শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮

ধর্ষকের নয় ধর্ষিতার মরনোত্তর বিচার চাই!!!!

ধর্ষন কোনও সাধারণ শারীরিক আক্রমণ নয়, এটা কোনও সাধারণ অপরাধ নয়। অনেক দাগী অপরাধের সাথে অপরাধ হিসাবে ধর্ষণের পার্থক্য হচ্ছে এই ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের উপরে গভীর ও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষত তৈরী হয়। আক্রান্ত হবার পর ধর্ষিতার মানসিক অবস্থা বোঝার চাইতে দুর্বহ কোনও কিছু হতে পারেনা। এটা নিজের শরীরকেই একটা শবদেহের মতো বয়ে বেড়ানোর মতো। শারীরিক ক্ষত সেরে উঠলেও মানসিক ক্ষত প্রায়শই সারা জীবনেও সেরে ওঠেনা। বিশেষত যেখানে সমাজ এই ধরনের অপরাধের আক্রান্ত নারীর সেরে ওঠার দায়িত্ব নেয়না, তাঁর শুশ্রূষার দায়িত্ব নেয়না, সেখানে এর পরিণতি আরো করুন, মর্মান্তিক হয়। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর একটি বড় অংশে নারী ও কন্যা শিশুদের ধর্ষণ বিষয়ে কোনও রকমের সচেতনতা তৈরী করা হয়না। একথা তো আমাদের সবারই জানা ভারতীয় উপমহাদেশে নারী ও কন্যা শিশুদের প্রতি বঞ্চনা, অপমান, শারীরিক আক্রমন সর্বগ্রাসী। তাই একদিকে যেমন নারী ও কন্যা শিশুদের শারীরিক ভাবে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশী, অন্যদিকে আক্রান্ত হলে পরিবার ও সমাজের যে সহানুভুতির উষ্ণতা দিয়ে আক্রান্ত নারীকে সেরে উঠতে সাহায্য করার কথা, তাও বিরল। তাই অপরাধ হিসাবে এর মাত্রা ভিন্ন, এটা সবচাইতে ভয়াবহ অপরাধগুলোর একটি। দুনিয়ার সকল দেশেই। আমাদের দেশে ধর্ষণ বলতে কেবল বলপূর্বক দেহসংশ্রবে বাধ্য করার ঘটনাকেই বোঝানো হয়, যদিও উন্নত বিশ্বে যেকোনো ধরনের “অনিচ্ছুক” শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করাকেই ধর্ষণ বলে ধরে নেয়া হয়। সেই অর্থে দাম্পত্য ধর্ষণের ঘটনাও প্রচুর ঘটে থাকে। বাংলাদেশে যে ধরনের ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তা সুস্পষ্ট ভাবেই শুধু নারীকে অনিচ্ছুক শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা নয়, এর সাথে যুক্ত হয় ভয়াবহ রকমের শারীরিক নির্যাতন বা ভায়োলেন্স এর ঘটনা। প্রায়শই আক্রান্ত নারীকে হত্যা করা হয়। সকল অর্থেই ধর্ষণ একটি ভয়াবহ অপরাধ, ব্যক্তি পর্যায়ে এবং সামাজিক পর্যায়ে যে ক্ষত সেরে ওঠার নয়।
কিন্তু কিছুদিন পূর্বে ঘটে যাওয়া ধর্ষনের ঘটনায়........
সবাই দেখতেছি তাসফিয়াকেই গালি দিচ্ছে কেও কিন্তু অাদনানের দিকে অাঙুলও তুলছে না। গত কয়েক দিনের পত্র পত্রিকা, অনলাইনে শুধুই শুনতে পাচ্ছি ও দেখতে পাচ্ছি একটিই কর্ম আর তা হলো তাসফিয়া ও তার পরিবারের মুন্ডুপাত। অাদনানদের বিছিয়ে রাখা ফাঁদে কত মেয়ের যে সর্বনাশ হচ্ছে তা অাপনার অামার বোনদের বেলায় ঘটার অাগ পর্যন্ত বুঝতেই পারবেনা অামাদের এই পু্রুষতান্ত্রীক সভ্যতা। কত অাবেগের মায়াজালে পড়লে এতটুকুন একটা মেয়ে ঘর ছাড়তে পারে  তা কল্পনা করুন?অার হা তাসফিয়া ঘর ছেড়েছে একটি অপরাধ করেছে অার অামরা পু্রুষরা তাকে এনে ধর্ষন করে হত্যা করে ফেলে রেখে গেছি। কোনটা বেশি অমানবিক ও নির্মম হে পুরুষজাতি! হে সভ্য অাবরনের ধোকাবাজেরা! কি উপাধি দিতাম অাপনাদের তা অামার কলমে অাসছে না।

তাসফিয়াকে নিজের বোন ভেবে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে ভাবুনতো চোখ বন্ধ করে একবার! না, জানি সেটা অাপনি ভাববেন না। কারন সেটা অাপনাদের মাথায়ই অাসবেনা। মেয়েদের দোষ দিয়ে যে কোন ঘটনাকে ব্যাখ্যা করা এ যুগে সহজ। হয়তো ভাবছেন তাসফিয়াকে কেন অামি ডিফেন্ড করছি? জ্বি না ভাই, অামি তাসফিয়াকে  ডিফেন্ড করছি না। ডিফেন্ড করছি অাপনার অামার বোনকে। একটা ভুলের জন্য কেও ধর্ষনের বা খুন হয়ে যেতে পারেনা! তাকে শুধরানোর..

তাসফিয়ারা কেন বাইরে গেছে তাই তাকে ধর্ষন করে হত্যা করে ফেলে রেখে যাবেন? ও অপরাধ করেছে বাহিরে একা বেরিয়ে কিন্তু সে তো জানতোনা সভ্যতার মুখোশ পরা মানুষরূপী হাজারো হায়েনা তাকে ছিড়ে খাওয়ার জন্য ওৎপেতে অাছে।

কোথায় ধর্ষনের ঘটানা হলেই কিছু মানুষ অাছে যারা পোশাক বিতর্ক বা অন্যান্য অানুসাঙ্গিক বিষয়কে সামনে এনে ধর্ষিতা মেয়েটিকে, খুন হয়ে যাওয়া মেয়েটিকে, তার পরিবারকে অাবারো খুন ও হত্যা করার জন্য কলম নিয়ে নেমে পড়। কিন্তু একবারও ভাবছিনা খুনিরা, ধর্ষকরা অাপনাদের মতামতে অারো উৎসাহিত হচ্ছে। তারা ভাবছে বাইরে মেয়েটি এলে তাকে ধর্ষন করে খুন করবে অার সবাই বলবে মেয়েটি কেন বের হইছে? এই সেই হাবিজাবি। অার ধর্ষকের জন্য হাসি ও করতালি।

অনেক জানোয়ার এমনও অাছে ধর্ষন নিয়ে হাসি ঠাট্টাও করতে কুন্ঠিতবোধ করেনা। এ প্রসঙ্গে প্রয়াত সাকার উক্তিটিও দিতে শুনি অনেক শুয়োরকে। কেও ঘর থেকে একা বের হলেই তাকে এনে ধর্ষন করে দিতে হবে? শুয়োরের বাচ্ছাদের যুক্তি দেখুন। অারে শুয়োর গত পরশু এই বাংলাদেশেই ঘরে একা পেয়ে এক ভাই তার অাপন বোনকে ধর্ষন করেছে তখন কি বলবি তোরা?

অন্ততপক্ষে ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে কিছু লেখ। ফাঁসির দিবতে একটা মিছিল কর। ধর্শকের মৃত্যুদন্ড দিতে সরকারকে চাপ দে। সেটাতো পারবিনা তোরা কারন তোদের একটা যুক্তি অাছে তোরা ছেলে এবং একা মেয়ে ফেলে গিলে খেতে অভ্যস্ত। অাপনি দেখবেন একটা ছেলে দশ বারোটা দৈহিক সম্পর্ক করার পরও সে ফিউর অার কোন মেয়ের ক্ষেত্রে পান থেকে চুন খসলেই সতীত্ব! প্রশ্ন।

ইসলামে কি অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক ছেলেদের জন্য হালাল অার মেয়েদের জন্য হারাম?  অনেকে অাবার ধর্ষন ও ব্যাবিচারকে গুলিয়ে ফেলেন। ব্যাবিচারে শাস্তি পাবে দুজন কিন্তু ধর্ষনে শাস্তি পাবে শুধু ধর্ষক।

তবুও দুনিয়ার পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে অামি বলি
ধর্ষকের না ধর্ষিতার মরোনত্তর বিচার চাই।!!!!

বি:দ্র: অামি তাসফিয়ার পর্দাহীনতা ও অবাধ্যতাকে সমর্থন করিনা কিন্তু তার সাথে ঘটা বিষয়টা এর চাইতেও জঘন্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন