শুক্রবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৫


তুই একটা শয়তান! তুই ফেরাউন!
গোলাম মাওলা রনি

শয়তান এবং ফেরাউনকে নিয়ে দুনিয়াতে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। সবাই এই দুজনকে ভারি অপছন্দ করে। আবার সমানতালে ভালোও বাসে। মাঝে-মধ্যে ভয়ও করে আজরাইলের মতো না হলেও যমদূতের মতো। শয়তান ও ফেরাউন দুটো শব্দই গালি। তবে শয়তান হলো মিষ্টি গালি আর ফেরাউন হলো তিতা গালি। বিয়ের আগে প্রেমিকা যদি প্রেমিকের শরীরে একটু খোঁচা দিয়ে বলে এই যাহঃ তুমি না একটা মিছকে শয়তান সে ক্ষেত্রে প্রেমিক খুশিতে বাকবাকুম করতে থাকে। কিন্তু বিয়ের পর সেই প্রেমিকাই যদি মুখ ভেঙচিয়ে বলে চাইয়্যা দ্যাখ শয়তানটা! খাডাশের মতো করবি না (খাডাশ একটি প্রচলিত গালি। বিড়াল জাতীয় প্রাণী। কোনো কোনো এলাকায় একে বাগডাশও বলা হয়) সে ক্ষেত্রে পরিণতি যে কী হবে বলাই বাহুল্য। স্বামী যদি সাহসী হয় তবে ফেরাউনের মূর্তি ধারণের চেষ্টা করবে। অন্যথায় খাডাশের ছোট ভাই মেনি বিড়াল হয়ে মিউ মিউ করবে।

আমরা সকাল বিকাল শয়তান ও ফেরাউনকে গালি দিই বটে কিন্তু একবারও ভেবে দেখি না বেচারারা আমাদের গালি খাবার পর কী মন্তব্য করতে পারে। প্রথমেই শয়তানের বক্তব্য শোনা যাক। শয়তান মানে ইবলিস। তারপর শুনব ফেরাউনের কথা। শয়তান সাধারণত মিথ্যা বলে, প্রতারণা করে এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে মানুষের দ্বারা কুকর্ম ঘটায়। শয়তান মানুষের মৃত্যু চায় না। কারণ মানুষ মরে গেলে তার আমলনামা বন্ধ হয়ে যায় গুনাহ করতে পারে না। এতে করে শয়তানের বড্ড লোকসান হয়ে যায়। তার কাজ মানুষকে পাপী বানানো। মরে গেলে আর পাপী হওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই মানুষ যত বাঁচে ততই শয়তানের কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি পায়। এ কারণে শয়তান হলো খারাপ মানুষদের দীর্ঘায়ুর অন্যতম নেয়ামক।

অন্যদিকে ফেরাউন হলো জুলুম, অন্যায়, নাফরমানি, অকৃতজ্ঞতা, উদ্ধত আচরণ, অহংকার, মিথ্যাচার এবং ভ্রষ্টতার এক মূর্ত প্রতীক। শয়তান অদৃশ্য- নূরের তৈরি। ফেরাউন দৃশ্যমান-মাটির তৈরি। শয়তান কিয়ামত পর্যন্ত অমর। আর ফেরাউন মরণশীল- অর্থাৎ আমাদের মতোই তাকে রোগ-শোক-জরা আক্রমণ করে। তাই কাউকে যদি শয়তানের পরিবর্তে ফেরাউন বলে গালি দেওয়া হয় তবে লোকটি ভীষণ রকম রাগ করে। তবে মজার ব্যাপার হলো, শয়তান নামক গালিটি আমজনতা সবার জন্য প্রযোজ্য- অর্থাৎ ধনী, দরিদ্র, নারী, পুরুষ, আমির-ফকির, রাজা-মহারাজা সবার জন্য। অন্যদিকে ফেরাউন নামক তকমাটি কেবল ক্ষমতাবান বা ক্ষমতাবতীদের জন্যই প্রযোজ্য। ফেরাউন ও শয়তানের চরিত্র নিয়ে আমার বকবকানি না শুনে আসুন আমরা খোদ তাদের নিজস্ব জবানবন্দি থেকে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করি-

ইবলিসের আত্মকথা : হে বঙ্গ দেশের অধিবাসীরা! আমার শয়তানি শুভেচ্ছা গ্রহণ কর। তোমরা হয়তো ভাবতে পার কেন আমি তোমাদের তুমি বলে সম্বোধন করলাম! আসলে বয়স হয়েছে তো, অনেক অনেক বয়েস। হয়তো লাখ লাখ কোটি কোটি বছর কিংবা তার চেয়েও বেশি। তোমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আ.) থেকেই লাখ কোটি বছরের বড় আমি। তোমরা হয়তো অনেকেই জানো, আমি নূরের তৈরি জিন জাতির অন্তর্ভুক্ত। পরে ফেরেশতাদের গোত্রভুক্ত হই এবং এক সময় তাদের নেতা নির্বাচিত হই। তোমাদের অতি পরিচিত জিবরাইল, আজরাইল কিংবা মিকাইল- আমারই অধীনস্থ শিষ্য ছিল এক সময়। আদম (আ.)-কে নিয়ে সৃষ্ট সমস্যায় আমি আল্লাহপাকের সামনে যে অহংকার প্রদর্শন করেছিলাম তা ব্যতীত আমার জীবনে কোনো গুনাহ নেই। বরং ইবাদত কিংবা বন্দেগিতে কোনো সৃষ্টি এযাবৎকাল আমাকে অতিক্রম করতে পারেনি। আসমান, জমিন, আরশ কিংবা জান্নাতের এমন এক তিল জায়গাও খুঁজে পাবে না যেখানে এই ইবলিশ মিয়ার সেজদা পড়েনি।

তোমাদের হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে, আজ এত বছর পর আমি কেন পত্র লিখতে বসলাম আর কেনইবা দুনিয়ার এত্তসব হাজার হাজার জাতি গোষ্ঠী, বর্ণ, সম্প্রদায় বাদ দিয়ে তোমাদের বেছে নিলাম? আসল কথা হলো তোমাদের আচার-আচরণ এবং ব্যবহারে আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। আমি ইদানীং খুবই অপমানিত বোধ করছি তোমাদের কারণে, মনে হচ্ছে তোমরা আমার সব ইজ্জত পাংচার করে দিয়েছ। আমি সময় পেলেই এখন শয়তানি বাদ দিয়ে একা একা ঘুরি। বড় কোনো বট গাছ কিংবা রেনডি গাছ দেখলে দাঁড়িয়ে যাই। তারপর আমার নূরানী চোখ বিস্ফোরিত করে তোমাদের শয়তানি দেখি আর মনে মনে বলি, ইয়া আল্লাহ, এই সব কুলাঙ্গার এত্তসব হারামিপনা শিখল কোত্থেকে! বিশ্বাস কর তোমাদের ইতরামি দেখে মাঝে মাঝে আমার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ওটা তোমাদের পক্ষে সম্ভব হলেও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আল্লাহর হুকুমে আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকতেই হবে!

আচ্ছা তোমরা কি একবারও ভেবে দেখেছ যে, কীভাবে সকাল-সন্ধ্যা-রাতবিরাতে তোমরা আমার ওপর জুলুম করছ? তোমরা না জেনেই আমার ওপর মিথ্যারোপ করছ। তোমাদের সব কুকর্মের জন্যই তোমরা আমাকে দায়ী কর, অথচ অনেক কিছু আমি এখন পর্যন্ত জানি না এবং কিয়ামত পর্যন্ত জানতেও পারব না। কারণ আমার মন মস্তিষ্ক মূলত জিন জাতির মতো। আমার জ্ঞানগরিমা ফেরেশতাদের মতো। আমাকে আল্লাহ যতটুকু জ্ঞান এবং ক্ষমতা দিয়েছেন আমি ইচ্ছে করলেই সেই জ্ঞান ও ক্ষমতার আওতা অতি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন