রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৭

টুনটুনি ও মিনুর গল্প


গল্পে গল্পে শিশুদের প্রকৃতি পরিচিতি :  টুনটুনির হাসি কান্না
_________________________________________
টুনটুনি। বয়স ৬ বছর। শিশু নিকেতনে ক্লাশ টুর ছাত্রী। খুব মিষ্ট একটা মেয়ে। গড়ন ছোট খাটো দেখে মামা তার নাম দিয়েছিল টুনটুনি। অবশ্য এ নামে এখন কেও তাকে ডাকে না। গ্রাম থেকে দাদু এবং আমেরিকা থেকে ছোট চাচ্ছু এলে তাকে টুনটুনি নামে ডাকে। মা তাকে মিনু নামে ডাকে। সে নিজেকে নিজে  বার বার জিজ্ঞেস করেও টুনটুনি নামের ব্যাখ্যা পায়নি। ক্লাশে তার বন্ধু রুনাকে জিজ্ঞেস করেছিল একবার। রুনা তাকে বলেছিল এটা একটা পাখির নাম। যাকে গ্রামে প্রায় দেখা যায়। খুব সুন্দর একটা পাখি। রুনাদের বাড়ী গ্রামে। তাই সে ফুল পাখি সম্পর্কে ভালোই জানে। সে থেকে মিনুর মনে টুনটুনিকে জানার ও সরাসরি দেখার আগ্রহ ক্রমেক্রমে বাড়তেই আছে। কিন্তু গ্রামে যাওয়ার সুযোগ মিলছেনা।

গ্রীষ্মকালীন অবকাশ। মামা আমেরিকা থেকে এসেছেন। দাদুও গ্রামে অাছেন। দাদু অনেক জোর করে মিনুকে গ্রামে নিয়ে গেলেন। যদিও মায়ের হাজারো বারন। এটা করা যাবেনা ওটা করারা যাবেনা। দাদুর বাড়ড়িতে মিনুর যাওয়ার তেমন আগ্রহ না থাকলেও টুনটুনি ইস্যুতে সে প্রায় পাগলপ্রায়। যে করেই হোক সে দেখবেই তার নামের সেই ছোট্ট প্রিয় পাখিটাকে। শুনবে তার টুনটুন গানের সুর। দেখবে তার বাসা। আরো কত কি?
সেদিন আর পাখির বাসা দেখা হলনা। দাদুর মধুর গল্পে গল্পে কেটে গেল সেই রাত।

খুব সকালে টুনটুনি পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে গেল মিনুর।মিনু জানেনা সে পাখিটার নাম কি? মোরগের সকাল বেলার কুক্কুরুকু কুক্কুরুকু ডাকটিও সে এই প্রথমবার শুনেছে। সে দাদুকে জিজ্ঞেস করলো পাখিটার নাম কি?  টুনটুনি নাম শুনে সেতো মহাখুশি। দাদদুকে জোর করে বাহিরে নিয়ে গেল পাকিটাকে দেখবে বলে। কিন্তু পাখিটা তাকে ফাঁকি দিয়ে ফুরুত করে চলে গেল। সকাল সকাল মিনুর মনটা খারাপ হয়ে গেল। তার প্রায় কান্না চলে আসছে। দাদু ও ছোট চাচা অনেক কষ্ট করে তাকে বুঝিয়ে বলল যে তাকে অবশ্যই তাকে টুনটুনি দেখাবে। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

ছোট চাচ্ছু  বলছেন এবং দেখাচ্ছেন। মিনু মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে আছে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছে এবং দেখছে। ঘরের পেছনে ছোট্ট একটা ডুমুর গাছ।জীবনে এই প্রথমবার সে ডুমুর গাছ দেখছে। খুব সুন্দর করে একটা বড় পাতা ভাঁজ করে বাসা বানিয়েছে পাখিটি। বাড়ীতে তার বয়সী সব শিশুদের ডেকেছেন ছোট চাচ্ছু। সবাই একটু দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে টুনটুনির বাসা। হঠাৎই একটা টুনটুনি পাখি ফুরুত করে ডুকে গেল বাসাটিতে। ভেতরে হালকা খড়কুটো। মিনুর আশা পূর্ন হল। এত সুন্দর একটা পাখি। যার নাম টুনটুনি। মিনুর নামও টুনটুনি। ছোট চাচ্ছু পাখিটির বর্ননা দিতে দিতে টুনটুনিটি   বাসা ছেড়ে আবার ও বেরিয়ে গেল। বাসার কাছে গিয়ে তারা দেকতে পেল বাসায় দুটো একেবারে ছোট ছোট দুটো ডিম আছে। টুনটুনি ওরফে মিনুর মনটা আজ ভীষন খুশি। তার টুনটুনি নামটিই সুন্দর। আজ থেকে মিনুর নাম মিনু নয় টুনটুনি নামেই সে সবার নিকট পরিচিত হবে। টুনটুনিকে যে  সে  খুব ভালোবেসে ফেলেছে। তা চোখো পাখিটি  ও পাখির বাসাটি ভাসছে। পাখিটি সম্ম্পর্কে সে জেনেছে যে

"'''টুনটুনি আকারে ছোট পাখি। এদের যত চালাক পাখি ভাবা হয় আসলে তা নয়। এরা যেমন চালাক তেমন বোকা। টুনটুনি বিপদ দেখলেই চেঁচামেচি করে। ফলে সহজেই শত্রুর কবলে পড়ে।

টুনটুনির ইংরেজী নাম Common tailorbird অর্থাৎ দর্জি পাখি। এরা গাছের পাতা ঠোঁট দিয়ে সেলাই করে বাসা বানায়।বৈজ্ঞানিক নাম--Orthotommus sutoriu

দেহের গঠন :

টুনটুনির বুক ও পেট সাদাটে। অনেকটা মাটির ঢিলার মত। ডানার উপরিভাগ জলপাই-লালচে। মাথা জলপাই-লালচে। চোখের মনি পাকা মরিচের মত।বুক সাদা পালকে ঢাকা। লেজ খাড়া, তাতে কালচে দাগ আছে। ঋতুভেদে পিঠ ও ডানার রঙ কিছুটা বদলায়।

টুনটুনির খাদ্য:

টুনটুনি বিভিন্ন রকম খাবার খায়। এরা অনেক অপকারী পোকামাকড়,কীটপতঙ্গ খাদ্য হিসেবে খায়। তাছাড়াও ছোট কেঁচ, মৌমাছি, ফুলের মধু, রেশম মথ ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে। ধান-পাট-গম পাতার পোকা, শুয়োপোকা ও তার ডিম, আম পাতার বিছা পোকা তাদের খাদ্য তালিকায় আছে।

টুনটুনির বাসা:

টুনটুনির বাসা খুব বেশি উচুতে হয়না। সাধারনত এরা ৬-১০ সেমি উচ্চতায় বাসা বাধে। ছোট গুল্ম জাতীয় গাছ অথবা ঝোপঝাড় এদের প্রধান পছন্দ।শিম, লাউ, কাঠ বাদাম, সূর্যমূখী, ডুমুর, লেবু এগুলো গাছে এরা বেশি বাসা বাধে।পুরুষ ও স্ত্রী পাখি মিলে বাসা তৈরী করে।""""

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন