বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭

ঈ এবং ই বিতর্ক। অযথা সময় নষ্ট। অনেকটা "কাজ নাই তো খৈ ভাজ এর মত।

শতকরা ৯৫ ভাগ বাঙালিকে যদি ৫ বাংলা শব্দ দিয়ে বলা হয় যে এগুলোর মধ্যে তৎসম, অর্ধতৎসম, তদ্ভব, দেশি এবং বিদেশী কোনটা তা আলাদা করুন, তবে আমার মনে হয় এদের মধ্যে কেউ তা আলাদা করতে পারবেন না। এমনকি বাংলার ছাত্র ছাত্রীরাও সকলে তা পারবে বলে মনে হয় না। যে কারণে চিরকাল সাধারণ ছাত্র ছাত্রী হ্রস্ব ও দীর্ঘ স্বরের বানান নিয়ে বিপদে থাকে। আইন যদি সবার জন্য সমান হয় তবে তৎসম শব্দের জন্য আলাদা নিয়ম কেন? আর বাংলা একাডেমির যদি বানানের নিয়ম শৃঙ্খলা আনয়নের আইনগত ভিত্তি থাকে তবে তারা এটা করে না কেন যে সকল দীর্ঘ স্বর বাদ এবং সেই সাথে জ, ন, র, স সবগুলোই একটি । তাতে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা বাংলা বানানের ঝক্কি থেকে কিছুটা মুক্তি পায়। বাংলার তাবৎ বিশেষজ্ঞরাই যেখানে এখন পর্যন্ত বিশেষ নিয়মে সাধিত সন্ধির মত বিশেষ বিষয় টিকিয়ে রেখেছেন সেখানে আরও কিছু বিশেষ নিয়ম থাকলে সমস্যা কোথায়? মানুষের জন্য করা কোন আইন বা নিয়মই শতকরা শত ভাগ সম্ভবত পালন সম্ভব নয় কারণ মানুষতো শতভাগ নিখুঁত হতে পারে না। যে কারণে দরকার হয় বিশেষ নিয়মের। তারপরও ভাষা বিশেষজ্ঞরা বৈজ্ঞানিক ভাবে বানানের শৃঙ্খলা আনয়নে কাজ করে যাবেন যাতে ঝামেলা কমে, সে আশা রাখি।

আজাদ পত্রিকা ৫০ বছর চেষ্টা করেছে ইকবালকে একবাল, ইসলামকে এসলাম লিখতে। টেকেনি। ভাষা বেশি ইডিওসিনক্রেসি বা মতাচ্ছন্নতা পছন্দ করে না।

বানান তো বানান, ভাষা নিজেই কালে কালে বদলায়। সেসব পরিবর্তন মূলত ভাষাভাষী জনগণ থেকে আসে। কিন্তু যখন প্রতিষ্ঠান ওপর থেকে কোনো অপ্রচলিত বানান প্রবর্তন করতে চায়, তখন এসব অপ্রচলিত বানান প্রবর্তনের তাগিদ কোথা থেকে এল, আবার সেই অর্বাচীন বানান প্রাচীনটির চেয়ে কিসের দিক থেকে ‘সংগততর’-এমন সব প্রশ্ন না উঠে পারে না। কথাগুলো অবশ্যই বাংলা একাডেমির অনুধাবন করা উচিৎ।

আমদের যে কোন বিতর্কে একটা বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে সেটা হল যুক্তি । এখন সবকিছুতেই যদি আমরা গণতান্ত্রিক ধারায় ভোটাভুটি করি তবে সেটা হবে শিক্ষার অবমাননা , শুধু বাংলা ভাষা নয় বিশ্বের প্রায় সকল ভাষাই দীর্ঘ গবেষণা ও কাল পরিক্রমার ধারাতে একটা পরিশীলিত রুপ পরিগ্রহ করেছে । লিখার ক্ষেত্রে প্রমিত শুদ্ধ ভাষা নিরভর করে বানানের উপর আর তা উচ্চারিত হয় প্রমিত উচ্চারণ , যার জন্য একই অর্থের অনেক শব্দ থাকতে পারে বা আছে । সাধু ভাষা এক বাঞ্জনা পেয়ে থাকে লিখতে যা লেখককে স্বাতন্ত্র্য দেয় আর তার গভীরতাকে নান্দনিক মননশীলতা দান করে কিন্তু কথ্য ভাষা চলতি কথায় ব্যবহার হয় ।

এখন যদি প্রশ্ন ওঠে কি দরকার সাধু ভাষার ? কথ্য ভাষাতেইতো সব কাজ চলে ,মনের ভাব প্রকাশ পরিপূর্ণ ভাবেই করা যায় তাই সাধু ভাষা উঠিয়ে দাও - তার পিছনে যদি গণতান্ত্রিক যুক্তি গ্রাহ্য করা হয় তবে বৃহৎ স্বল্প শিক্ষিত সমাজ সাধু ভাষাকে উঠিয়ে দেবার পক্ষেই রায় দেবে নিঃসন্দেহে । কিন্তু সাহিত্যে যে বিপর্যয় নেমে আসবে তা বোধ করি প্রজ্ঞাবান কাউকে বোঝানোর দরকার হবে না।আজ যে একটা অযৌক্তিক বিষয় অবতারণা করে হ্রস্ব ই , দীর্ঘ ঈ প্রসঙ্গে মাঠ গরম করা হচ্ছে তার আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা? কবি গুরুর হিংটিংছট এর মত রাজাকে বোঝাতে যবন পণ্ডিতের গুরু মারা চেলার আগমন রোধ করা যাবে না । এখন যখন প্রসঙ্গ উঠেই পড়েছে তখন যুক্তির প্রশ্ন উঠবে এবং তা যুক্তির মাধ্যমেই ফয়সলা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে । এক্ষেত্রে আমার যুক্তি হচ্ছে - যেহেতু 'ই' এবং ' ঈ ' দুটি অক্ষরই অভিধানে আছে আর তা সংজ্ঞাসহ বিদ্যমান তাই এ ক্ষেত্রে প্রচলিত শব্দটা যখন বহুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং তা কোন সমস্যার সৃষ্টি করছে না তাই 'ঈ' থাকলে দোষ কি - বৃথাই বিতর্কের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না । আবেগপ্রবণ জাতি আমরা বাঙ্গালী অসংখ্য সমস্যা জর্জরিত নতুন সমস্যা সৃষ্টির কন মানেই হয়না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন