সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭

নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলাম অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান

বর্তমানে সারা দুনিয়ায় নারী ও কন্যাশিশুরা কোনো না কোনোভাবে নির্যাতিত হচ্ছে! এসবের মূলে রয়েছে মানুষের প্রতি মানুষের প্রেম-প্রীতি ও সত্যিকারের ভালোবাসার অভাব। নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনকারী ও অশালীন আচরণকারী ব্যক্তি সমাজের মানুষের কাছে ঘৃণিত এবং আল্লাহর কাছেও নিকৃষ্ট। নবী করিম (স) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অশালীন ও দুশ্চরিত্র ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন।’ (তিরমিযি) তিনি আরো বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে খারাপ, যার অশ্লীলতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য লোকেরা তাকে পরিত্যাগ করে।’ (বুখারী)
পবিত্র কোরআনে নারীদের অত্যন্ত সম্মান দেখান হয়েছে এবং ইসলামে নারী ও কন্যাশিশুদের নির্যাতন করার কোনো সুযোগ নেই। নারী নির্যাতনকারীকে ঘৃণ্য অপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেসব কারণে নারীরা সমাজে নির্যাতিত হয়, সেসব থেকে বিরত থাকতে মুসলমানদেরকে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন। সাধারণত সমাজে নারীরা ব্যভিচারের কারণে নির্যাতিত হয়। ব্যভিচার হচ্ছে সমাজ ভাঙনের ও নারী নির্যাতনের মূল হাতিয়ার। ইসলামে ব্যভিচার থেকে মুক্ত থাকার জন্য নারী-পুরুষদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হইয়ো না, নিশ্চয়ই এটি অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত-৩২)
ইসলামের বিধান অনুযায়ী স্বামী স্ত্রীকে শারীরিক বা মানসিকভাবে কোনো প্রকার নির্যাতন বা প্রহার করবে না। স্ত্রীর ওপর যদি স্বামী কোনো কারণে রেগে যায়, তবু তাকে অশ্লীলভাবে গালি-গালাজ করবে না। স্ত্রীর সঙ্গে যদি ঝগড়া হয় এবং স্ত্রী স্বামীর কথা না শুনে তাহলে তাকে সদুপদেশ দিয়ে সংশোধনের সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। এতে কাজ না হলে স্ত্রীকে সাময়িক শাস্তি দেওয়ার জন্য ঘরের মধ্যে পৃথক বিছানায় রাখা যেতে পারে, কিন্তু অকারণে তাকে অমানুষিক নির্যাতন, মারধর করা বা ঘর থেকে বের করে দেওয়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘তুমি (স্ত্রীর) মুখমণ্ডলের ওপর আঘাত করো না, তাকে অশ্লীল গালি-গালাজ করো না এবং গৃহ ব্যতীত অন্য কোথাও তাকে পৃথক করে রেখো না।’ (আবু দাউদ)
নানা উপায়ে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন চলছে। কন্যাশিশুর জন্মলাভকে ভালো চোখে দেখা হচ্ছে না। আবার এসিড মেরে নারীর প্রতি প্রতিহিংসা চরিতার্থকরণ, যৌতুকের জন্য নিরীহ বধূর ওপর শ্বশুরালয়ের সবাই মিলে মানসিক নির্যাতন চালান, কখনো শারীরিক অত্যাচার এমনকি অধিকাংশ সময় হত্যার ঘটনাও ঘটে থাকে। নারী নির্যাতন বন্ধে অভিভাবক মহলের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা দরকার। সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে যে, নারী-পুরুষ মিলে যে ঘর-সংসার, বহু ঘর নিয়ে যে মুসলিম সমাজ, সেখানে প্রত্যেকেরই গুরুত্ব, মর্যাদা, অধিকার ও ভূমিকা রয়েছে।
ইসলামের বৈবাহিক রীতি অনুযায়ী দুজন আল্লাহভীরু নারী ও পুরুষ পরস্পরকে পছন্দ করে যে নীড় বাঁধে সে সুখের ঘরে একে-অপরের প্রতি কোনোক্রমেই শত্রুভাবাপন্ন ও নির্যাতনকারী হতে পারে না। ইসলামে নারী ও কন্যাশিশুদের অনেক বেশি মর্যাদা ও অধিকার দেওয়া হয়েছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলাম ধর্মের প্রকৃত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। নারী-পুরুষের সুন্দর শান্তিময় জীবন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও পুরুষদের ওপর নিয়মানুযায়ী (সুন্দর ও মধুময় আচরণ স্ত্রীদেরও প্রাপ্য) অধিকার আছে।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত:২২৮)।  ইসলামী জীবন দর্শনে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে পবিত্র কোরআনের সূরা আন-নূরে আল্লাহ তাআলা যে সুন্দরতম বিধিবিধান দিয়েছেন তা অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ। এই সূরাটি প্রত্যেক মুসলমানের পড়া উচিত। কন্যাশিশুর মাতা-পিতা যে অনেক সম্মানিত তা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। মোটকথা, ইসলামের বিধান যথাযথ কার্যকর হলে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন চিরতরে বন্ধ হবে এবং মানব জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে। এ ব্যাপারে ধর্মীয় নেতাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
lলেখক : বর্তমানে ইনস্টিটিউট অব ল্যাংগুয়েজ স্টাডিজের চেয়ারম্যান ও

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন