সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭

৭১ এ হাসিনা খালেদা কে কোথায় ছিলেন?

 বিশ্লেষন ১:
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ২টায় (তখন ২৬ মার্চ) চট্টগ্রামে ৮ম ইষ্ট বেঙ্গলের সহ-অধিনায়ক মেজর জিয়া পাকিস্তানের সাথে বিদ্রোহ করলেন “উই রিভোল্ট।” অতঃপর বাংলাদেশকে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করেন প্রথমে নিজ ইউনিটের সৈন্যদের মাঝে। অতঃপর কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে নিজকে বাংলাদেশের প্রভিশনাল সরকারের প্রধান হিসাবে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন এবং সকলকে স্বাধীনতার যুদ্ধে শামিল হতে আহবান জানালেন। এ সময় মেজর জিয়ার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে পালিয়ে ছিলেন। কিন্তু ২ জুলাই ১৯৭১ পেট্রোবাংলার কর্মকর্তা ড. এস আবদুল্লাহর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে মিসেস জিয়াকে আটক করে পাক বাহিনী। দুই শিশু সন্তানসহ খালেদা জিয়াকে বন্দি করে পাক বাহিনী প্রথমে রাখে পুরনো সংসদ ভবন এলাকায় (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়)। এরপর সেখান থেকে ক্যান্টনমেন্টের একটি ‘এল’ প্যাটার্নের বাড়িতে রাখা হয়। সেখানে তার সঙ্গে কোনো আত্মীয়-স্বজনের দেখা করতে দেয়া হতো না। দুই শিশুপুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে নিয়ে খালেদা জিয়া সাড়ে পাঁচ মাসের বন্দী ছিলেন ঐ বাড়িতে। অবশেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে বেগম জিয়া শিশুপুত্রদের নিয়ে ছাড়া পান।আর আপনার বর্তমান নেতা শেখ হাসিনাকে মগবাজারের একটি ভাড়া বাড়ি থেকে পাক বাহিনীর লোকজন আটক করে এপ্রিল মাসে। ধানমন্ডি স্কুলের কাছে ১৮ নম্বর সড়কের একটিএকতলা বাড়িতে নিয়ে বন্দি করে রাখে পাক বাহিনী। বাড়িটি সর্বদা পাকিস্তানি সৈন্যদের পাহারায় থাকত। বাড়িতে কোনো আসবাবপত্র ছিল না। ফ্লোরে চাদর বিছিয়ে সবাইকে থাকতে হতো। ড. ওয়াজেদ মিয়া আণবিক শক্তি কমিশনের চাকরিতে যোগ দিলেন। তাকে প্রতি মাসে বেতন দেয়া হতো। পাকিস্তানি সৈন্যরা ওয়াজেদ মিয়া ছাড়া ওই বাড়ি থেকে কাউকে বের হতে দিত না। ওই বন্দী অবস্থায় শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম হয়। হাসপাতাল থেকে শেখ হাসিনাকে আবারও ফিরিয়ে আনা হলো ধানমন্ডি ১৮ নম্বর সড়কের বন্দিশিবিরে। এরপর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে ১৭ ডিসেম্বর ‘৭১ ধানমন্ডির পাক হানাদার বাহিনীর বন্দিশিবির থেকে বেগম মুজিব, শেখ হাসিনাসহ সবাই মুক্তি পান। শেখ হাসিনার ঐ বন্দি শিবিরও ছিলো জেনারেল জামসেদের অধীনে।

বিশ্লেষন ২ ও হাসিনার মন্তব্য:

জাতির বিবেক এবং আওয়ামীলীগের বিবেকের কাছে প্রশ্ন সেই নয় মাস শেখ হাসিনা কই ছিলেন ?

নিজের বগল কি কেউ শুঁকে দেখেছেন ? নাকি অন্যের বগলের গন্ধের খবর নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন ?

পাকিস্তান সেনাবাহিনী সম্পর্কে শেখ হাসিনার মন্তব্যটা একটু দেখুন তার পর উত্তর দিন।

৩রা মে ১৯৮৪ এর এক পড়ন্ত বিকেলে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে বসে গল্প করছেন বঙ্গবন্ধু কন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ কয়েকজন। গল্পে গল্পে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গ উঠলো। প্রসঙ্গ উঠলো ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যে দিয়ে গড়ে উঠা আমাদের সেনাবাহিনীর কথা।

জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে বললেন, এটা একটা সেনা বাহিনী হলো ? এটা একটা বর্বর, নরপিশাচ, উচ্ছৃংখল, লোভী, বেয়াদপ বাহিনী। এই বাহিনীর আনুগত্য নেই , শৃংখলা নেই , মানবিকতা নেই, নেই দেশ প্রেম। এটা একটা দেশদ্রোহী অসভ্য হায়েনার বাহিনী। তোমরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কথা বল। সারা বিশ্বে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মতো এতো ভদ্র, নম্র, সভ্য, বিনয়ী এ‌বং আনুগত্যশীল বাহিনী খঁজে পাওয়া যাবেনা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মানবিকতা বোধের কোন তুলনাই চলেনা। কি অসম্ভব সভ্য আর নম্র তারা।

পচিশে মার্চ রাতে তারা ( পাকিস্তান আর্মি) এলো, এসে আব্বাকে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব) সেলুট করলো, মাকেও সেলুট করলো, আমাকেও সেলুট করলো। সেলুট করে তারা বলল, স্যার আমরা এসেছি শুধু আপনাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। অন্য কোন কিছুর জন্য নয়। আপনারা যখন খুশি যেখানে খুশি যেতে পারবেন। যে কেউ আপনার এখানে আসতে পারবে। আমরা শুধু আপনাদেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। আপনারা বাইরে গেলে আপনাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা আপনাদের সাথে যাবো। কেউ আপনাদের এখানে এলে আমারা তাকে ভালভাবে তল্লাশি করে তার পর তাকে এখানে ঢুকতে দিব। এসবই করা হবে আপনাদের নিরাপত্তার জন্য। সত্যিই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যা করেছে তা সম্পুর্ন আমাদের নিরাপত্তার জন্য করেছে।

২৬ শে মার্চ দুপুরে আব্বাকে (শেখ মুজিব) যখন পাকিস্তানী বাহিনী নিয়ে যায়, তখন জেঃ টিক্কা খান নিজে এসে আব্বাকে ও মাকে সেলুট দিয়ে আদবের সাথে দাড়িয়ে বলে, স্যার প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আলোচনার জন্য নিয়ে যেতে বলেছেন। আমি আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি। আপনাকে নেওয়ার জন্য বিশেষ বিমান তৈরি(স্পেশাল ফ্লাইট রেডি) আপনি তৈরি হয়ে নেন এবং আপনি ইচ্ছা করলে ম্যাডাম (বেগম মুজিব) সহ যে কাউকে সঙ্গে নিতে পারেন। আব্বা-মা’র সাথে আলোচনা করে একাই গেলেন। পাকিস্তান আর্মি যতদিন ডিউটি করেছে এসেই প্রথমে সেলুট দিয়েছে।

শুধু তাই নয়, আমার দাদীর সামান্য জ্বর হলে পাকিস্তানীরা হেলিকপ্টার করে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকা পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছে। জয় তখন আমার পেটে, আমাকে প্রতি সাপ্তাহে সি এম এইচ নিয়ে ওরা চেকআপ করাতো। জয় হওয়ার একমাস আগে আমাকে সি এম এইচ-এ ভর্তি করিয়েছে। ৭১ সালে জয় জন্ম হওয়ার পর পাকিস্তান আর্মিরা খুশিতে মিষ্টি বাটোয়ার করেছে এবং জয় হওযার সমস্ত খরচ পাকিস্তান আর্মিরাই বহন করেছে । আমরা যেখানে খুশি যেতে পারতাম। পাকিস্তানীরা দুটি জীপে করে আমাদের সাথে যেতো নিরাপত্তার জন্য আমাদের পাহারা দিতো।
আর বাংলাদেশের আর্মিরা! জানোয়ারের দল, অমানুষের দল এই অমানুষ জানোয়ারেরা আমার বাবা-মা, ভাই সবাইকে মেরেছে- এদের যেন ধ্বংশ হয়।

সুত্র : আমার ফাঁসি চাই (৫৩ ও ৫৪ পৃষ্টা)
লেখক : মতিউর রহমান রেন্টু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন