সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০১৯

ফাঁইস্যা গেছিরে : মাইনকার ছিপায়, জাকির রুবেল

রোজ রাতেই আমি টের পাই আমার বড় মেয়ে রাতে পুনুর পুনুর করে ফোনে কথা বলে। আমি ওর রুমে গেলেই একেবারে চুপ হয়ে ঘুমের ভান ধরে ব্যাঙের মতোন পরে থাকে। আমি ওর মা আমিও এমন করে ওর বাপের সাথে প্রেম করতাম।তখন ফোন ছিল না, রাতে চিঠি আদান প্রদান করতাম। আব্বারে দেখলে আমিও ব্যাঙ মরার মতোন পড়ে থাকতাম।

ভাবলাম আমার কিছু একটা করতে হবে। আমার আব্বা কলেজ যাওয়া অফ করে দিছিলো তাই আমি পালিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আমি ডিজিটাল মা, আমার এসব করা চলবে না।
টেকনিক করে মেয়ে যখন ওয়াশ রুমে গেল আর ওর ফোনখানা নিয়ে দেখি রিসিভ কল ভর্তি হয়ে আছে একটি নম্বর। আর তা জান নামে সেভ করা।সুন্দরভাবে ওই নম্বর টুকে নিলাম।
ব্যাস! রান্না ঘরে গিয়ে ওই নম্বরে মেসেজ দিলাম, জান আমি লিমু, এটা আমার নিউ নম্বর। আগের নম্বরে ভুলেও কল দিবা না। ওটা মায়ের কাছে। ওই নম্বর ব্লাক লিস্টে দেও। এখন থেকে মেসেজিং করবো। মা টের পেয়েছে সব। তাই কিছুদিন কথা বলা যাবে না।
ওপাশ থেকে টুং করে ফিরতি মেসেজ, আচ্ছা জান। কী করছো সোনা?
মনে মনে ভাবি, তরে একবার হাতের নাগালে পাই সোনা পুড়ে তামা বানামু।
আমি মেসেজ দিলাম, কিছু না জান। মন খারাপ।
.
এভাবেই আমাদের মেসেজিং চলতেই রইল, চলতেই রইল। ৫ দিনের মাথায় আমি ভোর রাতেও বারান্দায় গিয়ে মেসেজিং করি। আমার বর মহাশয় ইদানীং আমার দিকে কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। তাতে কিছুই আসে যায় না। আমার মেয়ের লাইফ আগে। আমি অনেকদিন মেসেজিং করলে আমার মেয়ে ওদিক থেকে ওই ছেলেকে ভুলে যাবে।
ইদানীং আমার মেয়েকেও মন মরা দেখি। নম্বর ব্লক লিস্টে দিয়েছে কিনা।
যাক, অবশেষে আমি ভাবলাম আমি সেই ছেলের সাথে দেখা করি। ওকে গিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে আসবো। তাহলেই সাকসেস।
সাজুগুজু করছি, মন বেশ ফুরফুরা লাগছে আজ সেই বেয়াদপকে চরম ধোলাই দিবো।
আমার বর মশাই পেপার পড়া বাদ দিয়ে আমায় আড়চোখে দেখছে আর জিজ্ঞেস করছে কী, কই যাও?
ওকে বললে ও ব্যাপারটা নিয়ে হাইপার হবে। তাই বললাম, বাজারে কিছু কেনার আছে
- এই বিকেল বেলা?
তো? মধু নাই বাসায়। তুমি তো জানো সকালে খালি পেটে আমি মধু খাই। ডায়েটে আছি তো।
.
বাসা থেকে নেমে পার্কে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। অল্প বয়সী কাউকেই দেখছি না।কিন্তু আমার বরের চেয়েও বয়স্ক লোক আমার পাশে ঘুরঘুর করছে।
ফোনটা হাতে নিয়ে আবার মেসেজ দিলাম কই তুমি?
ওপাশ থেকে মেসেজ না দিয়েই কল দিলো। আমি রিসিভ করে চুপ করে আছি।কি অদ্ভুত আমার পাশে দাঁড়ানো লোকটির কানেও ফোন আর আমার দিকে শকুনের মতন তাকিয়ে আছে। আমি কেটে দিয়ে আবার কল দিলাম। আমি আরো শিহরিত হলাম। ফোন বাজছে ওই লোকের হাতেরটাই।
রেগে গিয়ে বললাম, আপনিই সেই মানুষ! ছিঃ মেয়ের বয়সী একজনের সাথে প্রেম করতে লজ্জা লাগে না। আবার তারে জান, সোনা ডাকেন!
লোকটি তীব্র দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, বেত্তমিজ মহিলা, তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকছে আর এখন বাচ্চার বয়সী ছেলেকে বিরক্ত করেন!
ঝগড়ার এক পর্যায় জানতে পারলাম, আমার মেয়ে এই লোকের ছেলের সাথে প্রেম করে। তিনি তার ছেলের ফোন নিয়ে গেছিলো। আর আমি এতদিন তার ছেলে ভেবে তার সাথেই প্রেমালাপ করেছিলাম।
.
দুজনেই এক পর্যায়ে হাসতে হাসতে মরার উপক্রম হয়েছে। দুই ব্যর্থ গোয়েন্দাই এক পর্যায় কফি শপে বসলাম। নিজের কর্মকাণ্ডের জন্য স্যরিও বললাম। তিনিও বললেন। ভাবলাম বেয়াই হিসেবে ছেলের বাবা মন্দ না। হেসে হেসে বললাম ছেলের ফোনটা বাসায় গিয়ে ছেলেকে দিয়ে দিয়েন, আমার মেয়ে খুবই মন মরা হয়ে আছে।
সে উঠে বললো, হুম আগে মেসেজিংগুলি মুছে নেই। এমন প্রেমালাপ দেখলে মামলা খেয়ে যাব হা হা হা।
.
আমি হেসে কুটিকুটি হয়ে কফির মগে চুমুক দিব তখনই দেখছি আমার দিকে রাক্ষসের মতোন তাকিয়ে আছে লিমুর বাবা। এ কি তুমি এখানে?
- বাহ্! আরজু বাহ্! না আসলে তো এমন রঙ্গ দেখতেই পেতাম না।
এই কী বলো? ভুল ভাবছো তুমি আমায়।
- ভুল! ছিঃ এত নিচ তুমি? এখন তো আমি তিতা হয়ে গেছি? আর এই বেটা মধু। তাই তো ভ্রমর মধু খেতে এসেছে। খাও মধু। এই বলে লিমুর বাবা চলে গেল।
আমি পিছন পিছন ছুটছি। বেয়াই মশাই উঠে বললো, ঘাবড়াবেন না সোনা থুক্কু আপা। আমি আছি অলওয়েজ পাশে।
রেগে বললাম, চুপ কর টাকলা ব্যাটা। মেয়ের প্রেম ভাংতে গিয়া আমার সংসারই ভাঙার উপক্রম হইছে।
ও লিমুর আব্বা... খাড়াও তুমি ভুল ভাবতেছো, দুনিয়ার সব মধুই ভেজাল, তুমিই আসল।
ও লিমুর আব্বা খাড়াও কইলাম...
★★★★★
টিট ফর ট্যাট

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন