শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০১৯

লাশের জিজ্ঞাসা? : জাকির রুবেল

দৃশ্যপট-১
কবরে একটা লাশ নামানো হচ্ছে। ধোয়ানোর পরও রক্ত বন্ধ হয়নি। সাদা কাফসন রক্তে লাল। সবাই বলাবলি করতেছে মাথার খুলিটা অাছে মগজ পাওয়া যায়নি। খুব হৃদয় বিদারক ঘটনা উপস্থিত সবাই চিৎকার করে করে কাঁদতেছে। পুকের পাশে কবর খোঁড়া হয়েছিল। পুকরের অন্য পাশে লাশের বাড়ি। জোরে জোরে বিলাপের কান্নার অাওয়াজ পুকুর চাপিয়ে এপাড়েও অাসছে। সবচেয়ে বেশি কান্না করতেছে লাশের একমাত্র মেয়েটা। যার জন্য বাবা বলেছিল জ্যামিতি বক্স ও রং পেন্সিল অানবে বলে কথা দিয়েছিল। বাবা যে অাজ এসেছিল বাড়ি কিন্তু মৃত লাশ হয়ে। মেয়েটি গড়িয়ে গড়িয়ে কান্না করছে।
হঠাৎ একটা চিৎকারে সবার কান্না থেমে গেল। সবাই হতবিহ্বল ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গল কথাটা শুনে। মাওলানা সাহেব চিৎকার  করে বলছেন "কবর থেকে লাশ উদাউ!  কবর থেকে লাশ উদাউ! হুড়মুড়িয়ে সবাই কবরের কাছে যেতে থাকলো। সবাইকে নিবৃত্ত করর হুজুর যা বললেন তাতে সবার চোখ অারো চানাবাড়া হয়ে গেল। হুজুর বলতে লাগলেন " যখন লাশকে ধরে অামি কবরে নামাচ্ছিলাম তখন লাশটি কবরে যেতে অস্বীকৃতি জানালো, অামাকে বললো "যতক্ষন পর্যন্ত অামার একটি প্রশ্নের উত্তর পাবো না ততক্ষন পর্যন্ত অামি কবরে যাবো না!"
কান্না করে জোরে জোরে কবরে যেতে চাইছিল না। কিন্তু কবরে নামানোর পর হঠাৎ দেখি লাশ উদাও।

দৃশ্যপট -২
আমি লাশ, হুমায়ন অামার নাম।
ঢাকার গুলশান অাবাসিক এলাকার একটি বিলাসবহুল ১০ তলা ভবন। চারদিরে উচু দেয়ালে ঘেরা। সুদৃশ্য গেইট। গেইটে খাকি পোশাক পরা লম্বা গোঁফওয়ালা দুজন গেইটম্যান হাতে লাঠি নিয়ে দুপাশে দাঁড়ানো। গেইটের উপরে এবং দুপাশে লতানো ফুলে অাবৃত। গেইটের খোলা অংশ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম৷ বিশাল বাগান বাড়ি। সামনে কয়েকটা বিলেতি কুকুর। অামাকে দেখে ঘেউ ঘেউ রবে ডেকে উঠলো। একজন মালি দৌড়ে এলেও কাওকে না পেয়ে চলে গেল, একজন গেইটম্যান দৌড়ে লাঠি হাতে ভেতরে ঢুকে কেও অাছে কিনা খুজতে লাগলো। অাশ্চার্য শুধু কুকুরগুলো ছাড়া কেও অামাকে দেখতে পাচ্ছেনা কেন বুঝতে পারছিনা। কয়েক ফোটা রক্ত তখনো টপ টপ করে পড়তেছিল৷ পেটের সেলাইটা যেন এখুনি খুলে যাবে এমন মনে হচ্ছিল! শালার হাসপাতালের লাশকাটা ডোমটা অামার পেট কেটে চৌচির করে সব নাড়িবুড়ি বের করলেও ভালো করে সেলাই করে দেয়নি। ধীর পায়ে সামনে এগুতো লাগলাম। পায়ে অতটুকু শক্তি নেই দুই বড় হাটু পেটে চৌচির। শক্ত করে বেধে দিয়েছিল ডোম।

অারো সামনে এগুতো লাগলাম। একটা দোলনা।দুলতেছে। অামার মেয়ে হুমায়রার বয়সি একটি মেয়ে তাতে দুলতেছে। হাতে একটা বাস্কেটবল। দোলনাটা ঠিক বাগানের মাঝখানে। দুলছে অার গুনগুনিয়ে কি যেন গাইছে। মেয়েটা অামার সারাক্ষন একটা গান নিয়ে পড়ে থাকে। একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার, সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার! হঠাৎ মেয়েটি কি মনে করে বলটু ছুড়ে ফেলে দিয়ে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে দোতালায় উঠে গেল। অামিও পিছু নিলাম অাস্তে আস্তে। অামার শরীর থেকে পড়া রক্তের ফোটাগুলো সাদা মার্বেল পাথরের টাইলসগুলোতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। দোতলায় উঠে দেখলাম একটা লিফট। মেয়েটা লিফটের সামনরে দাড়িয়ে লিফটে উঠার জন্য। লিফট খুলে গেলো। মেয়েটার সাথে অামিও লিফটে ডুকে পড়লাম। অামার রক্ত লিফটেও লাগানো অাছে। মেয়টা অামাকে কেন দেখতে পাচ্ছেনা বুঝতেছিনা। গেইটম্যান গুলোও অামাকে দেখতে পাইনব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন