা অপয়া কি?আমি নাকি আমার বাবার নিরুদ্দেশের জন্য দায়ী? আমার জন্মের দিনই বাবা মাকে ছেড়ে
কোথায় ছলে গেছেন। মেয়ে হয়েছে তাই। বাবাকে কখনো দেখিনি। ক্লাশ ফোরে পড়তাম। একবার টানা ৫ দিন ঘরে কোন খাবার না থাকায় মা আমাকে কাকার সাথে শহরের কাকার
বাসায় কাজের জন্য পাঠিয়ে দেন। সেই থেকে আমি শহরে।কাকা আমায় খুব আদর করেন। নিয়মিত খোজ খবর করেন। তিনি
খুব ভালো।চাচিমাও ভাল। তবে চাচার মত ভাল না। তার ছোট ছেলেটা মানে রাজু ভাইয়া খুব খারাপ। আমাকে শুধু শুধু কষ্ট দেন।ভাইয়া অনেক রাত পর্যন্ত পড়েন। তিনি কোন ভার্সিটি
নাকি কিসে পড়েন। আমি জানিনা। রাতে অামি ঘুমালে আমার রুমে এসে এসে শুধু কাতুকুতু দেন।আমার জামার ভিতরে হাত ডুকিয়ে দেন। একদিন অামাকে তিনি খুব কষ্ট দিয়েছেন। খুব
ব্যাথা পেয়েছিলাম। সারা রাত কেঁদেছিলাম। তিনি আমার সাথে নোংরামি করলেন। আমি কাকাকে বলে দেব বললে তিনি বলেছেন "আমাকে মরে ফেলবেন। কিছুদিন পররপর ভাইয়া
রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে আমার রুমে এসে আমার সাথে নোংরামি করতেন। আমি ভয়ে আর কাওকে কিছু বলিনি। ৫/৬ মাস পরে একদিন খুব সকালে আমার প্রচন্ড পেটে ব্যাথা।
সাথে বমিও করতেছিলাম বাররবার। কাকা আফিস থেকে ফিরে আমাকে নিয়ে গেলেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার পরিক্ষা নিররিক্ষা করে কি যেন বললেন কাকাকে। কাকা এসে আমার মাথায় হাত বুলোলেন। মুখটা তার মলিন। কিন্তু
কিছুই বললেন না। বাসায় ফেরার পর রাতে চাচি আমাকে কি কি অনেক কথা জিজ্ঞেস করে প্রচন্ড মারলেন। তিনি আগে কখনো আমায় মারতেন না এই প্রথম তিনি আমায় মারলেন। পরে
আমি ভাইয়ার কথা বলেছিলাম যে তিনি আমার সাথে রাতে মাঝে মাঝে যা কররতেন তা সব বলে দিলাম। তিনি শুধু বার বার একথা বললতে নিষেধ করতেছেন যেন রাজু ভাইয়ার বিষয়ে
কাওকে কিছু না বলি।একদিন রাতে আমাদের পাশের বাসার বুয়া আমায় বললেন যে
আমার পেটে নাকি ৬মাসের একটি বচ্ছা আছে। আমি বুঝতে পারছিনা আমার পেটে বাচ্ছা ডুকলে কিভাবে? সেজন্যইতো আমার পেটে ব্যাথা লাগে। আমার খুশি লাগছে যে কাকাদের
বাসায় আর কোন ছোট বাচ্চা নেই। তাহলে আমার একজন খেলার সাথী পাব। কি মজা কি মজা।! আমি তার নামও ঠিক করেছি।
নামম দেব তার টগর। সারাক্ষন তার সাথে খেলবো, হাসবো আরো কত কি করবো।
সেদিন কাকাদের বাসায় একজন ডাক্তার এলেন। আমাকে একটা ইনজেকশান দিয়ে ঘুমিয়ে দিলেন। সকাল হওয়ার আগেই
জেগে উঠলাম। দেখি আমার পাশে একটা দলা পাকানো ছোট বাচ্চা। আমি খুশি হলাম দেখে। কিন্তু ব্যাথায় উঠতে পারছিলাম না। পাশে ফিরে দেখি পাশে বাসার বুয়া আমার পাশে বসে কাঁদতেছেন। তিনি আমাকে বললেন এই তোমার
বাচ্ছা। মরে গেছে। মেরে ফেলা হয়েছে তাকে। আমার কাকা ও চাচি নাকি রাতে বাচ্চাটিকে বের করে মেরেছেন। বুয়া আমার সব কথাগুলো একটা কাগজে লিখে বললেন একটা সুতা
দিয়ে যেন চিরকুটটি বাবুর গলালায় বেধে দিই। তাতে নাকি কি উপকার হবে। বাচ্চাটা নাকি আবার বেচে উঠবে তাতে।ব্যাথায় আমি নড়তে পারচিনা। বুয়া আমার বাচ্চাটির গলায় ঝুলিয়ে কেন দিবেন বুঝতে পারছিনা। তবুও লিখলাম।