মঙ্গলবার, ১০ জুলাই, ২০১৮

নাবিলার স্বপ্নের পরাজয়

নাবিলার স্বপ্নের পরাজয়_______________________

নাবিলা। বয়স ১৮। সদ্য এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করেছে। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে ভিবোর সে।জেএসসি ও  এসএসসিতে গোলন্ডেন এ+। বেশ কয়েকটি সরকারী বেসরকারী বৃত্তিপ্রাত্ত মেধাবী তরুনী। টাকার অভাবে কোচিং করতে না পারলেও বান্ধবীদের থেকে কোচিংয়ের শীট ধার করে পড়ছে সে। অভাবের সংসার তাদের। বাবা দিনমজুর। বয়স ৫৬। মা কোন রকম মানুষের বাড়ী বাড়ী কাজ করে সংসার চালায়। নাবিলা টিউশনি করে তার পড়াশোনার খরচ বহন করে।ঘরটাও ভেঙে পড়ার উপক্রম। বর্ষায় পানিতে ভিজে জবুথুবু অবস্থা। মা বাবা এবং নাবিলার স্বপ্ন একটাই যে করেই হোক নাবিলা ডাক্তার হবে। পরিবারের দুঃখ মোচন করবে।

এভাবেই চলছিল নিত্যকার দিনলিপি। কবি বলেছিলেন -"সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের মেলা, অাশা তার একমাত্র ভেলা "। এই অাশায় বুক বেধেই চলছিল নাবিলাদের জীবন। প্রবাহমান নদীর মত। কখনো থেমে থেমে অাবার কখনোবা তীব্র স্রোতে।
অাজ নাবিলার একটা খুশির দিন। তার জন্মমদিন। সে জন্মদিন পালন করে না। কিন্তু দিনটা সে ইবাদত বান্দেগী করে কাটিয়ে দেয়। তার এ খুশির সাথে অারো একটা খুশি যোগ হয়েছে। তা হলো একটি বেসরকারী সংস্থার বৃত্তি পরীক্ষায় সে অংশগ্রহা করেছিল ৭ মাস অাগে। অাজ সে বৃত্তির টাকা পেয়েছে ১২ হাজার টাকা।

অাজ নাবিলা রান্না করবে। মা তাকে বাড়িতে রেখে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাচ্ছেন । বাবার কাশি প্রায় যক্ষার উপক্রম। রসুই ঘরে রান্না চড়িয়ে সে তার প্রিয় গানটা গুনগুনিয়ে গাইতে লাগলো...."তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়...... "।গুনগুনিয়ে সে অারো কয়েকটি গান গাইলো। রসুইঘর থেকে বড় ঘরে কি যেন নেয়ার জন্য  ঢুকলো সে। হঠাৎ করা ঘরে ঢোকার শব্দ পেল সে। পেচন ফিরে তাকাতেই দুটো হাত তাকে জোরে অাঁকড়ে ধরলো। কিছু বুঝে উঠার অাগেই সে অজ্ঞান। মুখে রুমাল বেধে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় গাড়িতে উঠিয়ে কোথায় নিয়ে গেল সে জানেনা। মুখটা তার চেনা। পাশের বাড়ির চাচাতো ভাই হাশেম। স্থানীয় সরকারদলীয় নেতা। তাকে অনেকদিন ধরে উত্যাক্ত করছিল। অাজ বাড়িতে কাওকে না পেয়ে সদলবলে উঠিয়ে নিয়ে গেছে তাকে।

অন্ধকার একটি কক্ষ। অনেক কষ্টে চোখ খুলতে চেষ্টা করলো নাবিলা। পেচনে দুই পাশে দুটো হাত দুটি খুটির সাথে বাধা। পুরো শরীরে ব্যাথা।পা দুটো  অবশ। নাড়ানো যাচ্ছে না। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ পেল সে। নাবিলা এখনো ঘোরে অাছে। তার উপর বয়ে যাওয়া ঝড়ের কথা সে এখনো বুঝতে পারেনি।  দরজার হালকা অালোতে সে তার শরীরে চোখ বুলিয়ে অাবারো জ্ঞান হারালো। পুরো শরীরে রক্ত লেগে তা শুকিয়ে অাছে। তার নিম্মাঙ্গে রক্ত জমাট বেধে অাছে। অার কিছু মনে নেই নাবিলার।

নাবিলা নিজেকে অাবিষ্কার করলো একটি এম্ব্যুলেন্সের মাঝে। বাবা, মা, সুমন চাচা , এলাকার মেম্বার চাচা একজন পুলিশ এবং অচেনা একজন লোক গাড়ীতে বসা। নড়ার মত কোন শক্তি নাই তার। চাচা মোবাইলে কার সাথে যেন কথা বলতেছে। তাতে বোঝা গেল তার অবস্থা মারারাত্মক খারাপ পর্যায়ের। ফেনী সদর হাসপাতালে তাকে রাখেনি। চট্টগ্রামে রেফার করেছে। বেঁচে থাকার অাশা ক্ষীন। প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে। ব্লিডিং বন্ধ কররা যাচ্ছে না। ১০ জন নরপশু ধ্বংস করে দিয়েছে তার দেহ। স্তন যুগল কেটে নিয়েছে তারা। সারা শরীরে ব্লেডের দাগ। ফোনের অপর প্রান্তে এসবের বর্ননা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন চাচা। ৫জনকে অ্যারেস্ট করেছে পুলিশ। তাকে উদ্ধার করেছে গ্রামবাসীরা। হাসেমের চরের অাস্তানা থেকে। নাবিলার চোখটাও এবার বন্ধ হলো। মুখে ফেনা বেরুচ্ছে।

অচেনা লোকটি বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন। মনে হয় ডাক্তার হবেন। টেনশনে লোকটার ঘাম বেরুচ্ছে। চাচাকে লোকটা বললেন সরকারী হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাতে করাতে সময় ক্ষেপন হবে। অাপনারা বেসরকারী একটি হাসপাতালে ভর্তি করাই দেন।লোকটার পরিচিত কজন ডাক্তার অাছেন তাদেরকে বার বার কল দিচ্ছেন। কিন্তু কেও কল ধরছেন না। অাবশেষে তাকে একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য এম্ব্যুলেন্স থামানো হলো। কিন্তু তাকে এম্ব্যুলেন্স থেকে নামানোর অাগেই হাসপাতালের লোকজন এসে জানালো ভর্তি করানো যাবে না। কারন ডাক্তারদের এবং হাসপাতাল মালিকদের ধর্মঘট চলছে। হাতাশ হয়ে তাদের অাবার অন্য হাসপাতালের দিকে রওনা হতে হলো। কিন্তু ৫/৭টা হাসপাতেলের কেও ভর্তি নিলোনা নাবিলাকে। চট্টগ্রাম শহরের সব বেসরকারী হাসপাতালের সেবা বন্ধ।কি জামেলা করে তারা ধর্মঘট করেছে।নাবিলার স্বপ্নরা চট্টগ্রামের রাস্তায় গড়াগড়ি খেয়ে মৃত্যুর দিকে এগুচ্ছে।

অবশেষে সরকারী হাসপাতালে অারো চার ঘন্টা পরে ভর্তি করানো হলো নাবিলাকে। ডাক্তার জানালো দুঘন্টা অাগে অানলেও তাকে বাঁচানো যেত। তখন নাবিলার মায়ের মনে পড়ে গেল সেই করুন অার্তনাদের কথা। এক বেসরকারী হাসপাতেলের ডাক্তারের পা জড়িয়ে কান্নার কথা। তবু ডাক্তার ভর্তি নিলো না। বার বার নাবিলার মা বলে যাচ্ছিলেন অামার মেয়েও ডাক্তার হতে চেয়েছিল।তার মায়ের মনে পড়ে গেল সেই গানটি" তুমি কি দেখেছো কভু..............জীবনের পরাজয়.............///

বিঃদ্রঃ ডাক্তারী পেশার সাথে ধর্মঘট কি মানানসই?সেবা  চাকুরী নাকি ব্যবসা?চট্টগ্রামে চলছে হাসপাতাল ধর্মঘট।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন