বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৯

ভূতুড়ে ২, ভুতের সাথে সেই রাত্রী : জাকির রুবেল

আসসালামু আলাইকুম! দরজায়  মেহমান!  দরজা খুলুন! দরজয় মেহমান!  দরজা খুলুন! কলিং বেলটা বেজেই যাচ্ছে..........

ধুর...!! এতো রাতে কে আসলো?
ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ৩:২১। এতো রাতে বিরক্ত করার কোন মানে হয়??
--- কে...?
--- দোস্ত আমি সালমান। দরজা খোল।
সালমান,তাও এতো রাতে? আর যে কিনা হারিয়ে গিয়েছে গত ২ বছর আগে................।
আমি ভূত-প্রেত বিশ্বাস করি না। তাই ব্যাপার টা স্বাভাবিক ভেবেই দরজা খুলে দিলাম।
দরজা খোলার সাথে সাথেই কেমন যেন একটা শীতল শিহরণ বয়ে গেল আমার শরীরের মধ্য দিয়ে।ঘাড়ের পিছনের লোমগুলো সরসর করে দাঁড়িয়ে গেল।
দেখলাম যে মসিউর আগাগোড়া একটা কালো কোট পড়ে এসেছে এবং হুডিটা মুখ পর্যন্ত নামিয়ে দিয়েছে।
এই গরমের মধ্যে সে হুডি দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে কেন?
পলাতক ফাঁসির আসামী নাকি,মনে মনে বলে উঠলাম আমি।
--- দোস্ত ভিতরে ডাকবি না ? আমায় বসতে দিবি না?এতো রাতে বিরক্ত করলাম নাকি তোকে?জানি যে তুই রাত জাগোস। তাই তো তোর কাছেই এলাম।
--- না না দোস্ত বিরক্ত কিসের?আয় বোস।

--- মনে মনে ভাবছিস এই গরমের মধ্যে কোট পড়ে এসেছি কেন তাই না?আসলে আমার খুব জ্বর।শরীরে খুব ঠান্ডা লাগছে তাই পড়ে এসেছি।
--- (ও আমার মনের কথা জানলো কিভাবে মনে মনে ভাবলাম) সমস্যা নেই দোস্ত।আগে বল যে তুই এই দুই বছর কই ছিলি।

--- বলবো বলেই তো এত রাতেও তোর কাছে ছুটে এসেছি।
সালমান আর আমি মুখোমুখি বসে।সালমানকে দেখতে কেমন যেন মৃত মনে হল।কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে ওর মুখাবয়ব। দৃষ্টি কেমন যেন ঘোলাটে মনে হলো। তবুও ওর কথা শোনার জন্য এতো উদগ্রিব ছিলাম যে আর বেশি কিছু ভাবি নি।

মন দিয়ে ওর গল্প শুনতে শুরু করলাম।

--- দোস্ত আমি আজ থেকে ২ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিলাম সে তো জানিস।আসলে আমি তো হারিয়ে যাই নি।আমি খুব খারাপ কাজ করেছিলাম তার মাশুল দিয়েছিলাম সেদিন।
ঘটনার দিন সন্ধ্যা বেলা আমি বাসায় ফিরছিলাম।মোটামুটি চারিদিকে ঘন অন্ধকার ছিলো।
আমাদের সেই ব্রীজের কাছাকাছি আসতেই কে যেন বলে উঠলো।

--- ভাইয়া আমাকে বাঁচান প্লিজ!আমাকে আমার বফ ছুরি মেরে ফেলে গিয়েছে।
আমি দেখলাম মেয়েটি পেট চেপে ধরে রেখেছে।বুঝলাম যে তাজা রক্ত ঝরছে সেখান থেকে।হাসপাতালে না নিলে মরেই যাবে বোঝা যায়।
একে তো এদিকে তেমন একটা যানবাহন নেই।তার উপর এই অবস্থায় সে যদি মারা যায় এবং আমায় কেউ দেখে ফেলে তাহলে ভাববে আমি মেরে ফেলেছি তাকে।

এখন দোটানায় পড়ে গেলাম- কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না?

মেয়েটির দিকে মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে তাক করলাম।যা দেখলাম তাতে আমার মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা।
দেখি যে,সারা গায়ে তার জুয়েলারি দিয়ে ভরা ছিল।গলায়,কানে, নাকে,হাতে সব জায়গায় স্বর্ণ দিয়ে যেন মোড়া ছিল।
আমি একটু যেন লোভে পড়ে গেলাম...।

দোস্ত তুই তো জানোস,আমি জুয়া খেলে অনেক টাকা খুঁইয়ে ফেলেছিলাম। আমার পাওনাদাররা টাকার জন্য আমায় চাপ দিচ্ছিল...

সাথে সাথেই সিদ্ধান্ত নিলাম মেয়েটাকে খুন করবো..
খুন করে ওর স্বর্ণ নিয়ে পালাবো। কিন্তু খুন করার জন্য অস্ত্র দরকার।মেয়েটিকে একটা ঝোপের পাশে নিয়ে গেলাম।বললাম যে তুমি বসো আমি গাড়ি নিয়ে আসি........।

এই বলে সেখান থেকে সরে গিয়ে একটা বড় পাথর খুঁজতে লাগলাম।
পাথর খুঁজে এনে মেয়েটির মাথায় আঘাত করতে থাকলাম। আঘাত করতে করতে তার মাথাটা পুরো থেঁতলে দিলাম..রক্ত আর মগজে আমার হাতের তালু ভিজে গেল।এরপর তার মুখটা থেঁতলে দিলাম যাতে কেউই লাশ শনাক্ত করতে না পারে।

তারপর সেই লাশের গা থেকে সবকিছু খুলে নিলাম।খুলে নিয়ে আমার শার্ট দিয়ে স্বর্ণগুলোকে জড়িয়ে নিয়ে আমি নদীতে গোসল করে বাসায় ফিরে আসলাম।কয়েকদিন পর স্বর্ণ বিক্রি করে পাওনা শোধ করলাম।তারপর একদিন সেই ব্রিজ দিয়ে রাতের বেলা ফিরছিলাম।হঠাৎ কে যেন ডেকে উঠলো,
--- ভাইয়া আমাকে বাঁচান।
আমাকে মেরে ফেলছে... (সেই অজ্ঞাত মেয়েটি)
এটা শুনে আমার মাথার পিছনের লোমগুলো সরসর করে দাঁড়িয়ে গেল।

সামনে গিয়ে যা দেখলাম তার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিলাম ন।
দেখলাম সেই মেয়েটিই পড়ে রয়েছে..তার দেহ পঁচে গলে অর্ধগলিত হয়ে গিয়েছে। মুখ বলতে ছিল শুধু কালো গর্ত।সেই গর্ত থেকে আওয়াজ আসছে-
" ভাইয়া আমাকে বাঁচান"

এটা দেখে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না।অজ্ঞান হয়ে গেলাম সেখানেই।
জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি কোন গুহায় বন্দি আছি।
সেই লাশটা তার গলিত দেহ নিয়ে আমার সামনে এসেছে।তারপর সে আমায় বলতে শুরু করলো।

তোর মত লোভী মানুষের বেঁচে থাকার কোন অধিকারই নেই।তুই সাহায্য করলে আমি আজ হয়তো বেঁচে থাকতাম।তোর জন্যই আজ আমার পরিবার শোকাহত হয়ে আছে।এই বলে সে পাথর এনে আমাকে মেরে ফেললো।আমি যেভাবে মেরেছিলাম তাকে, ঠিক সেভাবেই আমাকে পাথর দিয়ে মেরে ফেললো।
সেদিন থেকেই আমি নিখোঁজ হয়ে গেলাম..

এই বলে সালমান চুপ হয়ে গেল...............

--- আমি এসব মেনে নিতে পারছিলাম না আর। মাথাটা কেমন যেন ঘোরা শুরু করলো।
তবুও সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম,,
তাহলে কে তুমি..?

--- আমি সেই মেয়েটির আত্মা।সালমানের মধ্যে ভর করেছি...আমার বেঁচে থাকার জন্য মানুষের হৃদপিন্ড খাওয়া লাগবে।সালমানের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলে তুমি।তাই তোমার কাছেই এসেছি আমি।এই বলে সে কোটের পকেট থেকে ছুরি বের করল।তারপর আমাকে খুন করে ফেললো।

ঘটনার দুদিন পর সালমানের লাশ পাওয়া গেল সেই ব্রিজের কাছেই।দু'বছর পর সালমানের লাশ পাওয়া গিয়েছিল।ক্ষতবিক্ষত মুখ ছিল লাশের এবং হৃদপিন্ড ছিল না।পুলিশ অনেক ভেবেও কেসটির কোন কুল কিনারা করতে পারে নি.........।

এবং

এখন আমার মধ্যেই ভর করেছে সেই মেয়েটির আত্মা।আমি ছুরি নিয়ে কাউকে খুন করে তার হৃদপিন্ড খাওয়ার জন্য ঘুরছি এই মধ্যরাতে।

আর আমার শেষ টার্গেট হবে তুমি...!!!

আর হয়তো আমারই ক্ষতবিক্ষত হৃদপিন্ডহীন লাশ পড়ে থাকবে সেই ব্রিজের কাছে.........................।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন