বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৭

অসম : জাকির রুবেল

স্যার!  আমাকে প্রাইভেট পড়াবেন?
জিনিয়া জিজ্ঞেস করল তার প্রিয় শিক্ষক জনাব কামরুল হাসান স্যারকে। মাত্র ২ মাস হলো স্কুলে জয়েন করেছেন। ইতমধ্যেই সকল ছাত্রছাত্রীর প্রিয় শিক্ষকে পরিনত হয়েছেন। ইংরেজিটা মহা সুন্দর করে স্টুডেন্টদের গুলিয়ে মাথায় ডুকিয়ে দিতে পারেন অনায়াসে। সদা হাস্যোজ্বল ও মিষ্টভাষী। মাত্রই অনার্স শেষ করে প্রথম চাকুরি এই স্কুলে। মহাখালী উচ্চ বিদ্যালয়।

জিনিয়া, দশম শ্রেনীর রোল ৫। খুবই মেধাবী ভদ্র বলে সকল শিক্ষকের কাছে সুনাম আছে তার। তাই জিনিয়ার কথায় রাজি হলেন প্রাইভেট পড়াতে। বাসায় গিয়ে পড়াতে হবে। অনেক জোর করে স্যারকে রাজি করানো হল।পড়ানো শুরু করলেন নাজমূল স্যার।

স্যারের বাসা থেকে জিনিয়াদের বাসা দুই কিলোমিটারের  পথ। কিন্তু এই পথ কোন এক অজ্ঞাত কারনে তিনি প্রতিদিন হেটে হেটেই অতিক্রম করেন। পড়াশোনা চলছে জোর কদমে। প্রতিদিনই চা নাস্তা। প্রতিদিন পড়াশোনা। ইতোমধ্যে দুইমাস পার হল। ২য় সাময়িক পরীক্ষায় জিনিয়া প্রথম হয়েছে। সবার মুখে হাসি খুশি। চলছে  স্যারের জয়ধ্বনি।

স্যারের ভাব ভঙ্গিমা, কথা বার্তা, আচরন সবই জিনিয়ার খুবই ভালো লাগতে শুরু হল। কিশোরী বয়সের এই ভালোলাগা দিনে দিনে ভালোবাসার দিকে গড়াচ্ছিল। মনের গহীন কোনে বয়সের দোষ বা ভালোবাসা যাই হোক না কেন ভালোবাসা চরম আগ্রহে রুপান্তরের দিকে মোড় নিচ্ছে। ভাবনার নদী বয়ে উঝানেতে তরী বাওয়া শুরু হল জিনিয়ার। মনে মনে সে ভীষন খুশি। স্যারের পিটুনীও তার কাছে ভালো লাগে। বকুনিও মিস্টি লাগছে। স্যারকেও এই ভালোবাসার কথা জানানোর কথাও ভাবছে সে। রোমান্টিক মুভিও দেখা শুরু করেছে সে।

সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছেন নাজমুল স্যার। সাদাসিদে সরল টাইপ বলা যায়। এসব নিয়ে কখনো ভাবেন নি। ভাবার প্রশ্নই উঠেনা।

৫ মাস পেরিয়ে গেল। জিনিয়া স্যারকে তার মনের কথা খুলে বলতে পারে নি। চলছে সব কিছুই স্বাভাবিক শুধু,জিনিয়ার মনের ভিতর ঝড় চলছে। কিন্তু একদিন জিনিয়ার মনের আশায় আরেকটু সুবাতাস ছড়িয়ে দিয়ে নাজমুল স্যার বললেন '"
জিনিয়া,  তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল, কিছু মনে না করলে বা রাগ না করলে বলতে পারি?
বলেন স্যার, কোন রাগ করবো না।"
জিনিয়ার মুখটা লজ্জায় ও আনন্দে লাল হয়ে উঠলো। মাথা উপর দিকে উঠাতে পারছেনা সে। উত্তেজনায় নাকের উপর ও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।
কিন্তু সেদিন নাজমুল স্যার কিছুই বললেন না। পরে বলবেন বলে এড়িয়ে গেলেন।চলে গেলেন সেদিনকার মতো।

স্যারের এই কথাটা জিনিয়ার মনে উত্তাপ আরো বাড়িয়ে দিল। রাতদিন এসব ভাবতে ভাবতে জিনিয়ার পড়াশুনা লাটে উঠতেছে। জিনিয়া সিদ্ধান্ত নিল সামনের শুক্রবারে যে করেই হোক সে স্যারকে তার ভালোবাসার কথাটা বলবে। এদিকে নাজমুল স্যারও মনে মনে ভেবে রেখেছেন যে করেই হোক না বলা কথাটা জিনিয়াকে তিনি বলবেনই। সামনে ঈদ। বলতে যে তাকে হবেই।

স্যার কথাটা বলেন না, প্লিজ। আমি রাগ করবো না। না বললেই আমি রাগ করবো --এটা ছিল গত কিছুদিনকার জিনিয়ার নিত্য ডায়লগ। নাজমুল স্যারও কাল বলবো কাল বলবো বলে কথাটা লজ্জায় কিছুতেই বলতে পারছেন না। অবশেষে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।

কুরবানীর ঈদ। আর মাত্র দুই দিন বাকি। অাগামীকালই বাড়ীর উদ্দ্যেশে রওনা দিবেন। আজই তাকে কথাটা বলতে হবে জিনিয়াকে। কিন্তু আজ যে শুক্রবার। উহ!  টিউশন বন্ধ। মনটাই খারাপ হয়ে গেল নাজমুল স্যারের। ফোনটা বেজে উঠলো। মন খারাপ নিয়েই ফোনটা রিসিভ করলেন। জিনিয়ার মায়ের নাম্বার। তবে জিনিয়ার কন্ঠ।  স্যার আজ একটু আসতে হবে, ঈদের পরেতো অাপনি এক সপ্তাহ আসবেন না। ঈদের পরেই আমার পরীক্ষা। গনিতের একটা চ্যাপ্টার বাকি আছে। আজ ওটা শেষ করে দিবেন।
আচ্ছা। ১১টায় আসবো।

ঘড়িতে বরাবর ১১টা। জিনিয়াদের দরজার সামনে দাড়ালেন নাজমুল স্যার। কলিং বেলে চাপ দেয়ার আগে নিজেকে প্রস্তুত কররছেন। যে করেই হোক জিনিয়াকে আজ কথাটা বলতেই হবে। কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে গেল। জিনিয়া মনে হয় দরজা ধরেই দাঁড়িয়ে ছিল। ঘরে ঢুকতেই একটা কড়া  পার্টি পারফিউমের ঘ্রান নাকে প্রবেশ করলো। পাশেই বড় ঘোমটা দিয়ে চমৎকার শাড়ী পরা কে একজন দাঁড়িয়ে। নাজমুল স্যার সেদিকে বেশি খেয়াল না করেই। জিনিয়ার পড়ার রুমে প্রবেশ করলেন। কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করলেন তিনি। প্রতিদিনের আগোছালো রুমটা আজ পরিপাটি করে  সাজানো। আবারো সেই পারফিউমের ঘ্রান। লাল জামদানি পরা সেই মেয়েটা আবারো জিনিয়ার পড়ার ঘরে ডুকলেন। ভালো করে খেয়াল করতেই নাজমুল স্যারতো অবাক। এ যে জিনিয়া! স্যারের দিকে মুখ পরতেই লজ্জায় মুখ ঢাকলো সে। পড়ার সেই চেয়ারটাতে বসলো সে।

জিনিয়াকে আজ সুন্দর লাগছে। লাল একটা জামদানি পরেছে সে। মুখে হালকা মেইকাপ নেয়াতে চেহারা আরো উজ্জল লাগছে। হাতে মেহেদি ও চুড়ি পরেছে। মোট কথা সে সেজেগুজেই এসেছে সে। বাসায় কারো কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছেনা। ছোট বোনটাকেও আজ দেখা যাচ্ছে না । কি ব্যাপার জিনিয়া? আজ এত সেজেগুজে কেন?  কোথাও কি যাচ্ছো নাকি? বাসার বাকিরা কোথায়?

কোথাও যাচ্ছিনা। সাজতে মন চাইছিল তাই সাজলাম। বাসায় কেউ নেই। সবাই নানুর বাসায় গেছে। ফিরতে রাত হবে। আজ আমি বাসায় একা। স্যার আমাকে কি খারাপ লাগছে?  এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে গেল জিনিয়া। নাজমুল
স্যার নিরুত্বর। হালকা লজ্জা ও ভয় মিশ্রিত মুখে জিনিয়ার দিকে আরেকবার তাকালেন। আজ কেন জানি সত্যিই জিনিয়াকে নারী নারী মনে হচ্ছে। ওভাবে এতদিন ভালো করে তাকানোই হয়ে উঠেনি। কড়া পারফিউমের ঘ্রানটা আবারো ফ্যানের বাতাসে নাক ছুয়ে গেল।

  কোন এক বিপদের অাশংকা

1 টি মন্তব্য: